নাম্বার প্লেটের বর্ণ সম্পর্কে ধারণা থাকলে ব্যবহৃত গাড়ি কিনতে সুবিধা হয়।
সংগৃহিত
গাড়ির নাম্বার প্লেট শুধু একটি সনাক্তকরণ নম্বর নয়, এটি গাড়ির ধরন ও বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে অনেক কিছুই বলে দেয়।
বাংলাদেশে গাড়ির নাম্বার প্লেটে শহরের নাম, সংখ্যা এবং একটি বাংলা বর্ণ থাকে, যা গাড়ির ক্যাটাগরি বা শ্রেণি নির্দেশ করে।
যেমন- ‘ঢাকা মেট্রো গ ১৫-৪৩২১’ দেখে আপনি বুঝতে পারবেন এটি ঢাকা মহানগরীর একটি গাড়ি, আর ‘গ’ বর্ণটি গাড়ির ধরন সম্পর্কে জানায়।
চলুন, জেনে নিই এই বাংলা বর্ণগুলো কী বোঝায় এবং কীভাবে এগুলো গাড়ির শ্রেণি নির্ধারণ করে।
নাম্বার প্লেটের ফরম্যাট
বাংলাদেশে গাড়ির নাম্বার প্লেট একটি নির্দিষ্ট ফরম্যাট অনুসরণ করে: শহরের নাম – গাড়ির ক্যাটাগরি (বাংলা বর্ণ) – গাড়ির নম্বর। যেমন- ‘ঢাকা মেট্রো ক ১১-১৬৯৭৮’-এ:
ঢাকা মেট্রো: গাড়িটি ঢাকা মহানগরীর আওতায় রেজিস্টার্ড।
ক: গাড়ির ক্যাটাগরি, যা এখানে প্রাইভেটকার নির্দেশ করে।
১১: রেজিস্ট্রেশন নম্বর।
১৬৯৭৮: গাড়ির সিরিয়াল নম্বর।
বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথোরিটি (বিআরটিএ) গাড়ির ধরন, ইঞ্জিন ক্ষমতা এবং ব্যবহারের উদ্দেশ্য অনুযায়ী এই বর্ণ নির্ধারণ করে।
মোট ১৯টি ক্যাটাগরি রয়েছে, যার মধ্যে একটি (‘য’) প্রধানমন্ত্রীর/ প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের গাড়ির জন্য সংরক্ষিত। বাকি ১৮টি জনসাধারণের গাড়ির জন্য।
বাংলা বর্ণ ও গাড়ির ক্যাটাগরি
নিচে বিআরটিএ নির্ধারিত বাংলা বর্ণ এবং তাদের দ্বারা নির্দেশিত গাড়ির ধরন দেওয়া হলো:
ক: প্রাইভেটকার (৮০০ সিসি)
খ: প্রাইভেটকার (১০০০-১৩০০ সিসি)
গ: প্রাইভেটকার (১৫০০-১৮০০ সিসি)
ঘ: জিপগাড়ি
চ: মাইক্রোবাস
ছ: ভাড়ায় চালিত মাইক্রোবাস ও লেগুনা
জ: মিনিবাস
ঝ: বড় বাস বা কোস্টার বাস
ট: বড় ট্রাক
ঠ: ডাবল কেবিন পিক-আপ
ড: মাঝারি ট্রাক
ন: ছোট পিক-আপ
প: ট্যাক্সি ক্যাব
ভ: প্রাইভেটকার (২০০০+ সিসি)
ম: পণ্য পরিবহন ও ডেলিভারির জন্য পিক-আপ
দ: প্রাইভেট/নিজস্ব সিএনজি চালিত অটোরিকশা
থ: ভাড়ায় চালিত সিএনজি চালিত অটোরিকশা
হ: মোটরবাইক (৮০-১২৫ সিসি)
ল: মোটরবাইক (১৩৫-২০০ সিসি)
ই: ভটভটি টাইপের(ছোট ও হালকা) ট্রাক
য: প্রধানমন্ত্রী/ প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের গাড়ি
এই বর্ণগুলো দেখে সহজেই বোঝা যায় গাড়িটি কোন ধরনের— ব্যক্তিগত পরিবহন, বাস, ট্রাক নাকি মোটরসাইকেল।
এছাড়া ইঞ্জিন ক্ষমতা এবং ব্যবহারের ধরন (ব্যক্তিগত বা বাণিজ্যিক) সম্পর্কেও ধারণা পাওয়া যায়।
যে কারণে এই বর্ণগুলো জানা জরুরি
নাম্বার প্লেটের বাংলা বর্ণ জানা থাকলে গাড়ির শ্রেণি, ইঞ্জিন ক্ষমতা এবং রেজিস্ট্রেইশন সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা পাওয়া যায়।
এটি গাড়ি সনাক্তকরণ, নিরাপত্তা এবং আইনি প্রক্রিয়ায় সহায়ক।
যেমন- একটি ট্যাক্সি ক্যাব (‘প’) আর প্রাইভেটকার (‘ক’, ‘খ’, ‘গ’, ‘ভ’) আলাদা করা যায়, যা যাত্রী বা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
এছাড়া ব্যবহৃত গাড়ি কেনার সময়ও গাড়ি সম্পর্কে ধারণা পেতে উপকার হয়।
আধুনিক প্রযুক্তি ও গাড়ির নিরাপত্তা
নাম্বার প্লেটের পাশাপাশি গাড়ির নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এখন ‘ভেহিকল ট্র্যাকিং সিস্টেম’ ব্যবহার হচ্ছে।
গাড়ির নাম্বার প্লেটে থাকা বাংলা বর্ণ শুধু একটি অক্ষর নয়, এটি গাড়ির পরিচয় ও বৈশিষ্ট্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ সূচক।
বিআরটিএ’র নির্ধারিত এই বর্ণগুলো জানা থাকলে রাস্তায় গাড়ি দেখেই বুঝতে পারবেন এটি কোন ধরনের যানবাহন।
তাই গাড়ি কিনতে বা রাস্তায় কোনো গাড়ি দেখলে নাম্বার প্লেটের বাংলা বর্ণের দিকে একটু নজর দিন, গাড়ির ধরন সম্পর্কে জানতে পারবেন সহজেই!
তথ্যসূত্র: ১৯৬৫০ বাংলাদেশ গেজেট, অতিরিক্ত (সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়), ডিসেম্বর ২৭ , ২০২২ পৃষ্ঠা ১২৬।
