“ইসলামী ছাত্রশিবির চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানকে একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধের মুখোমুখি দাঁড় করানোর লক্ষ্যে এ ধরনের ‘জঘন্য অপচেষ্টা’ চালাচ্ছে,” বলছে ছাত্রদল।
জুলাই অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে ইসলামী ছাত্রশিবিরের অনুষ্ঠানে একাত্তরের দণ্ডিত যুদ্ধাপরাধীদের ছবি থাকার ঘটনায় ‘তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ’ জানিয়েছে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল।
অন্যদিকে শিক্ষার্থীদের ক্ষোভের মুখে ছবি সরানোর পর ছাত্রশিবির বলছে, তাদের প্রদর্শনীর একটা অংশ নিয়ে ‘কুতর্ক ও মব’ সৃষ্টি করা হয়েছে।
জুলাই অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে ‘৩৬ জুলাই: আমরা থামবো না’ শীর্ষক কর্মসূচি আয়োজন করেছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর ছাত্র সংগঠন— ইসলামী ছাত্রশিবির।
এ কর্মসূচির অংশ হিসেবে মঙ্গলবার টিএসসিতে ‘বিচারিক হত্যাকাণ্ড’ শিরোনামে প্রদর্শনী আয়োজন করে তারা।
এতে জামায়াতে ইসলামীর আমির মতিউর রহমান নিজামী, সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আব্দুল কাদের মোল্লা, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল যুদ্ধাপরাধী মুহাম্মদ কামারুজ্জামান, শুরা সদস্য মীর কাসেম আলী, নায়েবে আমির দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী এবং বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর ছবি স্থান পায়।
এ ঘটনায় শিক্ষার্থীরা ক্ষোভ জানালে সন্ধ্যার পর ছবিগুলো সরিয়ে নেওয়া হয়।
ছাত্রশিবিরের এ প্রদর্শনীর প্রতিক্রিয়ায় ঢাবি ছাত্রদল রাতে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলে, “ইসলামি ছাত্রশিবিরের প্রদর্শনীতে তাদের সংগঠনের কিছু ‘স্বীকৃত গণহত্যাকারী রাজাকারের’ ছবির পাশাপাশি শাহবাগ আন্দোলনের নামে আওয়ামী ফ্যাসিবাদের দোসরদের সৃষ্ট মব জাস্টিস এবং স্বৈরাচারী ‘শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত রোষানলের শিকার’ সাবেক সংসদ সদস্য মরহুম সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর ছবি প্রদর্শন করেছে।
“বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এমন ‘ধৃষ্টতাপূর্ণ’ আচরণের তীব্র নিন্দা জানাচ্ছে। সেই সঙ্গে ইসলামি ছাত্রশিবির কর্তৃক ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে গণহত্যায় জড়িত রাজাকারদেরকে মহান মুক্তিযুদ্ধের আঁতুড়ঘর হিসেবে খ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস, যেখানে সর্বপ্রথম স্বাধীন বাংলাদেশের মানচিত্র খচিত জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়েছিল, সেখানে জবরদস্তিমূলকভাবে প্রতিষ্ঠিত করার জঘন্য অপচেষ্টাকে ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করছে।”
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ইসলামি ছাত্রশিবির চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানকে একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধের মুখোমুখি দাঁড় করানোর লক্ষ্যে এ ধরনের ‘জঘন্য অপচেষ্টা’ চালাচ্ছে।
শিক্ষার্থীদৈর ক্ষোভের মুখে একাত্তরের যুদ্ধাপরাধে দণ্ডিতদের এসব ছবি সরিয়ে নেয় ইসলামী ছাত্রশিবির।
এ বিষয়ে ছাত্রশিবির ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি এস এম ফরহাদ ফেইসবুকে লেখেন, “আমাদের আয়োজনের ফটোফ্রেমগুলোর একটা অংশ নিয়ে কুতর্ক এবং মব সৃষ্টি করা হয়েছে। এই বিষয়ে আমাদের অবস্থান সুস্পষ্ট।”
তিনি লেখেন, “আমাদের জাতীয় ইতিহাসে একাত্তরের স্বাধীনতা যুদ্ধ গৌরবজনক অধ্যায়। বাকশাল কায়েম করে মুক্তিযুদ্ধকে প্রথমবারের মতো প্রশ্নবিদ্ধ করেছে শাহবাগের পুর্বসূরীরা। দ্বিতীয় দফায় ১৩ সালে শাহবাগ কায়েম করে আওয়ামী লীগকে ফ্যাসিবাদ বানায় এই শাহবাগ। শাহবাগ ও বাকশালের অপরাধীদের বিরুদ্ধে আমাদের রাজনৈতিক অবস্থান জারি থাকবে।”
তাদের নেতারা ‘বিচারিক হত্যাকাণ্ডের শিকার’ দাবি করে ছাত্রশিবিরের সভাপতি বলেন, “হাসিনা গত ১৬ বছরের ফ্যাসিবাদী শাসনে বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, গুমসহ যত অপরাধ করেছে, তার প্রতিটিকেই আমরা উপস্থাপন করেছি। যেমন- শাপলা হত্যাকাণ্ড, সেনা অফিসার হত্যাকাণ্ড ইত্যাদি। একইসঙ্গে শাহবাগের মবতান্ত্রিক ট্রাইব্যুনাল নাটকের মাধ্যমে বিচারিক হত্যাকাণ্ডের বিষয়টিও তুলে ধরা হয়েছে।
“ফ্রেমের ছবিগুলোতে যেসব ব্যক্তির ছবি ছিল, তারা বিচারিক হত্যাকাণ্ডের শিকার। বিষয়টি বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া, বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও অন্যান্য জাতীয় নেতা বিভিন্ন সময় সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ করেছেন।
“কথিত বিচারে সাইদীর পক্ষে সাক্ষী দিতে আসা হিন্দু ব্যক্তিকেও গুম ও ভারতে পাচার করা হয়। মীর কাশেম আলীর মামলায় তার সন্তান ব্যারিস্টার আরমান আইনজীবী হিসেবে ভুমিকা রাখছিলেন। হাসিনার ফ্যাসিবাদী বাহিনী তাকেও গুম করে। চট্টলার সিংহ সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর ছেলে হুম্মাম কাদের চৌধুরীকেও ওরা গুম করে।”
তার ভাষ্য, “সারা দুনিয়ার মানবাধিকার সংস্থা, পর্যবেক্ষক এবং যুদ্ধাপরাধ বিচারের এক্সপার্টরা সর্বসম্মত মত দিয়েছেন— এই বিচার সুষ্ঠু নয়, বরং রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। বিশেষ করে, স্কাইপি কেলেঙ্কারির ঘটনা জাতির সামনে উন্মোচন করেছে— রায়গুলো ছিল ফরমায়েশি। এমনকি বিচারকরাও জানতেন, তাদের অপরাধ প্রমাণযোগ্য নয়।”
তিনি বলেন, “ইতিহাসের এমন নিকৃষ্টতম বিচারিক হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে ক্রিটিকাল থাকা, একে প্রশ্ন করার অধিকার সবারই থাকতে হবে।”
সংগৃহীত;