সিন্ধু নদীতে ভারতের বানানো কোনো অবকাঠামোর কারণে যদি পাকিস্তানের পানি পেতে সমস্যা হয়, তাহলে ক্ষেপণাস্ত্র মেরে সেটি গুঁড়িয়ে দেওয়ারও হুমকি দিয়েছেন তিনি।
যুক্তরাষ্ট্রের মাটিতে বসে প্রকাশ্যে ‘পারমাণবিক যুদ্ধের’ হুমকি দিয়েছেন পাকিস্তানের সেনাপ্রধান আসিম মুনির।
শনিবার রাতে ফ্লোরিডার টাম্পাতে এক ডিনারে কিছুদিন আগেই ফিল্ড মার্শাল উপাধি পাওয়া মুনির বলেছেন, ভারতের সঙ্গে ভবিষ্যতে কোনো যুদ্ধে তার দেশ যদি অস্তিত্বের সঙ্কটে পড়ে তাহলে তারা ‘অর্ধেক দুনিয়া সঙ্গে নিয়ে’ যাবেন।
“আমরা পারমাণবিক শক্তিধর দেশ। আমরা যদি মনে করি আমরা শেষ হতে যাচ্ছি, তাহলে অর্ধেক দুনিয়াও সঙ্গে নিয়ে যাবো,” তিনি এমনটাই বলেছেন একাধিক ভারতীয় গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের মাটিতে বসে তৃতীয় কোনো দেশের বিরুদ্ধে পরমাণু অস্ত্র ব্যবহারের হুমকি দেওয়ার ঘটনা এর আগে কখনোই শোনা যায়নি, বলছে এনডিটিভি।
শনিবার মুনিম এই মন্তব্য করেন তার সৌজন্যে আয়োজিত এক ডিনারে, যার আয়োজক ছিলেন টাম্পার অনারারি কনসাল ব্যবসায়ী আদনান আসাদ।
সিন্ধু নদীতে ভারতের বানানো কোনো অবকাঠামোর কারণে যদি পাকিস্তানের পানি পেতে সমস্যা হয়, তাহলে সেটি গুঁড়িয়ে দেওয়ারও হুমকি দিয়েছেন পাকিস্তানের এ সেনাপ্রধান। বলেছেন, তার দেশের হাতে পর্যাপ্ত ক্ষেপণাস্ত্র রয়েছে।
পেহেলগামে সন্ত্রাসী হামলার পর ভারত যেভাবে একতরফাভাবে সিন্ধু পানি চুক্তি থেকে সরে গেছে তা পাকিস্তানের ২৫ কোটি লোককে অনাহারে ঠেলে দেওয়ার ঝুঁকি সৃষ্টি করেছে বলেও দাবি মুনিরের।
“ভারতের বাঁধ বানানো পর্যন্ত অপেক্ষা করবো আমরা। যখন সেটি হয়ে যাবে, তখন আমরা সেখানে ১০টি ক্ষেপণাস্ত্র মেরে সেটি ধ্বংস করে দেবো। সিন্ধু নদী ভারতের পারিবারিক সম্পত্তি নয়। আল্লাহর ইচ্ছায়, আমাদের ক্ষেপণাস্ত্রের ঘাটতি নেই,” পাকিস্তানি ফিল্ড মার্শাল এমনটাই বলেছেন বলে সেখানে উপস্থিত অতিথিদের কয়েকজন ভারতের দ্য প্রিন্টকে জানিয়েছেন।
এ নিয়ে দুই মাসের মধ্যে দ্বিতীয়বার যুক্তরাষ্ট্র সফরে গেলেন মুনির। আগেরবার জুনে মার্কিন প্রেসিডেন্টের আমন্ত্রণে তার সঙ্গে হোয়াইট হাউজে লাঞ্চ করেছিলেন তিনি। সেবার তিনি ‘শান্তি প্রতিষ্ঠায় অবদানস্বরূপ’ ডনাল্ড ট্রাম্পকে নোবেল পুরস্কার দেওয়ার সুপারিশও করেছিলেন। ফ্লোরিডার অনুষ্ঠানেও তিনি একই প্রস্তাব পুনর্ব্যক্ত করেন।
শনিবারের ওই ডিনারে ফ্লোরিডায় বসবাসকারী পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত আনুমানিক ১২০ জন অংশ নিয়েছেন বলে জানা গেছে। অনুষ্ঠানে কেউ মোবাইল ফোন বা ডিজিটাল কোনো যন্ত্র নিয়ে ঢুকতে পারেনি। ওই অনুষ্ঠানে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনীর এক প্রতিনিধিও ছিলেন বলে একাধিক খবরে বলা হয়েছে।
মুনির তার বক্তৃতায় মে-তে ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে হওয়ার চারদিনের সংঘর্ষ নিয়ে অনেকক্ষণ কথা বলেছেন বলে একাধিক অতিথি জানিয়েছেন। ভারত কেন তার ক্ষয়ক্ষতির বিস্তারিত জানাচ্ছে না তা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন তিনি।
“ভারতের উচিত তাদের ক্ষয়ক্ষতি স্বীকার করে নেওয়া, খেলোয়াড়ি চেতনা একটি গুণ,” নয়াদিল্লি এমনটা করলে ইসলামাবাদও প্রকাশ্যে তার ক্ষয়ক্ষতির বিস্তারিত জানাবে বলে প্রতিশ্রুতি দেন মুনির।
ভারত ফের হামলা চালালে পাকিস্তান অতীতের চেয়ে কড়া জবাব দেবে বলেও হুঁশিয়ারি দেন এ সেনাপ্রধান।
“আমরা ভারতের পূর্বাঞ্চল থেকে শুরু করবো, সেখানেই তাদের সবচেয়ে মূল্যবান সম্পদ রয়েছে, এরপর পশ্চিমদিকে অগ্রসর হবো,” মুনির এমনটাই বলেছেন বলে জানিয়েছে প্রিন্ট।
গোঁড়া রক্ষণশীল মুনির পাকিস্তানের প্রথম সেনাপ্রধান, যিনি মাদ্রাসায় পড়েছেন বলে একাধিক গণমাধ্যম জানিয়েছে।
পাকিস্তানের সঙ্গে লড়লে ভারতেরই ক্ষতি হবে বোঝাতে গিয়ে বক্তৃতায় মুনির এক ‘নির্দোষ তুলনাও’ টেনেছেন বলে জানিয়েছে এনডিটিভি।
“ভারত মার্সিডিজের মতো চকচক করছে, হাইওয়েতে আসছে ফেরারির মতো গতিতে, আর আমরা একটা পাথর ভর্তি ভারী ট্রাক, এখন যদি ট্রাক ওই গাড়িকে ধাক্কা মারে, তাহলে কার ক্ষতি হবে?”
মে-তে ভারতের সঙ্গে সংঘর্ষের পর ফিল্ড মার্শাল খেতাব পাওয়া মুনির আগামী দিনে পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট হতে যাচ্ছেন এমন গুঞ্জন রয়েছে। শনিবারের অনুষ্ঠানে তিনি পাকিস্তানের রাজনীতিতে সেনাবাহিনীর ভূমিকা থাকা দরকার এমন ইঙ্গিতও দিয়েছেন।
“অনেকে বলে, যুদ্ধ এতই গুরুত্বপূর্ণ যে তা কেবল জেনারেলদের হাতে ছাড়া ঠিক নয়, তাহলে রাজনীতিওতো গুরুত্বপূর্ণ, সেটিও কেবল রাজনীতিকদের হাতে ছাড়া উচিত নয়,” মুনির এমনই বলেছেন বলে খবর ভারতীয় গণমাধ্যমগুলোর।