ক্যাসিনোবিরোধী অভিযান চলার সময় ২০১৯ সালে এক কোটি ৮১ লাখ টাকা, ৯ হাজার ইউএস ডলার, ১৬৫ কোটি ২৭ লাখ ৬০ হাজার টাকার ১০টি এফডিআর, ৩২টি ব্যাংক হিসাবের চেক বইসহ শামীমকে গ্রেপ্তার করা হয়।
Published : 07 Aug 2025, 01:47 PM
মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইনের মামলায় যুবলীগের কথিত নেতা ও ঠিকাদার এস এম গোলাম কিবরিয়া শামীম ওরফে জি কে শামীমকে ১০ বছরের সাজা থেকে খালাস দিয়েছে হাই কোর্ট।
তার আপিল আবেদনের চূড়ান্ত শুনানি করে বিচারপতি এ এস এম আব্দুল মবিন ও বিচারপতি জাবিদ হোসেনের বেঞ্চ বৃহস্পতিবার এই রায় দেয়।
ঢাকার ১০ নম্বর বিশেষ জজ আদালতের বিচারক মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম ২০২৩ সালের ১৭ জুলাই এ মামলায় জি কে শামীমকে ১০ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দিয়েছিলেন।
এছাড়া তার সাত দেহরক্ষী মো. দেলোয়ার হোসেন, মো. মোরাদ হোসেন, মো. জাহিদুল ইসলাম, মো. শহীদুল ইসলাম, মো. কামাল হোসেন, মো. সামসাদ হোসেন ও মো. আনিছুল ইসলামকে দেওয়া হয়েছিল ৪ বছর করে কারাদণ্ড।
কারাদণ্ডের পাশাপাশি তাদের প্রত্যেককে ৩ কোটি ৮৩ লাখ ৩৫ হাজার ৮১৪ টাকা অর্থদণ্ড দিয়েছিল জজ আদালত।
রায়ের পর্যবেক্ষণে বিচারক মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম বলেছিলেন, “অস্ত্রবাজ, টেন্ডারবাজ ও অর্থপাচারকারীদের কোনো আদর্শ নেই। তারা কোনো আদর্শকে লালন করে না। তবে আদর্শকে ব্যবহার করে রাতারাতিভাবে অবৈধ সম্পদের পাহাড় গড়ে তুলে দেশের উন্নয়নের অগ্রযাত্রাকে বাধাগ্রস্ত করে এবং দেশের অর্থনীতিকে ধ্বংস করে দেয়। তারা দেশ ও জাতির শত্রু। দেশের চলমান উন্নয়ন ও জাতীয় স্বার্থে তাদেরকে সম্মিলিতভাবে প্রতিহত করতে হবে।”
২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় ফিরলে জি কে শামীমের উত্থান হয়। তিনি নিজেকে যুবলীগ নেতা দাবি করলেও আওয়ামী লীগের এই সহযোগী সংগঠনটি তা অস্বীকার করে।
ক্যাসিনোবিরোধী অভিযান চলার সময় ২০১৯ সালের ২০ সেপ্টেম্বর দুপুরে নিকেতনের বাসা থেকে শামীমকে গ্রেপ্তার করা হয়। ওই ভবন থেকে নগদ এক কোটি ৮১ লাখ ২৮ হাজার টাকা, ৯ হাজার ইউএস ডলার, ১৬৫ কোটি ২৭ লাখ ৬০ হাজার টাকার ১০টি এফডিআর, ৩২টি ব্যাংক হিসাবের চেক বই, আটটি আগ্নেয়াস্ত্র ও মদ পাওয়ার কথা জানানো হয় অভিযান শেষে।
গ্রেপ্তারের সময় র্যাব সদরদপ্তর, সচিবালয়ে ও কয়েকটি হাসপাতালের নতুন ভবনসহ অন্তত ২২টি নির্মাণ প্রকল্পের ঠিকাদারি কাজ শামীমের প্রতিষ্ঠান জিকে বিল্ডার্সের হাতে ছিল। এসব প্রকল্পের ব্যয় বরাদ্দের পরিমাণ ছিল ৬ হাজার কোটি টাকা। পরে সেগুলোর কার্যাদেশ বাতিল হয়। জব্দ করা হয় তার ১৯৪টি ব্যাংক হিসাব।
অভিযনের পরদিন ২১ সেপ্টেম্বর গুলশান থানায় অর্থপাচার প্রতিরোধ আইনে জি কে শামীমের বিরুদ্ধে মামলা করেন র্যাব-১ এর নায়েব সুবেদার মিজানুর রহমান।
মামলায় বলা হয়, শামীম তার দেহরক্ষীদের সহযোগিতায় দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন ধরনের টেন্ডারবাজি, মাদক ও জুয়ার ব্যবসাসহ স্থানীয় টার্মিনাল, গরুর হাট-বাজারে চাঁদাবাজি করে নামে-বেনামে বিপুল পরিমাণ অবৈধ অর্থের মালিক হয়েছেন। বিপুল পরিমাণ অর্থ বিদেশেও পাচার করেন তিনি।
তদন্ত শেষে পুলিশের অপরাধ তদন্ত সংস্থা সিআইডির সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার আবু সাঈদ ২০২০ সালের ৪ অগাস্ট আদালতে জিকে শামীম ও তার সাত দেহ রক্ষীর বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র জমা দেন। সেটি গ্রহণ করে ১০ নভেম্বর বিচার শুরুর আদেশ দেয় জজ আদালত। রায় হয় ২০২৩ সালের ১৭ জুলাই।
পরে এই রায়ের বিরুদ্ধে হাই কোর্টে আপিল করেন জি কে শামীম। তাতে তিনি খালাসের রায় পেলেন।
শামীমের বিরুদ্ধে মোট মামলার সংখ্যা তিনটি। এর মধ্যে অস্ত্র আইনের মামলায় তার যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হয়েছে।