“মানুষটাকে তো আর ফিরে পাব না, বিচার হলে কিছুটা শান্তি তো পাব,” বলছেন স্ত্রী আশামনি।
Published : 07 Aug 2025, 10:09 AM
ব্লগার নীলাদ্রি চট্টোপাধ্যায় ওরফে নিলয় নীল হত্যা মামলার বিচার ১০ বছরেও পায়নি পরিবার; আসামিপক্ষও চাইছে- মামলাটার বিচারটা যেন দ্রুত শেষ হয়, মেলে ন্যায়বিচার।
যুদ্ধাপরাধের বিচার দাবিতে গড়ে ওঠা গণজাগরণ আন্দোলনের সঙ্গে সম্পৃক্ত নীলাদ্রি ইস্টিশন ব্লগে লিখতেন ‘নিলয় নীল’ নামে।
লেখালেখির কারণে খুন হওয়ার কিছু দিন আগে থেকে হুমকি পাচ্ছিলেন তিনি। নিরাপত্তাহীনতার কথা জানিয়ে হত্যাকাণ্ডের আড়াই মাস আগে জিডি করতে গেলেও থানা তা নেয়নি বলেও ফেইসবুকে এক পোস্টে লিখে যান তিনি।
ঢাকার খিলগাঁওয়ের পূর্ব গোড়ান টেম্পোস্ট্যান্ডের কাছে ৮ নম্বর রোডের ১৬৭ নম্বরের পাঁচতলা ভবনের পঞ্চম তলায় থাকতেন তিনি।
দেশজুড়ে উগ্রবাদীরা একের পর এক ‘টার্গেট কিলিং’ শুরু করার পর ২০১৫ সালের ৭ অগাস্ট শুক্রবার ছুটির দিনে দুপুরে সেই বাড়িতে হামলায় চালিয়ে ২৭ বছর বয়সী নিলয়কে খুন করা হয়। ওইদিন রাতেই তার স্ত্রী আশামনি খিলগাঁও থানায় অচেনা চারজনকে আসামি করে মামলা করেন।
ঘটনার পাঁচ বছর বাদে ২০২০ সালের ৪ অক্টোবর বহিষ্কৃত মেজর সৈয়দ মো. জিয়াউল হক জিয়াসহ ১৩ জনকে আসামি করে অভিযোগপত্র দাখিল করেন রমনা জোনাল টিমের পুলিশ পরিদর্শক শাহ মো. আক্তারুজ্জামান ইলিয়াস। ২০২২ সালের ১৮ জানুয়ারি ১৩ আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরু হয়।
সেনাবাহিনী থেকে বহিষ্কৃত মেজর সৈয়দ মো. জিয়াউল হককে প্রধান আসামি করে দেওয়া অভিযোগপত্রের অন্য আসামিরা হলেন- মাসুম রানা, সাদ আল নাহিন, মো. কাওসার হোসেন খাঁন, মো. কামাল হোসেন সরদার, মাওলানা মুফতি আব্দুল গফ্ফার, মো. মর্তুজা ফয়সল সাব্বির, মো. তারেকুল আলম ওরফে তারেক, খায়রুল ইসলাম ওরফে জামিল ওরফে রিফাত ওরফে ফাহিম ওরফে জিসান, আবু সিদ্দিক সোহেল ওরফে সাকিব ওরফে সাহাব, মোজাম্মেল হোসেন সায়মন, মো. আরাফাত রহমান ও মো. শেখ আব্দুল্লাহ ওরফে জুবায়ের।
আসামিদের মধ্যে মেজর জিয়া, আবু সিদ্দিক সোহেল ও কাওসার হোসেন পলাতক রয়েছে, তাদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা আছে।
বর্তমানে ঢাকার প্রথম অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ ইব্রাহিম মিয়ার আদালতে মামলাটি সাক্ষ্যগ্রহণের পর্যায়ে রয়েছে। সবশেষ ৩০ জুলাই মামলাটি সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য ছিল। ওই দিন পুলিশ পরিদর্শক আনোয়ার হোসেন খান সাক্ষ্য দেন৷ তার সাক্ষ্য শেষে আগামী ১৪ সেপ্টেম্বর পরবর্তী সাক্ষ্য গ্রহণের দিন ঠিক করা হয়েছে। মামলাটিতে ১৫ সাক্ষীর মধ্যে মাত্র পাঁচজনের সাক্ষ্যগ্রহণ সম্পন্ন হয়েছে।
মামলার বাদী নিলয়ের স্ত্রী আশামনি বলেন, “ভেবেছিলাম ঘটনার ২/১ বছরের মধ্যেই মামলার বিচার শেষ হবে। কিন্তু ১০ বছর হয়ে গেছে। ১০ বছর ধরে বিচার চেয়ে আসছি; কিন্তু বিচার পাচ্ছি না।
“জীবন্ত একটা মানুষকে মেরে ফেলল। মানুষটাকে তো খুন করা হয়েছে, তার বিচার হোক। মানুষটাকে তো আর ফিরে পাব না, বিচার হলে কিছুটা শান্তি তো পাব।”
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী অতিরিক্ত পিপি মোহাম্মদ বিল্লাল হোসেন বলেন, “মামলায় পাঁচ জনের সাক্ষ্য শেষ হয়েছে। আগামি ২/১ ডেটের মধ্যে কয়েকজন সাক্ষী আসলে মামলাটা শেষে দিকে চলে আসবে। ৪/৫ ডেটের মধ্যে শেষ হওয়ার সম্ভবনা রয়েছে।

নীলাদ্রি চট্টোপাধ্যায় নিলয় ও তার স্ত্রী আশামনি।
“আশা করছি, আগামী বছর মার্চের মধ্যে মামলার বিচার শেষ হবে। এর আগেও হতে পারে। রাষ্ট্রপক্ষ থেকে আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টায় আছি মামলাটা শেষ করার জন্য। আসামিদের যেন সর্বোচ্চ সাজা হয় এবং ভুক্তভোগী পরিবার ন্যায়বিচার পায়।”
আসামিপক্ষের আইনজীবী মো. আবু বকর সিদ্দিক বলেন, “এ মামলায় নিরাপরাধ আসামিদের মধ্যে কয়েকজন কারাগারে রয়েছেন। পাশাপাশি কয়েকজন জামিনেও রয়েছেন।
“এজাহারে তাদের নাম ছিল না। অযথা তাদের মামলায় সম্পৃক্ত করা হয়েছে। আমরা চাই দ্রুত মামলাটির বিচার শেষ হোক। সবাই যেন ন্যায়িবিচার পায়।”
আরও খবর-