টিনএজারদের অনলাইনে টার্গেট করে তাদেরকে এক ধরনের বিকৃত ‘গেইম বা চ্যালেঞ্জের’ ফাঁদে ফেলে ভয়ংকর কাজে বাধ্য করছে এসব অপরাধ চক্র।
সংগৃহিত
অস্ট্রেলিয়ান মেয়েরা এখন অনলাইন অপরাধ চক্রের টার্গেটে পরিণত হয়েছে। এসব চক্র তাদের শিকার বানিয়ে সহিংস কাজ করাতে বাধ্য করছে বলে সতর্ক করেছে দেশটির পুলিশ।
অস্ট্রেলিয়ান পুলিশ সতর্ক করে বলেছে, টিনএজারদের অনলাইনে টার্গেট করে তাদেরকে এক ধরনের বিকৃত ‘গেইম বা চ্যালেঞ্জের’ ফাঁদে ফেলে ভয়ংকর কাজ করতে বাধ্য করছে এসব অপরাধ চক্র, যেখানে নিজের ওপর, ভাইবোন বা পোষা প্রাণীর ওপর সহিংসতা চালাতে বলা হচ্ছে টিনএজারদের।
এ ঘটনাকে এক ধরনের ‘বিকৃত গেমিফিকেশন’ বলছে অস্ট্রেলিয়ান পুলিশ। এর মাধ্যমে টিনএজারদের অনলাইনে প্রলুব্ধ করে ভয়, চ্যালেঞ্জ বা পুরস্কারের প্রতিশ্রুতি দিয়ে এসব সহিংস কাজ করায় অপরাধীরা, যা তরুণদের অনলাইন নিরাপত্তা নিয়ে নতুন উদ্বেগ তৈরি করেছে বলে প্রতিবেদনে লিখেছে বিবিসি।
বুধবার অস্ট্রেলিয়ান ফেডারেল পুলিশ বা এএফপি-এর কমিশনার ক্রিসি ব্যারেট বলেছেন, এই ‘প্রচলিত লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতার নতুন ও উদ্বেগজনক রূপ’ ঠেকাতে সাহায্যের জন্য নতুন এক অস্ট্রেলিয়ান টাস্কফোর্স গঠন করছে তারা। এ টাস্কফোর্স কেবল অস্ট্রেলিয়ায় নয়, বিশ্বজুড়ে এ ধরনের অনলাইন অপরাধ ও সহিংসতা রোধে কাজ করবে।
অস্ট্রেলিয়ায় এরইমধ্যে তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। বিশ্বের অন্যান্য দেশে আরও নয়জনকে আটকের ঘটনা ঘটেছে। তাদের মাধ্যমে কোন ধরনের সহিংস কাজ করানো হচ্ছিল সে বিষয়ে বিস্তারিত কিছু জানায়নি পুলিশ।
তবে কমিশনার ক্রিসি ব্যারেট বলেছেন, অভিযুক্ত অপরাধীরা সহিংস চরমপন্থী মতাদর্শে বিশ্বাসী ও তারা ‘কেবল মজা করার জন্য’ মানুষকে কষ্ট দিতে বা ক্ষতি করতে চায়।
অভিযুক্তদের বয়স টিনএজারের শেষ ধাপে বা ২০-এর গোড়ার দিকে এবং বেশিরভাগই পশ্চিমা দেশ থেকে আসা। তারা ‘রোবলক্স’-এর মতো গেইমিং প্ল্যাটফর্ম বা ডিসকর্ড ও টেলিগ্রামের মতো মেসেজিং অ্যাপের মাধ্যমে প্রি-টিন মেয়েদের সঙ্গে বন্ধুত্বের ছদ্মবেশে যোগাযোগ শুরু করে ও তাদের ধীরে ধীরে সহিংস কর্মকাণ্ডের দিকে নিয়ে যায়।
এসব ছেলে ও পুরুষদের ‘ক্রাইমফ্লুয়েন্সার’ বলে বর্ণনা করেছেন কমিশনার ব্যারেট। তারা বিভিন্ন ধরনের চরম মতাদর্শের অনুসারী, যেমন নিহিলিজম, স্যাডিজম, নাজিজম ও স্যাটানিজম। এরা সাধারণত সেসব মেয়েদের টার্গেট করে, যাদের আত্মমর্যাদা কম ও মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা রয়েছে।
তিনি বলেছেন, “এসব চক্রের সংস্কৃতি অনেকটাই মাল্টিপ্লেয়ার অনলাইন গেইমিং সংস্কৃতির মতো এবং তারা বিভিন্ন অনলাইন প্ল্যাটফর্ম থেকে টার্গেটদের শিকার করে, তাদের অনুসরণ ও প্রলুব্ধ করে।”
ব্যারেট আরও বলেছেন, এসব অভিযুক্তরা হয়ত নিজেদের এ কাজের পরিণতি পুরোপুরি বুঝতে পারে না।
“এসব চক্রের ব্যক্তিরা কেবল অর্থ উপার্জন বা যৌন তৃপ্তির জন্য এমন কাজ করছে না। তারা স্রেফ মজা করার জন্য, আনন্দের জন্য বা অনলাইনে পরিচিতি বা জনপ্রিয় হওয়ার জন্য এসব করছে।”
কমিশনার ব্যারেট বলেছেন, কেবল অস্ট্রেলিয়াতেই প্রায় ৬০ জন অভিযুক্তকে চিহ্নিত করেছেন তারা। এসব চক্রকে ধরতে অন্যান্য ‘ফাইভ আইস’ দেশগুলোর সঙ্গে কাজ করছে এফপিএফ।
‘ফাইভ আইস’ দেশগুলোর মধ্যে রয়েছে অস্ট্রেলিয়া, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, নিউজিল্যান্ড ও কানাডা।
এদিকে, বিশ্বে প্রথমবারের মতো ১৬ বছরের কম বয়সী শিশুদের জন্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞার প্রস্তুতি নিচ্ছে অস্ট্রেলিয়া, যার লক্ষ্য অনলাইননির্ভর ক্ষতি কমানো। দেশটিতে এ আইন কার্যকর হবে ডিসেম্বরে।