বৃহস্পতিবার রাতে গাজীপুরের চান্দনা চৌরাস্তা এলাকায় সাংবাদিক আসাদুজ্জামান তুহিনকে কুপিয়ে ও গলা কেটে হত্যা করে কয়েকজন অস্ত্রধারী।
Published : 08 Aug 2025, 06:41 PM
“কী অপরাধ করেছিল আমার ছেলে? কী অন্যায় করেছিল সে? কেন এমন হলো? আমি কারো ক্ষতি চাই না। তোমরা আমার ছেলেকে এনে দাও।”
ছোট ছেলে সাংবাদিক আসাদুজ্জামান তুহিনকে হারিয়ে পাগলপ্রায় বৃদ্ধ বাবা মো. হাসান জামাল এভাবেই আহাজারি করছিলেন। বয়সের ভারে প্রায় ৮০ বছরের এই বৃদ্ধ ভালভাবে চলাফেরাও করতে পারেন না। ছেলের মৃত্যুর সংবাদ শোনার পর থেকেই বারবার মুর্ছা যাচ্ছিলেন। প্রতিবেশী-স্বজনরা তাকে শান্ত রাখার চেষ্টা করছিলেন।
বৃহস্পতিবার রাতে গাজীপুরের চান্দনা চৌরাস্তা এলাকায় সাংবাদিক আসাদুজ্জামান তুহিনকে কুপিয়ে ও গলা কেটে হত্যা করে কয়েকজন অস্ত্রধারী।
এ খবর ময়মনসিংহের ফুলবাড়ীয়া উপজেলার ভাটিপাড়া গ্রামের বাড়িতে পৌঁছালে পরিবারের সদস্যদের কান্না ও আহাজারিতে এক হৃদয়বিদারক দৃশ্যের আবতারণা হয়। আশপাশ থেকে রাতেই তুহিনের বাড়িতে ছুটে আসেন প্রতিবেশী ও স্বজনরা। তুহিনের বাবা-মা, ভাই-বোনদের সান্ত্বনা দিতে গিয়ে তারাও কান্নায় ভেঙে পড়েন।
হাসান জামাল ও সাবিহা খাতুন দম্পত্তির পাঁচ ছেলে আর দুই মেয়ের মধ্যে তুহিন ছিল সবার ছোট। ২০০৫ সাল থেকে তিনি পরিবার নিয়ে গাজীপুরের চান্দনা এলাকায় বসবাস করে আসছিলেন। দৈনিক প্রতিদিনের কাগজ পত্রিকার গাজীপুর প্রতিনিধি হিসেবে কাজের পাশাপাশি ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধির কাজও করতেন।
স্বজনরা জানান, বাড়ির সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ ছিল তুহিনের। প্রায় প্রতিদিন বাবা-মায়ের সঙ্গে কথা বলতেন। বুধবারও কথা বলার সময় মাকে চোখের চিকিৎসক দেখানোর কথা বলেছিলেন। ছেলে হত্যার খবর শোনার পর থেকে ৭৫ বছর বয়সী সাবিহা খাতুন বুক চাপড়ে আহাজারি করছিলেন।
বিলাপ করতে করতে বলছিলেন, “আমার তুহিন কালকে (বুধবার) বলেছে, আমি তোমাকে আগামী মাসে চোখের ডাক্তার দেখাবো। ডাক্তার অপারেশন করানোর কথা বললে, অপারেশন করাব। আম্মা কোনো চিন্তা করো না। তুমি ভালো হয়ে যাবে।”
“আমার তুহিনরে মাইরা ফেলাইছে। আমার বাবারে মাইরা ফেলাইছে। আমি এর বিচার চাই।”
আসাদুজ্জামান তুহিন স্ত্রী মুক্তা আক্তার ছাড়াও সংসারে দুই ছেলে তৌকির (৭) ও ফাহিমকে (৩) রেখে গেছেন।
শুক্রবার দুপুরে তুহিনদের বাড়িতে গিয়ে দেখা গেছে, পাশাপাশি কয়েকটি ঘরে তারা বসবাস করেন। বাবা-মা বাড়িতেই থাকেন। সারা বাড়িজুড়ে কান্নার রোল।
তুহিনের বোন সাইদা আক্তার রত্না কাঁদতে কাঁদতে বলছিলেন, “মাঝে মাঝে আমাদের খোঁজ-খবর নেয়। আমার ভাই কোনোদিন কোনো রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিন না। কখনো খারাপ ছেলেদের সঙ্গে আড্ডা দিত না, কেন আমার ভাইকে হত্যা করা হলো? আমার ভাইয়ের কী অপরাধ ছিল? আমার ভাইকে যারা হত্যা করেছে, তাদের ফাঁসি চাই।”
স্বজনরা জানায়, আসাদুজ্জামান তুহিন ২০০৫ সালে ফুলবাড়িয়া আাল হেরা স্কুল থেকে এসএসসি এবং ২০০৭ সালে সিলেট এম সাইফুর রহমান কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন। পরে ভাওয়াল কলেজ থেকে স্নাতক (সম্মান) করে গাজীপুরে ভাই জসিম উদ্দিনের ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত হন। পরে ওষুধ কোম্পানির চাকরি শুরু করেন। ২০১২ সাল থেকে তিনি সংবাদপত্রের সঙ্গে যুক্ত হন।
২০০৯ সালের দিকে হঠাৎ করে বড় ভাই জসিম উদ্দিন ক্যান্সার আক্রান্ত হয়ে মারা যায়। গাজীপুরে তুহিনের সঙ্গে তার আরেক ভাই সেলিম উদ্দিনও বসবাস করেন। সেলিম পরিবহন শ্রমিকের কাজ করেন।
দ্বিতীয় ভাই জাহাঙ্গীর আলম কক্সবাজার টেকনাফে পরিবার নিয়ে বসবাস করেন; অন্য ভাই শাজাহান মিয়া সিলেটে বসবাস করেন।
দুই বোনের বিয়ে হয়ে যাওয়ায় বতর্মানে গ্রামের বাড়িতে বৃদ্ধ বাবা ও মা বসবাস করেন। তারা বার্ধক্যজনিত নানা রোগে আক্রান্ত। ছেলেরাই তাদের দেখভাল করে আসছিলেন।