মঙ্গলবার গভীর রাতে ২০ মিনিটের ব্যবধানে সাভার মডেল থানায় মামলা দুটি করা হয় বলে জানিয়েছেন থানার ওসি মো. জুয়েল মিয়া।
সংগৃহিত
ঢাকার সাভারে সিটি ইউনিভার্সিটি ও ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীদের মধ্যে সংঘর্ষ, অগ্নিসংযোগের ঘটনায় পাল্টাপাল্টি মামলা করা হয়েছে। দুই মামলায় আসামি করা হয়েছে ১২৫০ জন শিক্ষার্থীকে।
মঙ্গলবার গভীর রাতে ২০ মিনিটের ব্যবধানে সাভার মডেল থানায় মামলা দুটি করা হয় বলে জানিয়েছেন থানার ওসি মো. জুয়েল মিয়া।
সিটি ইউনিভার্সিটিতে হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের অভিযোগে বিশ্ববিদ্যালয়টির রেজিস্ট্রার অধ্যাপক মীর আকতার হোসেন বাদী হয়ে মামলা করেন। মামলায় ফাহাদসহ হাজারের বেশি ড্যাফোডিল ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীকে আসামি করা হয়েছে।
মামলায় অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে অস্ত্রসহ বেআইনীভাবে সমবেত হয়ে প্রবেশ করে যানবাহনে ভাঙচুর-অগ্নিসংযোগসহ পেট্রোল বোমা ও হাত বোমার ব্যবহার, বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন শাখার অফিসকক্ষে ভাংচুর, দামি জিনিসপত্র লুটপাট এবং ১৫ লক্ষ টাকা চুরির অভিযোগ আনা হয়েছে এবং এসব ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়টির ক্ষতির পরিমাণ আনুমানিক ২০ কোটি টাকা বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
অপরদিকে ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীদের আটকে রেখে নির্যাতনের অভিযোগে বিশ্ববিদ্যালয়টির সহকারী প্রশাসনিক কর্মকর্তা মো. আফতাব উদ্দিন আহম্মেদ খান বাদী হয়ে মামলা করেছেন। মামলায় সিটি ইউনিভার্সিটির ২৫০ জনকে আসামি করা হয়েছে।
মামলায় অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ড্যাফোডিল শিক্ষার্থীদের ভাড়া বাসা ব্যাচেলর প্যারাডাইসে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর, ড্যাফোডিল শিক্ষার্থী আহত করাসহ হামলার পর ১১ জন ড্যাফোডিল শিক্ষার্থীকে জিম্মি করে সারারাত আটকে রেখে অস্ত্রের মুখে জোরপূর্বক বক্তব্য আদায়, অমানবিক নির্যাতন, মারধর এবং মনস্তাত্ত্বিক ভয় দেখিয়ে অসত্য ও বিভ্রান্তিকর বক্তব্য দিতে বাধ্য করার অভিযোগ আনা হয়েছে।
এর আগে সাভারের বিরুলিয়া ইউনিয়নের খাগান এলাকায় রোববার সন্ধ্যায় থুতু ফেলাকে কেন্দ্র করে ড্যাফোডিল ইউনিভার্সিটি ও সিটি ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীদের মধ্যে কথা-কাটাকাটি হয়। তার জের ধরে রাতভর সংঘর্ষে জড়ায় বিশ্ববিদ্যালয় দুটির শিক্ষার্থীরা।
এ সময় সিটি ইউনিভার্সিটিতে বেশ কয়েকটি যানবাহন পুড়িয়ে দেওয়া হয়, প্রশাসনিক ভবনসহ বিভিন্ন ভবনে ভাঙচুর করা হয়। এ ছাড়া সিটি শিক্ষার্থীদের হাতে আটক হন ড্যাফোডিলের কয়েকজন শিক্ষার্থী।
পরে দুটি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের কর্মকর্তারা আলোচনা করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন। পরদিন আটকে পড়া শিক্ষার্থীদের ড্যাফোডিল কর্তৃপক্ষের হাতে বুঝিয়ে দেয় সিটি ইউনিভার্সিটির কর্তৃপক্ষ।
সাভার মডেল থানার ওসি মো. জুয়েল মিয়া বলেন, “পাল্টাপাল্টি দুটি মামলা হয়েছে। তদন্ত করে এবিষয়ে পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।”
ঢাকা জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সাভার সার্কেল) মো. আসাদুজ্জামান বলেন, “দুটি মামলা হয়েছে। আইনি প্রক্রিয়ায় যাচ্ছি। তদন্ত সাপেক্ষে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
সিটি ইউনিভার্সিটি পরিদর্শন করেছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন
এদিকে এ সংঘাতের ঘটনা তদন্তে ও ক্ষয়ক্ষতির দৃশ্য দেখতে সিটি ইউনিভার্সিটি পরিদর্শন করেছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন।
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য ও বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের করা তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক নুরুল ইসলাম বলেন, শিক্ষার্থীদের মধ্যে যে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটেছে, এটা কেন ঘটলো তদন্ত করতে হবে। ক্ষয়ক্ষতি কতটা হয়েছে, এই বিষয়ে আমরা সীমাবদ্ধ থাকব। আইনগত বিষয় রাষ্ট্রের আইনে পরিচালিত হবে।
“মঙ্গলবার ৬ সদস্যের তদন্ত কমিটি হয়েছে, আজকে (বুধবার) আমরা প্রথম পরিদর্শন করছি। এখানে কী কী ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, সেটি পরিদর্শন করে গেলাম।”
তিনি আরও বলেন, “আমরা উভয় বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছ থেকে লিখিত আকারে বক্তব্য চাইবো, তাদের বক্তব্য পাওয়া সাপেক্ষে এবং আশপাশের যে সিসিটিভি আছে, সেগুলোর ভিডিও ফুটেজ পর্যালোচনা সাপেক্ষে একটা তদন্ত প্রতিবেদন বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের কাছে আমরা প্রস্তাব করবো।
“দ্রুততম সময়ের মধ্যে করা হবে সেটি। পুনরায় যাতে দ্রুত ক্যাম্পাসের কার্যক্রম চালু হয়, সেটিও আমরা দেখবো।”
সিটি ইউনিভার্সিটির উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. লুৎফর রহমান বলেন, “কী ধরনের ও কী পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, তারা সেটি পরিদর্শন করছেন। ভাঙচুর, লুটপাটের ঘটনা দৃশ্যমান। ইউজিসির তদন্ত চলছে, তারা যে ব্যবস্থা নেবেন, আমরা সেটি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেব।”
