ক্যারিবীয় ও প্রশান্ত মহাসাগরে গত দুই মাস ধরে যুক্তরাষ্ট্রের এসব হামলা এরই মধ্যে অন্তত ৬০ জনের প্রাণ কেড়ে নিয়েছে।
সংগৃহিত
পূর্ব প্রশান্ত মহাসাগরে অবৈধ মাদক পরিবহন করছে এমন সন্দেহজনক এক নৌকায় যুক্তরাষ্ট্রের হামলায় চারজন নিহত হয়েছে বলে জানিয়েছেন মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী পিট হেগসেথ।
বুধবার এক্সে দেওয়া পোস্টে তিনি এ সর্বশেষ হামলার খবর দেন বলে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।
“আজ একটু আগে, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের নির্দেশনা অনুযায়ী, যুদ্ধ মন্ত্রণালয় আরেকটি মাদক-পরিবহনকারী নৌযানে মারাত্মক তীব্র হামলা চালানো হয়েছে,” পোস্টে লিখেছেন হেগসেথ।
এর আগে সোমবারও প্রশান্ত মহাসাগরে চারটি সন্দেহজনক মাদক-পরিবহনকারী নৌযানে মার্কিন হামলায় ১৪ জন নিহত হয়েছিল বলে মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী নিশ্চিত করেছিলেন।
এসব হামলার মাধ্যমে হোয়াইট হাউস দেখাতে চাইছে তারা প্রশান্ত মহাসাগর ও ক্যারিবীয় অঞ্চল দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে মাদক পাচার ঠেকাতে তৎপর। যদিও হামলাগুলো ক্যারিবীয় অঞ্চলে উত্তেজনা ক্রমশ বাড়িয়ে তুলছে।
মার্কিন যুদ্ধমন্ত্রীর পোস্টে একটি ভিডিও-ও দেওয়া হয়েছে, যাতে দেখা যাচ্ছে, মার্কিন অস্ত্র আঘাত হানার পর একটি নৌযানে আগুন ধরে গেছে।
“মাদক-সন্ত্রাসীদের জন্য পশ্চিম গোলার্ধ আর নিরাপদ স্বর্গ নয়, যারা আমাদের তীরগুলোতে মাদক এনে মার্কিনিদের ক্ষতি করতো। যুদ্ধ মন্ত্রণালয় তাদের খোঁজে অভিযান অব্যাহত রাখবে এবং যেখানেই তারা কার্যক্রম চালাবে সেখানেই তাদের নির্মূল করবে,” লিখেছেন হেগসেথ।
তিনি জানান, আন্তর্জাতিক জলসীমায় হওয়া এ হামলার ঘটনায় কোনো মার্কিন সেনা হতাহত হয়নি।
গত দুই মাস ধরে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসন ক্যারিবীয় ও প্রশান্ত মহাসাগরে একের পর এক তাদের ভাষায় ‘মাদকবাহী নৌযানে’ হামলা চালিয়ে আসছে। নৌযানগুলো আদৌ কোনো মাদক পরিবহন করছিল কিনা, সে সম্বন্ধে এখন পর্যন্ত কোনো প্রমাণও দেয়নি তারা। কিন্তু এসব হামলা এরই মধ্যে অন্তত ৬০ জনের প্রাণ কেড়ে নিয়েছে।
সমুদ্রসীমায় মার্কিন এ হামলাগুলোকে ঘিরে ভেনেজুয়েলা ও কলম্বিয়ার সঙ্গে ওয়াশিংটনের কথার লড়াইও বাড়ছে।
বিশ্বজুড়ে অনেক বিশেষজ্ঞই এসব হামলার নিন্দা জানিয়েছেন; তারা এমন হামলা চালানোর এখতিয়ার যুক্তরাষ্ট্রের আছে কিনা সে প্রশ্নও তুলছেন।
মার্কিন কংগ্রেসের ডেমোক্র্যাট, রিপাবলিকান উভয় দলের সদস্যরাই ক্যারিবীয় ও প্রশান্ত মহাসাগর অঞ্চলে হামলায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন, এ ধরনের হামলা চালানোর নির্দেশ দেওয়ার এখতিয়ার প্রেসিডেন্টের নেই বলেও তারা অনেকেই মনে করেন।
হামলার আগে ট্রাম্প প্রশাসন কয়েক মাস ধরেই ক্যারিবীয় অঞ্চলে যুদ্ধজাহাজ, যুদ্ধবিমান, বিপুল সংখ্যক সেনা, গোয়েন্দা বিমান, বোমারু বিমান ও ড্রোন মোতায়েন করেছে। মোতায়েন হয়েছে বিশ্বের সবচেয়ে বড় যুদ্ধজাহাজ ইউএসএস গেরাল্ড আর ফোর্ডও।
ট্রাম্প অনেকদিন ধরেই ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরোকে মাদক পাচারকারী চক্রের নেতা বলে অভিযুক্ত করে আসছেন। মাদুরো এসব অস্বীকার করলেও তাকে উৎখাতেই যুক্তরাষ্ট্র ক্যারিবীয় অঞ্চলে সামরিক অবস্থান জোরদার করেছে বলে লাতিন আমেরিকাজুড়ে শঙ্কা কাজ করছে।
ভেনেজুয়েলার অ্যাটর্নি জেনারেল সম্প্রতি বিবিসিকে বলেছেন, ট্রাম্প যে ভেনেজুলেয়ার সরকারকে উৎখাতের চেষ্টাই করছেন, তা নিয়ে ‘কোনো সন্দেহ নেই’।
ওয়াশিংটন লাতিনের দেশটির সোনা, তেল ও তামার দিকে ‘লোলুপ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে’ বলেও তার অভিযোগ।