চলতি ফ্যাশনের নাম ‘অফিস সাইরেন’।
সংগৃহীত
পোশাক শুধু ফ্যাশন নয় বরং নিজের আত্মবিশ্বাসের প্রতীকও হয়। আর অফিসে আত্মবিশ্বাসের সাথে নিজেকে প্রকাশ করাটাও গুরুত্বপূর্ণ।
সাম্প্রতিক সময়ে এমনই একটি বিশেষ ফ্যাশন ধারা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে আলোচনায় এসেছে। আর তা হলো ‘অফিস সাইরেন’।
এর মূল বৈশিষ্ট্য হল পেশাদার পোশাকে নারীর শক্তি ও আকর্ষণীয় উপস্থিতি তুলে ধরা। এই ধারা এসেছে অতীতের অফিস সংস্কৃতির প্রভাব থেকে। তবে এতে যুক্ত হয়েছে আধুনিক রূপ।
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সেলিব্রিটি ফ্যাশন স্টাইলিস্ট জেনি লি রিয়েল সিম্পল ডটকম-এ প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলেন, “অফিস সাইরেন’ মানে হল মিনিমালিস্টিক বা সরল কাটের পোশাক, যেখানে আবার থাকে এক ধরনের আভিজাত্য ও আবেদন। সিল্ক পোশাক, পেন্সিল প্যান্ট, ফিটিং ব্লেজার— এসব পোশাকই এখন এই ধারার প্রতীক।”
অতীত থেকে বর্তমান
দুই দশক আগে জনপ্রিয় কিছু চলচ্চিত্রে কর্মজীবী নারীর আকর্ষণীয় তবে পেশাদার উপস্থিতি দর্শকদের নজর কাড়ে। সেই প্রভাব এখনকার ফ্যাশনে নতুনভাবে জায়গা করে নিয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ‘সাউদার্ন মেথডিস্ট ইউনিভার্সিটি’র ফ্যাশন মিডিয়া অধ্যাপক জেনি বি. ডেভিস বলেন, “নারী পেশাজীবীর উপস্থিতিকে কেন্দ্র করে এক ধরনের ফ্যাশন সবসময় ছিল। তবে এখনকার সময়ে এর জনপ্রিয়তা বেড়েছে কারণ কর্মক্ষেত্রে আত্মবিশ্বাসী নারীর সংখ্যা বাড়ছে।”
রংয়ের ব্যবহার
‘অফিস সাইরেন’ ধারায় গাঢ় ও শীতল রংয়ের ব্যবহার দেখা যায়। সামুদ্রিক নীল, ধূসর, কালো, বারগান্ডি কিংবা সাদা রং এখানে বেশি মানানসই।
তবে একই সাথে ছোটখাটো অনুসঙ্গে উজ্জ্বল রং ব্যবহার করলে ‘লুক’ আরও প্রাণবন্ত হয়ে ওঠে। যেমন- একটি লাল ব্যাগ, রঙিন স্কার্ফ বা ভিন্নধর্মী জুতা- পুরো সাজে বৈচিত্র্য আনতে পারে।
পোশাকের ধরন
‘অফিস সাইরেন’ ফ্যাশনে সিল্কের টপ, শার্ট, কুর্তি, ফতুয়া, ফিটিং পেন্সিল প্যান্ট ও হালকা হিল জুতো বেশ প্রচলিত।
জেনি লি বলেন, “সবচেয়ে আকর্ষণীয় সমন্বয় হল একটি সিল্ক পোশাক, যার মধ্যে হালকা লেইসের কাজ আছে। সঙ্গে একটি পেন্সিল কাটের প্যান্ট।”
এছাড়া এখনকার সময়ে আধুনিক কর্মজীবী নারীরা ক্রপ টপও ব্যবহার করছেন। তবে সেটি অফিস উপযোগী করে ডিজাইন করা হয়।
যুক্তরাষ্ট্রের ফ্যাশন বিশেষজ্ঞদের মতে, এটি পুরানো ধারা হলেও নতুন রূপে এখন আবার ফিরে এসেছে।
আনুষঙ্গিক ব্যবহার
‘অফিস সাইরেন’ ধারার একটি বড় দিক হল আনুষঙ্গিক জিনিসের ব্যবহার। যেমন—
চশমা: কালো ফ্রেমের আড়ম্বরহীন চশমা সাজে আনতে পারে গাম্ভীর্য।
গয়না: রূপার গয়না এই ধারায় বেশি মানানসই। মোটা নেকলেস, হাতের বালা বা মুক্তার দুল সাজকে সম্পূর্ণ করে।
ব্যাগ ও জুতা: ছোট ও গুছানো ব্যাগ, কিটেন হিল বা ফ্ল্যাট জুতাতে থাকে আরাম ও স্টাইলের সমন্বয়।
চুল ও মেইকআপ
এই ধারার মূল শক্তি হল- আত্মবিশ্বাসী কিন্তু স্বাভাবিক সৌন্দর্য। তাই চুলে অগোছালো অথচ স্টাইলিশ ছোঁয়া রাখা হয়। যেমন— হালকা এলোমেলো খোঁপা, খোলা চুলে পিন, কিংবা স্বাভাবিকভাবে ছেড়ে দেওয়া।
মেইকআপে জোর দেওয়া হয় ম্যাট ফিনিশ ত্বকে, সামান্য কনট্যুরে এবং গাঢ় লিপস্টিকে। লাল, গোলাপি লিপস্টিক, বিশেষ করে ক্লাসিক শেডগুলো, এই ধারার পরিচায়ক হয়ে উঠেছে।
করপোরেট অফিস বা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কর্মরত নারীদের পোশাকে এখন ব্লেজার, শার্ট, ফিটিং প্যান্টের ব্যবহার বেড়েছে।
তবে আবহাওয়া ও সংস্কৃতির কারণে তারা অনেক সময় শাড়ি বা সালোয়ার-কামিজের সঙ্গেও এই ধারার ছোঁয়া মিশিয়ে দেন।
জেনি বি. ডেভিস বলেন, “অফিস সাইরেন ধারা মূলত নারীর আত্মবিশ্বাসী উপস্থিতিকে শক্তভাবে প্রতিষ্ঠা করছে। এটি কেবল ফ্যাশন নয়, এক ধরনের সামাজিক বার্তাও।”
সংগৃহীত