বড় অঙ্কের জামানত ও অগ্রিম অর্থ জমা হলেই ভেগে যাচ্ছে বড় ওটিএ।
উড়োজাহাজের টিকেট বুকিংয়ের অনলাইন প্লাটফর্ম ‘ফ্লাইট এক্সপার্ট’ বন্ধ হওয়ার পর অনলাইন ট্রাভেল এজেন্ট বা ওটিএ খাতের কেলেঙ্কারি নতুন করে আলোচনায় এসেছে।
খাত সংশ্লিষ্টদের ভাষ্য, এয়ারলাইন্সের চেয়েও কমদামে টিকেট বিক্রির লোভনীয় ফাঁদে ফেলে ছোট এজেন্সিগুলোর কাছ থেকে কোটি কোটি টাকার জামানত নিচ্ছে ওটিএ। এসব জমার বিপরীতে টিকেট মূল্যে ছাড়ের পাশাপাশি ব্যাংকের মতো ৫ থেকে ৭ শতাংশ পর্যন্ত লভ্যাংশ দেওয়া হয়। একপর্যায়ে অনেক টাকা জমা হয়ে গেলে ভেগে যায় ওটিএ।
বাংলাদেশের ট্রাভেল এজেন্টদের সংগঠন ‘আটাব’ বলছে, অনলাইন ট্রাভেল এজেন্টদের (ওটিএ) জন্য নীতিমালা তৈরি করতে তারা অনেক দিন ধরেই চাপাচাপি করছেন। কিন্তু সরকার উদ্যোগ না নেওয়ায় পঞ্চম ওটিএ হিসেবে ‘ফ্লাইট এক্সপার্ট’ গ্রাহকের টাকা নিয়ে পালাতে পেরেছে। অচিরেই নীতিমালা না হলে সামনে আরও প্রতারণা ঘটতে পারে বলে শঙ্কা আটাব নেতাদের।
শনিবার থেকে বন্ধ হয়ে যাওয়া ‘ফ্লাইট এক্সপার্ট’র বিরুদ্ধে ওই দিন রাতে মতিঝিল থানায় মামলা করেন সরকার ট্যুরস অ্যান্ড ট্রাভেলসের মালিক বিপুল সরকার। এই মামলায় কোম্পানিটির তিন কর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তবে কোম্পানি মালিক সালমান ও তার বাবা এম এ রশীদের কোনো হদিশ নেই।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, কয়েক কোটি টাকা তুলে নিয়েছে ‘ফ্লাইট এক্সপার্ট’। তবে কতো টাকার ক্ষতি হয়েছে, সে বিষয়ে সুনির্দিষ্ট ধারণা দিতে পারেননি তারা। মামলায় ৫ থেকে ৬ হাজার কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ করা হলেও হিসাব দেওয়া হয়েছে চার কোটি টাকার।
‘ফ্লাইট এক্সপার্ট’র মাধ্যমে কাটা অগ্রিম টিকেটগুলো বাতিল হয়ে যাচ্ছে জানিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে ছোট এজেন্সিগুলো। তাদের ভাষ্য, এই বাতিল হওয়া টিকেটে ক্ষতির পরিমাণ কতো তা এখনো নিরূপণ করা সম্ভব হয়নি।
ওটিএ ব্যবসার ‘দেশি মডেল’
এ খাতের কয়েক জনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে ডলার সংকট শুরু হলে বিদেশি এয়ারলাইন্সগুলো তাদের টিকেট বিক্রির টাকা নিজ দেশে নিয়ে যেতে পারছিল না। তখন বাংলাদেশের প্রথাগত ট্রাভেল এজেন্টগুলোর কাছে টিকেট বিক্রি বন্ধ করে এয়ারলাইন্সগুলো বেছে নেয় ওটিএগুলোকে। আর তাতে কয়েক বছরেই ফুলে-ফেঁপে ওঠে ওটিএ ব্যবসা।
খাত সংশ্লিষ্টদের হিসাব অনুযায়ী, বাংলাদেশে এয়ার টিকেটিংর বাজার প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকার মতো, বর্তমানে যার বেশিরভাগ নিয়ন্ত্রণ করছে ওটিএগুলো। কিন্তু এদের বিষয়ে সরকারের সুনির্দিষ্ট নীতিমালা নেই।
বন্ধ হওয়া ‘ফ্লাইট এক্সপার্ট’র এমডি সালমান বিন রশিদের বাবা এম এ রশিদ দেশের ট্রাভেল এজেন্সি খাতের পুরনো ব্যবসায়ী। মক্কা টুর অ্যান্ড ট্রাভেলসের মাধ্যমে দীর্ঘদিন ধরে তারা টিকেটিং, হজ ও ওমরার বিভিন্ন প্যাকেজ পরিচালনা করে আসছিলেন।
সেই অভিজ্ঞতা থেকে ২০১৭ সালের মার্চে তারা বাংলাদেশে অনলাইনে টিকেট কাটার প্লাটফর্ম ‘ফ্লাইট এক্সপার্ট’ চালু করেন। তারা দেশি-বিদেশি বিভিন্ন এয়ারলাইন্সের টিকেট বুকিং, হোটেল রিজারভেশন, ট্যুর প্যাকেজ ও ভিসা প্রক্রিয়াকরণের মতো সেবা দিতেন।
‘ফ্লাইট এক্সপার্ট’ যেমন সরাসরি গ্রাহকের (বিটুসি) কাছে টিকেট ও সেবা বেচত, তেমনই এজেন্সির (বিটুবি) কাছেও একই ব্যবসা করত। এয়ারলাইন্সের চেয়েও কম দামে টিকিট পাওয়ায় ঢাকা ও বাইরের অনেক ট্রাভেল এজেন্সি ‘ফ্লাইট এক্সপার্ট’র কাছ থেকে টিকেট কিনতো। আর এজন্য ‘ফ্লাইট এক্সপার্ট’কে অগ্রিম টাকা দিতে হতো; অনেক এজেন্সি জামানতও রেখেছিল ‘ফ্লাইট এক্সপার্ট’র কাছে ।
ট্রাভেল ব্যবসায়ী বিপুল শনিবার রাতে ‘ফ্লাইট এক্সপার্ট’র বিরুদ্ধে মতিঝিল থানায় যে মামলা করেছেন, তাতে বলা হয়েছে- ১৭ এজেন্সি মালিকের চার কোটি ৭৯ হাজার টাকা আত্মসাৎ করে পালিয়েছে ফ্লাইট এক্সপার্ট মালিক। তবে ফ্লাইট এক্সপার্টের মোট ‘আত্মসাতের’ পরিমাণ ৫ থেকে ৬ হাজার কোটি বলে অভিযোগ করা হয়েছে।
জানতে চাইলে বাদী বিপুল সরকার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “শনিবার দিনভর সেখানে অনেক ক্ষতিগ্রস্ত ছিল। তবে আমাদের মামলার সিদ্ধান্ত নিতে রাত হয়ে যায়। রাতে সেই সময় আমরা যতোজন ছিলাম, ততোজনকে নিয়ে তাৎক্ষণিকভাবে একটা হিসাব দিয়ে মামলা করেছি।
“তবে ওরা শত শত গ্রাহকের টাকা মেরে পালিয়েছে। তারা ৫ থেকে ৬ হাজার কোটি টাকা প্রতারণামূলকভাবে আত্মসাৎ করে পালিয়েছে বলে আমরা মামলায় একটা ধারণা দিয়েছি।”
‘ফ্লাইট এক্সপার্ট’ বন্ধ হওয়ার আগে সম্প্রতি যেসব টিকেট কাটা হয়েছে, সেগুলো এখন বাতিল হয়ে যাচ্ছে বলে জানিয়েছে কয়েকটি ছোট এজেন্সি।
বিপুল বলেন, “এসব টিকেটে ঝামেলা না হলে কোনো সমস্যাই হতো না। কিন্তু এই টিকেটগুলোতে এখন ঝামেলা হচ্ছে। অলরেডি তাদের (ফ্লাইট এক্সপার্ট) এন্ড থেকে তারা আরও একটা পার্টির সাপোর্ট নিয়েছে।
“ডিউ রাখার কারণে ফ্লাইটে এক্সপার্ট পালিয়ে যাওয়ার পর ওই এজেন্সিগুলো গণহারে টিকিট ক্যান্সেল করা শুরু করেছে।” (অর্থাৎ ফ্লাইট এক্সপার্ট অন্য আরেকটি কোম্পানির কাছ থেকে বাকিতে টিকেট কেটে তা বেচেছে ছোট এজেন্সির কাছে)
এয়ার টিকেট কাটার জন্য দেশের ট্রাভেল এজেন্টরা ইন্টারন্যাশনাল এয়ার ট্রান্সপোর্ট অ্যাসোসিয়েশন বা আয়াটার ওপর নির্ভরশীল। আয়াটা বিশ্বের তিন শতাধিক এয়ারলাইন্সের একটি টিকেটিং প্লাটফর্ম, যার মাধ্যমে বিশ্বের ৮০ শতাংশের বেশি যাত্রী পরিবহন হয়। নিবন্ধিত ট্রাভেল এজেন্টকে একটি পরিচিতি নম্বর ও পাসওয়ার্ড দিয়ে থাকে আয়াটা। বাংলাদেশে নিবন্ধিত ৩৬০০ ট্রাভেল এজেন্টের অনেকেই আয়াটার বাইরে ‘ফ্লাইট এক্সপার্ট’র মতো বড় ট্রাভেল এজেন্টের কাছ থেকে টিকেট কিনে গ্রাহকদের কাছে বিক্রি করে।
এমন চারজন ব্যবসায়ী বলেছেন, তাদের ১৫টির মতো টিকেট বাতিল হয়েছে।
ট্রাভেল এজেন্ট ব্যবসায়ী বিপুল সরকার মামলায় বলেছেন, ‘ফ্লাইট এক্সপার্ট’ নিজের আয়াটা অ্যাকাউন্ট ব্যবহারের পাশাপাশি অন্যের আয়াটা অ্যাকাউন্ট দিয়ে টিকেট করতো। এর মধ্যে রয়েছে হাজী ইয়ার ট্রাভেলস, সোমা ইন্টারন্যাশনাল, প্রোমা ইত্যাদি। এ এজেন্সিগুলো যেন ফ্লাইট এক্সপার্টের মাধ্যমে কাটা টিকেট বাতিল না করে, সে বিষয়ে মামলায় অনুরোধ জানিয়েছেন বিপুল সরকার।
এই তিন এজেন্সির নম্বরে রোববার যোগাযোগের চেষ্টা করে তাদের সাড়া পাওয়া যায়নি।
বিপুল সরকার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ফ্লাইট এক্সপার্ট চলে যাওয়ার পর থেকে শনিবার আমরা যাদের সঙ্গে কথা বলেছি তারই চার-পাঁচটা করে টিকেট ক্যান্সেল। আর এসবই হচ্ছে ইউরোপ, আমেরিকাসহ ইন্টারন্যাশনাল বড় রুটের টিকেট।”
টিকেট বাতিল হতে থাকায় উদ্বেগ প্রকাশ করে বিপুল বলেন, “আমরা এখনো আতঙ্কের মধ্যে আছি। ক্ষয়ক্ষতির মাত্রাটা কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে, এটা আমরা এখনো হিসাব করে কূল পাচ্ছি না।”

ফ্লাইট এক্সপার্টে অর্থ খুইয়ে অনেকেই ভিড় করছেন প্রতিষ্ঠানটির কার্যালয়ে।
লোভের ফাঁদে পা
অনলাইন ট্রাভেল এজেন্টদের ব্যবসা এখন কেবল টিকেটে সীমাবদ্ধ নেই বলে জানিয়েছে দেশি ট্রাভেল এজেন্টদের সংগঠন আটাব। সংগঠনের অভ্যন্তরে অনিয়ম, দুর্নীতি এবং অর্থ আত্মসাতের একাধিক অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে সোমবার আটাবের কার্যনির্বাহী কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করে প্রশাসক বসিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
সংগঠনটির সদ্য বিদায়ী সভাপতি আব্দুস সালাম আরেফ বলছেন, “ওটিএ-গুলোর ব্যবসা এখন শুধু টিকেটিং না; তারা মানি ম্যানেজমেন্ট করে মার্কেট থেকে টাকা কালেকশন করে সেল বাড়ায়। এয়ারলাইন্সের যে টিকিটের নেট দাম এক লাখ টাকা, সেটা ওটিএ-তে বিক্রি হয় ৯২ হাজার টাকায়। এই টাকা তারা কোথায় পায়, তারা তো লস দেয় না।
“তারা মানুষের কাছে কমদামে টিকেট দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে টাকা ডিপোজিট নেওয়া শুরু করে। একটা পর্যায়ে অনেক টাকা ডিপোজিট হয়ে গেলে তারা ভেগে যায়। এসব ডিপোজিটের বিপরীতেও তারা ব্যাংকের মতো ৫ থেকে ৭ শতাংশ পর্যন্ত লভ্যাংশ দিয়েছে।”
এই অভিনব মডেলে ব্যবসা করা টোয়েন্টিফোর টিকেট ডটকম, হালট্রিপ, লেটস ফ্লাই ও ফ্লাই হাব এর আগে বন্ধ হয়ে গেছে। আর ঘোষণা ছাড়াই বন্ধ হলো ‘ফ্লাইট এক্সপার্ট’।
এর আগে যারা বন্ধ হয়ে গেছে, তাদের কাছেও কি ছোট এজেন্টদের জামানত ছিল- এমন প্রশ্নের উত্তরে সদ্য সাবেক আটাব সভাপতি বলেন, “ওটিএ-গুলোর গ্রাহক দুই ধরনের। একটা হচ্ছে সরাসরি গ্রাহক, যেটাকে বলছি বিটুসি; আরেকটা হচ্ছে অন্য এজেন্সিগুলোর কাছেও তারা টিকিট বেচতো, যেটাকে বলছে বিটুবি।
“বিটুবির ক্ষেত্রে তারা এজেন্সিগুলোর কাছ থেকে ডিপোজিট নেয় এবং ডিপোজিটের বিপরীতে তারা টিকেটে ডিসকাউন্টও দেয়। আবার ডিপোজিটের বিপরীতে লভ্যাংশও দেয়। একদিকে টিকেটের দাম কম, আরেকদিকে ডিপোজিটের ওপর লাভ- এসব কারণে অনেক মানুষই ঝাঁপিয়ে পড়েছিল।”
এমনটাই ওটিএ ব্যবসার মডেল হয়ে দাঁড়িয়েছে জানিয়ে আটাব নেতা আব্দুস সালাম আরেফ বলেন, “তাদের পলিসিটাকে এমনভাবে দাঁড় করিয়েছে যে- প্রতিদিন, প্রতি ঘণ্টায় তাদের সেল বাড়তে থাকে। যখন তারা তাদের টার্গেট মূলধন জমা করে ফেলে, তখন তারা টাকা নিয়ে ভেগে যায়।
“বাংলাদেশে যারা লিডিং ওটিএ, এদের মালিকদের দেখবেন আইদার আমেরিকা অর কানাডা অথবা সিঙ্গাপুরের পাসপোর্ট বা রেসিডেন্সি আছে- যাতে এখান থেকে ভেগে গিয়ে ওদিকে গিয়ে আরামে থাকতে পারে।”
এক প্রশ্নের জবাবে আরেফ বলেন, “আমাদের ট্রাভেল এজেন্সির মার্কেট সাইজ ২০ হাজার কোটি টাকার মতো। এই মার্কেটের এখন ৬৫ থেকে ৭০ শতাংশ শেয়ার ওটিএগুলোর কাছে চলে গেছে।
“কারেন্টলি ৪০ থেকে ৪৫টি ওটিএ আছে, তবে ব্যবসা করছে ৫ থেকে ৭টি বা ১০টি। এই লিডিং ওটিএগুলোই এখন মার্কেটটাকে ডমিনেট করছে।”
দ্রুত ওটিএ বিষয়ক নীতিমালা দাবি করে এ আটাব নেতা বলছেন, “আমরা বিষয়টি নিয়ে সরকারে কাছে কয়েক দফা চিঠি লিখেছি, প্রেস কনফারেন্স করেছি, পত্রিকায় সতর্কতা বিজ্ঞাপন দিয়েছি।
“আমরা বলেছি, এখানে আধুনিক সময়োপযোগী গাইডলাইন দরকার। সরকার এটা যতো দ্রুত দেবে, ততো দ্রুত এই বিশৃঙ্খলাগুলো দূর হবে।”
আগের ঘটনার সুরাহা নেই
আলোচিত পি কে হালদার বিপুল পরিমাণ অর্থ আত্মসাৎ করে দেশ ছেড়ে পালিয়ে গেলে ২০২০ সালে বন্ধ হয়ে যায় তার অনলাইন ট্রাভেল এজেন্সি ‘হালট্রিপ’। দীর্ঘদিনেও প্রতারণার শিকার ব্যবসায়ী ও গ্রাহক আর অর্থ ফেরত পাননি।
২০২১ সালে বন্ধ হয় ‘টোয়েন্টিফোর টিকেট ডটকম’ নামের আরেকটি ওটিএ। গ্রাহক ও ৬৭টি এজেন্টের চার কোটি ৪৪ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছিল। এ ঘটনায় কোম্পানির কর্ণধার আব্দুর রাজ্জাকসহ পাঁচজনকে আসামি করে মামলা করেছিল সিআইডি; গ্রেপ্তার হয়েছিল কয়েকজন।
২০২৩ সালে ‘লেটস ফ্লাই’ নামের আরেকট ৩৮টি ট্রাভেল এজেন্সির ১০ কোটি টাকা মেরে দিয়ে উধাও হয়ে যায়। এ ঘটনায় এক কর্মী গ্রেপ্তার হলেও ভুক্তভোগীরা অর্থ ফেরত পাননি।

ফ্লাইট এক্সপার্টের তিন কর্মী গ্রেপ্তার হলেও মালিকের হদিশ নেই।
সবাই জানতো ‘সামথিং ইজ কুকিং’
আসলেই কী ওটিএগুলো এভাবে ব্যবসা করে?
জানতে চাইলে দেশের শীর্ষ আরেক ওটিএ’র সিইও বলেন, “ওটিএগুলো মার্কেটে এসেছিল স্টার্টআপ হিসেবে। কিন্তু এরকম মডেল ওটিএ বলতে গেলে হাতে গোনা দুই তিনটা। তারা প্রথাগত ট্রাভেল এজেন্টদের বিরোধিতার মধ্যেও ব্যবসা করছে, বিদেশি বিনিয়োগও পেয়েছে।
“আর ফ্লাইট এক্সপার্ট কিন্তু সেই হিসেবে স্টার্টআপ না। তারা এই ব্যবসায় সেকেন্ড জেনারেশন। সালমানের বাবা রশিদ সাহেবের পুরনো ট্রাভেল এজেন্সির ব্যবসা।”
‘ফ্লাইট এক্সপার্ট’-এ যে অস্বাভাবিক কিছু ঘটছে তা গত কয়েক মাস ধরে খাত সংশ্লিষ্টরা বুঝতে পারছিল মন্তব্য করে এ ব্যবসায়ী বলেন, “সেখানে সামথিং ইজ কুকিং- এটা সবাই জানতো; কিন্তু কেউ কিছু বলেনি। এখন তাদের এই ঘটনার ইম্প্যাক্ট আমাদের সবার ঘাড়ে তো ডেফিনিটলি পড়বে।”
এই ওটিএ ব্যবসায়ী সংবাদমাধ্যমে নিজের নাম প্রকাশ করতে চাননি।
আলাপচারিতায় তিনি বলেছেন, “ইন্ডিয়াতে এই খাতে অনলাইন-অফলাইন বলে কোনো বিভেদ নেই। তবে তারা পেইডআপ ক্যাপিটাল বাড়িয়ে দিয়েছে।”
ওটিএ কোম্পানি অনুমোদনের ক্ষেত্রে পরিশোধিত মূলধন বাড়িয়ে দেওয়া এবং বিটুবি ব্যবসাকে নিরুৎসাহিত করার নীতি গ্রহণের আহ্বান জানান তিনি।
খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দেশের ওটিএ বাজারে সবচেয়ে বেশি কর্তৃত্ব একটি এয়ারলাইন্সের মালিকানাধীন ওটিএগুলোর। তাদের আট থেকে ১০টি ওটিএ রয়েছে বলে সংশ্লিষ্টদের ভাষ্য। এর বাইরে গো জায়ান, শেয়ারট্রিপের মতো স্টার্টআপ কোম্পানি যেমন আছে, তেমনিই আকিজের মতো প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়িক গোষ্ঠীও এই খাতে বড় বিনিয়োগ করেছে।
ওটিএ বিষয়ে নীতিমালা না হলে অচিরেই আরও প্রতারণা ঘটবে মন্তব্য করে ‘আটাব’ রোববার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলেছে, “ওটিএ কর্তৃক পোর্টালের আইডি শেয়ার করে অল্প দামে অথবা অতিরিক্ত কমিশনে টিকেট বিক্রির প্রলোভন দিয়ে এভাবে ফ্লাইট এক্সপার্ট এর মত বাজার দখল করা হয়। বিক্রি ও ডিপোজিটের পরিমাণ বেশি হলে তখন তারা গ্রাহক ও এজেন্টদের টাকা নিয়ে লাপাতা হয়ে যায়।
“এর আগেও চারটি ওটিএ যাত্রীসাধারণ ও অন্যান্য ট্রাভেল এজেন্সির সঙ্গে প্রতারণা করে মোটা অঙ্কের টাকা নিয়ে উধাও হয়েছে। পোর্টাল আইডি শেয়ার ও অতিরিক্ত মূল্য ছাড় বন্ধ করা না হলে আগামীতে আরো অনেকগুলো ওটিএ বাজার থেকে উধাও হওয়ার ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে।”
নীতিমালার বিষয়ে জানতে সোমবার পর্যটন মন্ত্রণালয়ের পর্যটন অনুবিভাগের অতিরিক্ত সচিব ফাতেমা রহিম ভীনা, যুগ্মসচিব নায়লা আহমেদ ও এ কে এম মনিরুজ্জামানের সঙ্গে মোবাইলে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তারা কেউই সাড়া দেননি।