ব্রাশ ধরার পন্থাতেও পরিবর্তনের প্রয়োজন পড়তে পারে।
ছোটবেলা থেকেই অভ্যাস গড়ে উঠলেও বেশিরভাগ মানুষই দাঁত ব্রাশের সঠিক পদ্ধতি সম্পর্কে হয়ত জানেন না।
ব্রাশ করা শুধু দাঁতের রং সাদা রাখা কিংবা মুখের দুর্গন্ধ দূর করার জন্য নয়। এটি সামগ্রিক স্বাস্থ্য রক্ষার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ।
কারণ ভুলভাবে দাঁত ব্রাশ করলে দাঁতের ক্ষয়, মাড়ির রোগ এমনকি হৃদরোগের ঝুঁকি পর্যন্ত বেড়ে যেতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্রের ‘আমেরিকান ডেন্টাল অ্যাসোসিয়েশন’–এর ভোক্তা উপদেষ্টা মুখপাত্র ডা. মারিসা প্রাইস এবং ‘পিস হ্যাভেন ফ্যামিলি ডেন্টিস্ট্রি’র দন্ত চিকিৎসক ডা. হিউস্টন সিমস রিয়েলসিম্পল ডটকম-এ প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে দাঁত ব্রাশের সঠিক পদ্ধতি নিয়ে কিছু গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ দিয়েছেন।
প্রতিদিনের অভ্যাসে ছোট পরিবর্তন এনে মুখগহ্বরের স্বাস্থ্য অনেকটাই ভালো রাখা যম্ভব।
দাঁত ব্রাশ করার পরপরই কুলকুচা না করা
সাধারণত দাঁত ব্রাশ শেষে সঙ্গে সঙ্গে কুলি করে ফেলা হয়। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এটি দাঁতের জন্য ততটা উপকারী নয়।
ডা. মারিসা প্রাইস বলেন, “ফ্লোরাইড দাঁতের এনামেলকে শক্তিশালী করে তোলে। ব্রাশ করার পর অন্তত ১৫ মিনিট ফ্লোরাইডকে দাঁতে থাকতে দিলে এটি এনামেলকে অ্যাসিডজনিত ক্ষয় থেকে রক্ষা করতে পারে।”
অর্থাৎ ব্রাশ করার পরপরই কুলি না করে একটু সময় অপেক্ষা করলে দাঁত আরও বেশি উপকার পায়।
ফ্লোরাইডযুক্ত টুথপেস্ট ব্যবহার করা জরুরি
বাজারে অনেক ধরনের ফ্লোরাইডবিহীন টুথপেস্ট পাওয়া যায়। তবে বিশেষজ্ঞরা জোর দিয়ে বলছেন, ফ্লোরাইডযুক্ত টুথপেস্টই ব্যবহার করা উচিত।
ডা. প্রাইস বলেন, “যে কোনো টুথপেস্ট যেটিতে অনুমোদনের সিল রয়েছে, তাতে ফ্লোরাইড থাকবে। এটি দাঁতের এনামেল মজবুত করে।”
ফ্লোরাইড একটি প্রাকৃতিক খনিজ, যা পানি এবং বিভিন্ন খাদ্য উপাদানে স্বাভাবিকভাবেই পাওয়া যায়।
‘আমেরিকান ডেন্টাল অ্যাসোসিয়েশন’ একে ‘প্রাকৃতিক ক্যাভিটি প্রতিরোধকারী’ বলেছে।
গবেষণায় দেখা গেছে, এটি দুর্বল এনামেল পুনর্গঠন করতে পারে এবং দাঁতের প্রাথমিক ক্ষয় ঠেকাতে সহায়তা করে।
টকজাতীয় খাবার খাওয়ার পর সাথে সাথেই ব্রাশ করা যাবে না
যদি কমলার রস, টক দই, আনারস কিংবা টক-ধর্মী ক্যান্ডি গ্রহণের পরপরই দাঁত ব্রাশ করার ইচ্ছে হয়, তাহলে একটু সাবধান হওয়া দরকার।
ডা. হিউস্টন সিমস বলেন, “অ্যাসিডধর্মী খাবার দাঁতের পৃষ্ঠকে নরম করে তোলে। তখন ব্রাশ করলে দাঁতের এনামেল ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।”
তিনি পরামর্শ দেন, “অ্যাসিডযুক্ত খাবার বা পানীয় খাওয়ার পরে অন্তত ৩০ মিনিট অপেক্ষা করে দাঁত ব্রাশ করা উচিত। এ সময়ের মধ্যে মুখের লালা অ্যাসিড ধুয়ে দেয় এবং এনামেল আবার শক্ত হতে শুরু করে। সেই সঙ্গে এই সময়টায় কুলি করে মুখ ধুয়ে ফেলা ভালো।”
ব্রাশ করার সময় সোজাসুজি নয়, ৪৫ ডিগ্রি কোণে ব্রাশ ধরা
অনেকেরই দাঁত ব্রাশ করার ধরন এমন যে, সোজা দিক থেকে দাঁত ব্রাশ করা। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই অভ্যাস বদলানো জরুরি।
ডা. প্রাইস বলেন, “ব্রাশ করার সময় ব্রাশটি মাড়ির সঙ্গে ৪৫ ডিগ্রি কোণে ধরে, ছোট ছোট দাঁত-প্রস্থ গতিতে সামনে-পেছনে ঘষতে হবে। এতে দাঁত ও মাড়ির সংযোগস্থলে জমে থাকা জীবাণু এবং ময়লা পরিষ্কার হয়।”
ডা. সিমস এর ব্যাখ্যা, “এই কোণ করে ব্রাশ দাঁতের প্লাক সরাতে কার্যকর, আবার দাঁত ও মাড়ির জন্য কোমলও।“
অতিরিক্ত কিছু সচেতনতা
দিনে দুবার দাঁত ব্রাশ করা বাধ্যতামূলক। একবার সকালে এবং রাতে ঘুমানোর আগে।
নরম ব্রিসেলযুক্ত ব্রাশ ব্যবহার করতে হবে। যাতে মাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত না হয়।
প্রতি তিন মাস পরপর টুথব্রাশ পরিবর্তন করা উচিত।
ব্রাশ করার সময় জোরে ঘষা যাবে না। এটি দাঁতের ক্ষতি করে।