পূর্ণিমা রাতের পরদিন অবসাদ কাজ করার বিষয়টা শুধু মনে নয়, বাস্তবেও সত্যি।
সংগৃহীত
পূর্ণিমার চাঁদ নিয়ে রোমান্টিকতার শেষ নেই। যুগে যুগে কবিরা নানান কবিতা লিখেছেন, তৈরি হয়েছে গান। তবে পূর্ণিমা রাতের পরদিন যদি শারীরিকভাবে অসুস্থ বোধ হয় তাহলে সেটা আসলেই সত্যি।
বিশেষজ্ঞরা এর নাম দিয়েছেন ‘ফুল মুন হ্যাংওভার’।
যে কারণে পূর্ণিমার পরদিন অদ্ভূত অনুভতি কাজ করে
জ্যোতিষশাস্ত্র অনুসারে পূর্ণচন্দ্র মানে হল, ‘মুক্তি পাওয়া’। অর্থাৎ- চন্দ্রচক্রের এই পর্যায়ে জীবনে যা কাজ করছে না সেগুলোকে ছেড়ে দেওয়া।
এই ‘ছেড়ে দেওয়া’ বা ‘মুক্তি পাওয়া’র বিষয়টা দেহেও অনুভূত হয়। যারা বেশি সংবেদনশীল তাদের ওপর এই প্রভাব বেশি পড়ে।
এই তথ্য জানিয়ে ওয়েলঅ্যান্ডগুড ডটকম’য়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে নাসা’র প্রাক্তন গবেষক ও জ্যোতিষী জিল ব্রাউন বলেন, “কেনই বা এমন হবে না। চাঁদের প্রভাবে নদী সমুদ্রে জোয়ার ভাটা হয়, পানিতে ঢেউ বাড়ে কমে। আর আমাদের দেহের অধিকাংশই পানি। এভাবে ভাবলে বুঝতে সুবিধা হবে। আর জ্যোতিষশ্রাস্ত্র অনুসারে পূর্ণিমা মানে ‘চূড়ান্ত পরিণতি’।”
“তাই এর প্রভাব শুধু মনে নয়, দেহ টেনে নেওয়ার অনুভূতিটাও আসল”- মন্তব্য করেন তিনি।
একই প্রতিবেদনে মার্কিন জ্যোতিষী ও নান্দনিকতা-বিশেষজ্ঞ মিকায়লা ম্যাকলিন মন্তব্য করেন, “পূর্ণচন্দ্র ঘুমের ওপরেও প্রভাব ফেলে। কখনও কি খেয়াল করেছেন, পূর্ণিমার রাতে ঘুম কম হয়, আর পরদিন অবসাদ কাজ করে?”
ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, “মেলাটনিন হরমোনের মাত্রা কমলে ঘুমের ব্যাঘাত হয়। আর কর্টিসল-এর মাত্রা বাড়ে, যা হল দেহে চাপ তৈরির প্রধান হরমোন।”
এই প্রভাব যে কোনো নির্ঘুম রাতের পরে কাজ করে। আর পূর্ণিমার রাতের পরদিন প্রভাব আরও বৃদ্ধি পায়।
“এই সময় অন্যান্য বিষয় নিয়ে দুশ্চিন্তা কাজ করলে সব কিছুতেই বাজে প্র্রভাব পড়ে”- যোগ করেন ম্যাকলিন।
কর্টিসল হরমোনের মাত্রা অতিরিক্ত হলে দেহে প্রদাহ সৃষ্টি হয়। আর ‘হ্যাংওভার’ তৈরিতে মুখ্য ভূমিকা রাখে।
পূর্ণচন্দ্রের প্রভাব রাশি অনুযায়ী সামলানোর পন্থা
পূর্ণিমার প্রভাব থেকে নিস্তার পেতে এই বিশেষজ্ঞরা রাশি অনুসারে সমাধানের পন্থা দিয়েছেন।
মেষরাশি
“এই রাশির জাতক জাতিকাদের দারুণ উদ্যম কাজ করে। এর উল্টো প্রভাব হল অস্থিরতা বা ‘রেস্টলেস’ থাকা”- বলেন ব্রাউন।
তাই এই সময় অতিরিক্ত ব্যায়াম করে শক্তি কমানোর পরামর্শ দেন তিনি।
অন্যদিকে ম্যাকলিন বলেন, “নিজেকে শীতল বা আরামবোধ করাতে আর স্নায়ু শিথিল করতে চোখের ঠাণ্ডা মাস্ক বা মুখে আরামদায় মাস্ক ব্যবহারে ভালো ফল দেয়।
বৃষি রাশি
এই রাশির জাতক জাতিকাদের অতিরিক্ত চিন্তা বা ‘ওভারথিংকিং’ করাটা বৈশিষ্ট্য।
এজন্য ব্রাউন, অতি দ্রুত এই চিন্তার করা বিষয়টা বন্ধ করার পরামর্শ দেন।
তিনি বলেন, “এরা নিরাপত্তা, স্থায়িত্ব, নিজস্বতা নিয়ে সন্দেহে পড়ে যায়। তাই রাতের বেলা যত চিন্তাই আসুক, বিশ্বাস করা যাবে না।”
জার্নাল লেখা, নিজের চিন্তাভাবনা রেকর্ড করা কিংবা বন্ধুদের সঙ্গে কথা বলা হতে পারে সমাধান।
ম্যাকলিন বলেন, “নিজের কণ্ঠের দিকে নজর দিন। অনেক সময় ‘মান্ত্রা’ নির্ভর ধ্যান বেশ কাজ দেয়। এগুলো না করতে পারলে গান গাওয়া বা গুনগুন করলেও কাজ দেবে।”
মিথুন রাশি
পূর্ণিমাতে এদের মনোযোগের অভাব আর উদ্বিগ্ন হওয়া থেকে ‘হ্যাংওভার’ হয়।
“কারণ এই রাশির জাতক জাতিকারা সাধারণত সামাজিক ও বহির্মুখি বা ‘এক্সট্রোভার্ট’ হয়। যা কিনা তাদের ফাঁদে ফেলে”- বলেন ব্রাউন।
তাই সচেতন হয়ে নিজের যত্ন নেওয়াটা প্রয়োজন। নিঃশ্বাসের ব্যায়াম কার্যকর। আর নিজের মাথার ভেতর হারিয়ে না গিয়ে, বাস্তবের শারীরের প্রতি মনোযোগ দেওয়াতে কাজের কাজ হবে।
কর্কট রাশি
তাদের চিহ্নই হল ‘পানি’, যে কারণে চাঁদের প্রভাব এদের মধ্যে বেশি পড়ে।
“এই সময় প্রার্থণার মাধ্যমে নিজেকে মুক্তি দেওয়াটা বেশি কার্যকর হবে। পাশাপাশি মুখ ভেজানো বা শীতল পানির পরশ নেওয়া যেতে পারে। সবচেয়ে ভালো হবে কান্না করতে পারলে”- বলেন ম্যাকলিন।
এছাড়া অন্তর্বাস খুলে রেখে পরদিন আরামে থাকার পরামর্শ দেন তিনি।
সিংহ রাশি
এরা দৈনন্দিন জীবনে সৃজনশীল হয়। তবে এই কারণে পূর্ণিমা রাতে তারা উত্তেজিত থাকে।
তাই ব্রাউন পরামর্শ দেন, “এই প্রতিভাকে কাজে লাগিয়ে পূর্ণিমার রাতে সৃষ্টিশীল কিছু করতে পারেন। হতে পারে সেটা ছবি আঁকা বা কোনো হস্তশিল্প তৈরি করা।”
আর ম্যাকলিন ‘ইয়োগা’ করার পরমর্শ দেন। যা কিনা হৃদয় উন্মুক্ত করার মাধ্যমে মন শীতল করা সম্ভব হয়।”
কন্যা রাশি
ছাড় দেওয়া, যেতে দেওয়া, ভুলে যাওয়ার মতো বিষয়গুলো কষ্টকর, আর কন্যাদের জন্য এটা আরও বেশি। তাই নিজের প্রতি কৃপা দেখানোর সময় এটাই।
ব্রাউন বলেন, “যা আপনাকে পূর্ণ করেছে সেগুলোর প্রতি জোর দিন। পুষ্টিকর খাবারের দিকে দৃষ্টি রাখুন। আর যা হবে না সেটা ছাড় দিয়ে নিজেকে ভারমুক্ত রাখার চেষ্টা করতে হবে।”
তুলা রাশি
শুক্রগ্রহ হল সম্পর্কের চিহ্ন। আর এই গ্রহের প্রভাবে পরিচালিত হয় তুলারা।
তাই ব্রাউন বলেন, “যে কারণে পূর্ণিমার সময় এদের সামঞ্জস্য বজায় রাখতে বেগ পেতে হয়। তাই এই সময় ‘না’ বলার চেষ্টা করুন। আর যেহেতু এদের বৃক্ক হয় দুর্বল তাই পর্যাপ্ত পানি পান করতে হবে।”
বৃশ্চিক রাশি
এদের মধ্যে নাটকীয়তা বেশি। প্রয়োজনের সময় গভীরভাবে পরিবর্তিত হতে পারে তারা। তাই পূর্ণিমার সময় নজর দিতে হবে- যা হচ্ছে তা কী চাঁদের প্রভাব নাকি সত্যি ঘটছে।
এই মন্তব্য করে ব্রাউন বলেন, “এই সময়ে কোনো সিদ্ধান্ত নিলে সেটা নিয়ে বসে থাকুন, তবে বাস্তবে করতে যাওয়ার দরকার নেই। বরং কয়েকদিন দেখুন সিদ্ধান্তটা আপনার ওপর কী প্রভাব ফেলছে। পরে সেভাবে কাজ করুন।”
ম্যাকলিন বলেন, “অনেক সময় পূর্ণিমার প্রভাবে এদের মলাশয় অতিরিক্ত কার্যকর হয়ে যায়। তাই চিকিৎসকের পরামর্শে ওষুধ সেবন করতে ভোলা যাবে না।
ধনু রাশি
ভ্রমণ প্রিয়তা এই রাশির ধর্ম। তাই পূর্ণিমার সময় বেড়ানোর বড় পরিকল্পনা না থাকলে একদিনের একটা ভ্রমণ পদক্ষেপ নেওয়া যেতেই পারে।
ব্রাউন বলেন, “হতে পারে সেটা নিজের শহরের বিভিন্ন অদেখা জায়গা অনুসন্ধান করা। আর ‘হ্যাংওভার’ কাটাতে ইয়োগা উপকারী হতে পারে।”
মকর রাশি
কোনো কিছু করা নিয়ে অতি উত্তেজনায় থাকা এদের স্বভাব।
ব্রাউন বলেন, “বাড়িঘর গভীরভাবে পরিষ্কার করা বা গোছানোর পরিকল্পনা থাকলে সেগুলো করুন। কে মানা করেছে। পাশাপাশি কোনো অনুপ্রেরণা পাওয়ার আয়োজনেও নিজেকে সম্পৃক্ত করুন।”
তিনি পরামর্শ দেন, “প্রকৃতির মাঝে গিয়ে বিশ্রাম নিন। আর এই সময় সমস্ত বৈদ্যুতিক যন্ত্র, টেক্স পড়া বা করা থেকে বিরত থাকুন।”
কুম্ভ রাশি
“পূর্ণিমার অবসাদ কাটাতে নিজের প্রতি যত্ন নেওয়ার জন্য অনেক উপায় আছে আপনার জন্য। আর সেটা নির্ভর করবে প্রয়োজনের ওপর” মন্তব্য করেন ব্রাউন।
বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দেওয়া বা সম্পূর্ণ নতুন কিছু করা যেমন ‘নিঃশ্বাসের ব্যায়াম’ বেশ কার্যকর হবে। আর দেহের যত্নের জন্য সারা গায়ে ব্রাশ চালানো হতে পারে ভালো উপায়, যা রক্ত প্রবাহ বাড়াবে।
মীন রাশি
এরা আধ্যাত্মিক স্বপ্নবাজ। তাই পূর্ণিমা রাতে বাজে ঘুম হলেই এরা ভেঙে পড়তে পারে। এমনকি দুঃস্বপ্নও দেখে।
ব্রাউন বলেন, “তাই নিজের উপকারের জন্য স্বপ্নকেই কাজে লাগান। ঘুমের সময় ইচ্ছে করেই নিজের কাছে প্রশ্ন রাখুন। আর দেখুন কোনো উত্তর মেলে কিনা স্বপ্নে।”
পাশাপাশি হাতের কাছে খাতা কলম রাখা যেতে পারে, যাতে রাতে কোনো স্বপ্ন দেখলে সেটা মনে করে লিখে ফেলা যায়। আর পরে সেটার উত্তর খোঁজার জন্য নেট মাধ্যম ব্যবহার করা যেতে পারে।
আর ম্যাকলিন বলেন, “এরা আক্ষরিক অর্থেই পা দিয়ে পরিচালিত হয়। তাই খালি পা মেঝেতে রাখলে ধরণী থেকে ‘নেগেটিভ আয়ন’ দেহে শোষিত হবে, যা উপকারী”।