মেলিসার কারণে জ্যামাইকার ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ দুই হাজার ২০০ কোটি ডলার হতে পারে এবং এটি কাটিয়ে উঠতে দেশটির এক দশক বা তারও বেশি সময় লাগতে পারে বলে অনুমান অ্যাকুওয়েদারের।
সংগৃহিত
উত্তর ক্যারিবীয় অঞ্চলে তাণ্ডব চালানো ঘূর্ণিঝড় মেলিসা বুধবার কিউবার দ্বিতীয় বৃহত্তম শহরকে দুমড়ে-মুচড়ে দিয়ে, শত শত গ্রামকে বিচ্ছিন্ন করেছে।
শক্তিশালী এ ঝড়টি জ্যামাইকাকেও তছনছ করে দিয়েছে; এর প্রভাবে হাইতিতে প্রবল বর্ষণ ও বন্যায় অন্তত ২৫ জনের মৃত্যুর খবর মিলেছে বলে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।
বুধবার স্থানীয় সময় রাত ৮টার দিকে মেলিসা ক্যাটাগরি ১ মাত্রার হারিকেনের বাতাস, বৃষ্টি ও ঝড় নিয়ে উত্তরপূর্ব দিকে বাহামাস দ্বীপপুঞ্জের ভেতর দিয়ে অগ্রসর হচ্ছিল।
দেশটির সরকার আগেই প্রায় দেড় হাজার লোককে নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নিয়েছিল।
ঝড়ের তাণ্ডব থেকে বাঁচতে বাহামাস এবং কাছাকাছি টার্কস অ্যান্ড কাইকোস দ্বীপপুঞ্জের বাসিন্দারা যখন নিরাপদ আশ্রয়ে ছুটছেন, তখন প্রায় দেড় হাজার কিলোমিটার উত্তরপূর্বে অবস্থিত বারমুডার অধিবাসীরা প্রস্তুত হচ্ছেন মেলিসার জন্য। যেখানে বৃহস্পতিবার থেকে ঝড়ের প্রভাব দেখা যাবে বলে পূর্বাভাসে ধারণা দেওয়া হয়েছে।
মেলিসাকে রেকর্ড শুরু হওয়ার পর এখন পর্যন্ত ক্যারিবীয় অঞ্চলের তৃতীয় সর্বোচ্চ শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় বলছে আবহাওয়া পূর্বাভাসদাতা মার্কিন প্রতিষ্ঠান অ্যাকুওয়েদার। শ্লথগতিতে অগ্রসর হওয়ার কারণে এর প্রভাবে ধ্বংসযজ্ঞও তুলনামূলক বেশি হচ্ছে।
ঝড়টি ক্যারিবীয় অঞ্চলের সবচেয়ে জনবহুল দেশ হাইতিতে সরাসরি আঘাত হানেনি, কিন্তু এর প্রভাবে কয়েকদিন ধরে সেখানে তুমুল বৃষ্টি হয়েছে।
কর্তৃপক্ষ দেশটিতে অন্তত ২৫ জনের মৃত্যুর খবর দিয়েছে, সিংহভাগ মৃত্যুই হয়েছে রাজধানীর ৬৪ কিলোমিটার পশ্চিমে অবস্থিত উপকূলীয় শহর পেটি-গাভে নদীর পানি উপচে হওয়া বন্যায়।
অন্তত ১০ শিশুর মৃত্যু হয়েছে, ১২ জন এখনও নিখোঁজ বলে জানিয়েছে হাইতির দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সংস্থা। দেশটিতে হাজারের বেশি বাড়ি পানির নিচে তলিয়েছে, প্রায় ১২ হাজার মানুষকে জরুরি আশ্রয় কেন্দ্রগুলোতে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।
অপরাধী গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে তুমুল সংঘাতে এমনিতেই বিপর্যস্ত হাইতির ১৩ লাখ লোক আগে থেকেই ঘরছাড়া। অস্থায়ী শিবিরগুলোতে থাকা লোকজন জানিয়েছে, বন্যার কারণে তারা বসতে বা ঘুমাতে পারছেন না, সরকার ও দাতাগোষ্ঠীগুলোর ত্রাণও সময়মতো পৌঁছাচ্ছে না।
জ্যামাইকায় মেলিসার কারণে অবকাঠামোগত ক্ষয়ক্ষতি ও অর্থনৈতিক ক্ষতির পরিমাণ দুই হাজার ২০০ কোটি ডলার হতে পারে বলে ধারণা করছে অ্যাকুওয়েদার। এটি সামলে উঠতে দেশটির এক দশক বা তারও বেশি সময় লাগতে পারে বলে অনুমান তাদের।
রাজধানী কিংস্টনে তেমন বড় আকারের ক্ষয়ক্ষতি হয়নি, প্রধান বিমানবন্দরটিও বৃহস্পতিবার থেকে খোলার কথা। কিন্তু বুধবার সকাল পর্যন্তও দেশটির ৭৭ শতাংশ বিদ্যুৎবিচ্ছিন্ন ছিল।
মেলিসা মঙ্গলবার দক্ষিণপশ্চিম জ্যামাইকায় আছড়ে পড়ে, তাণ্ডব চালায় সেসব এলাকায়, যেসব এলাকা গত বছরের হারিকেন বেরিলের আঘাতে আগে থেকেই বিপর্যস্ত। বন্যার পানি কৃষির গুরুত্বপূর্ণ হাব সেইন্ট এলিজাবেথে চারজনকে ভাসিয়ে নিয়েছে বলে স্থানীয় কর্তৃপক্ষ পরে জানায়।
আকাশ থেকে তোলা ভিডিও ফুটেজে শহরটিতে ভবনের ধ্বংসাবশেষ, উড়ে যাওয়া ছাদ, ছিঁড়ে যাওয়া বিদ্যুতের তার ও জঞ্জালে পূর্ণ মাঠ দেখা গেছে।
জ্যামাইকায় আঘাত হানার সময় মেলিসা ৫ মাত্রার শক্তিধর থাকলেও কিউবায় সেটি তুলনামূলক দুর্বল হয়ে ৩ মাত্রায় নেমে আসে এবং ঘণ্টায় ১২০ মাইল বাতাস নিয়ে পাহাড়ি গুয়ামা এলাকায় আছড়ে পড়ে। গুয়ামা দ্বীপদেশটির দ্বিতীয় সর্বোচ্চ জনবহুল শহর সান্তিয়াগো দে কিউবার ৪০ কিলোমিটার পশ্চিমে অবস্থিত।
বুধবার পর্যন্ত দেশটির সান্তিয়াগো প্রদেশের অন্তত ২৪১টি গ্রাম ও প্রায় ১ লাখ ৪০ হাজার মানুষ পুরোপুরি যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন অবস্থায় আছে বলে গণমাধ্যমের প্রাথমিক প্রতিবেদনে জানা গেছে।
ঝড় আসার আগে কিউবার পূর্বাঞ্চলে কর্তৃপক্ষ প্রায় ৭ লাখ ৩৫ হাজার লোককে নিরাপত আশ্রয়ে সরিয়ে নেয়।
মেলিসায় এখন পর্যন্ত কিউবায় কারও মৃত্যুর খবর পাওয়া না গেলেও অবকাঠামোর ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রেসিডেন্ট মিগুয়েল দিয়াজ-ক্যানেল। বৃষ্টি অব্যাহত থাকতে পারে জানিয়ে তিনি সবাইকে আরও কিছুদিন সতর্ক থাকারও তাগাদা দিয়েছেন।
মেলিসার কারণে ফসলের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হতে পারে বলেও কিউবার কর্মকর্তারা আশঙ্কা করছেন।