অ্যান্ড্রু মাউন্টব্যাটেন উইন্ডসর ব্রিটিশ সিংহাসনের উত্তরাধিকারের তালিকায় অষ্টম স্থানে আছেন। তাকে সেখান থেকে বাদ দিতে গেলে পার্লামেন্টে আইন পাস করতে হবে। কিন্তু এ প্রক্রিয়া জটিল।
সংগৃহিত
বিতর্কিত মার্কিন যৌন অপরাধী জেফরি এপস্টেইনের সঙ্গে বন্ধুত্ব নিয়ে তীব্র সমালোচনার পর যুক্তরাজ্যের রাজা তৃতীয় চার্লসের ভাই অ্যান্ড্রু ‘প্রিন্স’ উপাধি খুইয়েছেন। তারপরও ব্রিটিশ সিংহাসনের উত্তরাধিকারের তালিকা থেকে তাকে সরানোর কোনও পরিকল্পনা নেই বলে জানিয়েছে সরকার।
ব্রিটিশ সরকার শুক্রবার জানায়, অ্যান্ড্রু মাউন্টব্যাটেন উইন্ডসরকে উত্তরাধিকার থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে অপসারণের জন্য কোনও আইন পাস করার পরিকল্পনা তাদের নেই।
অ্যান্ড্রু সিংহাসনের উত্তরাধিকারের তালিকায় অষ্টম স্থানে রয়েছেন। তাকে আনুষ্ঠানিকভাবে তালিকা থেকে বাদ দিতে হলে পার্লামেন্টে একটি আইন পাসের প্রয়োজন হবে।
কিন্তু এমন একটি আইন পাস করা জটিল হবে। কারণ, এর জন্য অস্ট্রেলিয়া এবং কানাডা সহ ১৪টি কমনওয়েলথ রাষ্ট্রের সম্মতির প্রয়োজন হবে। আর আইন পাস না হলে অ্যান্ড্রু রাজপরিবারের উপাধি না থাকার পরও কৌশলগতভাবে উত্তরাধিকারের তালিকায় অস্টম স্থানেই থেকে যাবেন।
‘ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডন’-এর সরকার ও সংবিধান বিষয়ক অধ্যাপক রবার্ট হ্যাজেল বলেন, শেষবার যখন সরকার উত্তরাধিকার আইন পরিবর্তন করেছিল, তখন দুই বছর ধরে দীর্ঘ আলোচনা চলেছিল। উত্তরাধিকারের ক্ষেত্রে ছেলে সন্তানরা মেয়েদের চেয়ে বেশি প্রাধান্য পাবে এই নিয়ম বাতিল করতেই চলেছিল সেই আলোচনা।
হ্যাজেল বলেন, যুক্তরাজ্য সরকার পরিবর্তন আনার জন্য এত সময় ব্যয় করা এবং চেষ্টা চালাতে চাইবে না। কমনওয়েলথভুক্ত দেশগুলোর সরকারকেও তারা একই কাজ করতে বলবে।
উত্তরাধিকার আইন করতে গেলে আরেকটি জটিলতা আছে। তা হচ্ছে, পার্লামেন্টের মাধ্যমে পাসের পক্রিয়ায় থাকা আইনটি সংশোধন করা যেতে পারে। যেমন: কোনও একজন এমপি হয়ত প্রিন্স হ্যারিকে উত্তরাধিকার তালিকা থেকে সরানোর জন্য বিলটি সংশোধন করার চেষ্টা করতে পারেন।
“সরকার সেই জায়গায় যেতে চাইবে না,” বলেন হ্যাজেল। বাকিংহাম প্যালেসের তথ্যমতে, রাজসিংহাসনের উত্তরাধিকারের তালিকায় যারা আছেন- তারা হলেন:
১. প্রিন্স অব ওয়েলস (উইলিয়াম)
২. প্রিন্স জর্জ ওয়েলস
৩. প্রিন্সেস শার্লোট অব ওয়েলস
৪. প্রিন্স লুইস অব ওয়েলস
৫.দ্য ডিউক অব সাসেক্স (প্রিন্স হ্যারি)
৬. প্রিন্স আর্চি অব সাসেক্স
৭. প্রিন্স লিলিবেট অব সাসেক্স
৮. অ্যান্ড্রু
বৃহস্পতিবার রাতে বাকিংহাম প্যালেসের এক বিবৃতিতে বলা হয়, রাজার ভাই অ্যান্ড্রু এখন থেকে ‘অ্যান্ড্রু মাউন্টব্যাটেন উইন্ডসর’ নামে পরিচিত হবেন। অর্থাৎ ‘প্রিন্স’ এবং ‘ডিউক অফ ইয়র্ক’-এর মতো রাজকীয় খেতাব ব্যবহার করতে পারবেন না তিনি।
অবশ্য এপস্টিন-বিতর্ক দানা বেঁধে ওঠার পর চলতি মাসের শুরুর দিকে অ্যান্ড্রু নিজেই ‘ডিউক অফ ইয়র্ক’ উপাধি ব্যবহার না করার ঘোষণা দিয়েছিলেন।
কেবল রাজকীয় খেতাবই নয়, রাজ পরিবারের সদস্য হিসেবে অ্যান্ড্রুর প্রাপ্য ভাতা এবং উইন্ডসরে বরাদ্দ রাজকীয় বাসভবন ‘রয়্যাল লজ’-এ বসবাসের অধিকারও বাতিল হয়েছে।
যুক্তরাজে্যর কয়েকটি সংবাদমাধ্যমে বলা হয়েছে, ‘রয়্যাল লজ’-এ বসবাসের অধিকার হারালেও অ্যান্ড্রু তার সাবেক স্ত্রী সারা ফার্গুসন এবং তাদের দুই মেয়ের জন্য রাজপরিবারেরই অন্য একটি প্রাসাদ বরাদ্দ করেছেন রাজা চার্লস। যদিও বাকিংহামের বিবৃতিতে সে প্রসঙ্গের উল্লেখ নেই।
এপস্টেইনের কেলেঙ্কারি ফাঁস হওয়ার পর থেকে বেকায়দায় থাকা অ্যান্ড্রুকে নিয়ে নতুন করে সমালোচনা শুরু হয় চলতি মাসের শুরুতে ভার্জিনিয়া জিউফ্রের আত্মজীবনী প্রকাশিত হওয়ার পর।
এ বছরের শুরুতে আত্মহত্যা করা জিউফ্রে তার আত্মজীবনীতে লিখে গেছেন, কিশোরী বয়সে তিনবার তাকে প্রিন্স অ্যান্ড্রুর সঙ্গে যৌনকর্ম করতে হয়েছিল। অ্যান্ড্রু বরাবরই এ অভিযোগ অস্বীকার করে এসেছেন।
অ্যান্ড্রু এখন স্যান্ড্রিংহাম এস্টেটের একটি ব্যক্তিগত বাড়িতে চলে যাবেন। রাজা চার্লস ব্যক্তিগতভাবে এর খরচ দেবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।
