“আপনাদের মুখে প্রশ্নটা তুলে দেওয়া হয়েছিল যে, ‘আপনারা এই কথা গত ১৫ বছর বলেননি কেন? আগের নির্বাচনগুলো কি আপনাদের এই ফর্মুলা অনুযায়ী সঠিক ছিল’?
সংগৃহিত
ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিক্রম মিশ্রির সঙ্গে বাংলাদেশি সাংবাদিকদের মতবিনিময়ে আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে অনুষ্ঠিত তিন নির্বাচনে ভারতের অবস্থান নিয়ে প্রশ্ন না করায় ‘হতাশ’ হওয়ার কথা বলেছেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন।
চলতি মাসের শুরুতে ওই মতবিনিময়ে মিশ্রির একটি বক্তব্যের সূত্র ধরে মঙ্গলবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এক প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে এই প্রতিক্রিয়া জানান তিনি।
পররাষ্ট্র উপদেষ্টার কাছে এক সাংবাদিক প্রশ্ন করেন, সম্প্রতি ভারত সফরে গিয়েছিল ডিকাবের (ডিপ্লোম্যাটিক করেসপনডেন্ট অ্যাসোসিয়েশন, বাংলাদেশ) একটি প্রতিনিধিদল। সে সময় ভারতের পররাষ্ট্রসচিব বলেছেন, শেখ হাসিনাকে ফেরত পাঠানোর বিষয়ে আইনি দিক তারা পরীক্ষা-নিরীক্ষা শুরু করেছেন। এ বিষয়ে তারা আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু জানিয়েছে কি না।
সেই প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার পাশাপাশি ওই মতবিনিময়ে ‘সুযোগ পেয়েও প্রশ্ন না করার’ অভিযোগ করেন তৌহিদ হোসেন।
উত্তরে তিনি বলেন, “আমাদের তো আইনি দিক যেটুকু আছে, সেটুকু আমরা পালন করেছি। আদালতের নির্দেশেই আমরা শেখ হাসিনাকে ফেরত চেয়েছি। আইনি বিষয়গুলো ভারত দেখতে থাকুক। ভারত কোনো জবাব দেয়নি এখন পর্যন্ত। তারা তাদের দিক থেকে দেখতে থাকুক।”
এরপর ‘না করা প্রশ্নের’ প্রসঙ্গ টেনে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, “আপনারা যারা গিয়েছিলেন তাদের ব্যাপারে আমার একটা অবজারভেশন আছে, যেহেতু আপনি প্রশ্ন তুললেন; কাজেই আমি বলছি, না হলে আমি হয়ত বলতাম না। ভারতের পররাষ্ট্রসচিব আপনাদের মুখে একটি প্রশ্ন তুলে দিয়েছিলেন, আপনারা সে প্রশ্নটা করেননি।
“ভারতের পররাষ্ট্রসচিব বলেছিলেন যে, অন্তর্ভুক্তিমূলক, ট্রান্সপারেন্ট ইত্যাদি নির্বাচন তারা চান। আপনাদের মুখে প্রশ্নটা তুলে দেওয়া হয়েছিল যে, ‘আপনারা এই কথা গত ১৫ বছর বলেননি কেন? আগের নির্বাচনগুলো কি আপনাদের এই ফর্মুলা অনুযায়ী সঠিক ছিল’?
“আপনারা কেউ এই প্রশ্ন তুললেন না, আমি বড় অবাক হয়েছি যে আপনাদের মধ্যে যথেষ্ট পুরনো জার্নালিস্টও অনেকে আছেন। আপনাদের উচিত ছিল এই সুযোগটা উনি দিয়েছেন আপনারা নিজে থেকে, যদি অ্যাম্বারাস করতে নাও চান, যখন সুযোগটা দিয়েছেন, তখন সেই প্রশ্ন আপনাদের করা উচিত ছিল, সেটা আপনারা করেননি।”
ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্রের পরবর্তী রাষ্ট্রদূত হিসাবে মনোনয়ন পাওয়া ব্রেন্ট ক্রিস্টেনসেন সেনেটের শুনানিতে বলেছেন, দায়িত্ব পেলে চীনের সঙ্গে সম্পর্ক রাখার ‘ঝুঁকি’র বিষয়ে বাংলাদেশের কাছে ‘স্পষ্ট’ করবেন তিনি।
ওই প্রসঙ্গে টেনে মঙ্গলবার এক প্রশ্নে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, “আমরা তো সবার সাথে এক ধরনের ব্যালেন্সড সম্পর্ক মেনটেইন করে চলি। আমাদের গভীর সম্পর্ক আছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে এবং অর্থনৈতিক সম্পর্ক আছে চীনের সাথে। আমি নিশ্চিন্ত যে, বাংলাদেশ যে ভারসাম্য বজায় রেখে আসছে, এটা বহাল থাকবে, এখনো আছে।
“এবং আমি বিশ্বাস করি যে ভবিষ্যতে যে সরকার আসবে, তারাও সেটা বজায় রাখবে, কারণ আমাদের প্রত্যেক দেশের সাথে আমাদের স্বার্থ আছে, সে স্বার্থ আমাদেরকে সমুন্নত রাখতে হবে।”
চীনের সঙ্গে সম্পর্ক রাখলে তৃতীয় কোনো দেশের উদ্বিগ্ন হওয়ার কারণ আছে কি-না, এমন প্রশ্নে উপদেষ্টা বলেন, “আমারতো মনে হয় না, যেহেতু একটা ভারসাম্য রক্ষা করে চলি।”
‘বড় প্রতিবেশীদের ছায়ায় পড়ে থাকায় বাংলাদেশ যথাযথ মনোযোগ পায় না’ বলেও শুনানিতে মন্তব্য করেন ব্রেন্ট ক্রিস্টেনসেন।
বাংলাদেশও এই রকম মনে করে কি-না, এমন প্রশ্নে তৌহিদ হোসেন বলেন, “দেখুন এটাতে আমরা বরং এভাবেই যদি থাকতে পারি যে, আমাদের থেকে যারা অনেক বড়, অনেক বেশি শক্তিশালী, তাদের ভিজিবিলিটি বেশি থাকবে এটা খুব স্বাভাবিক।
“আমাদের যে অবস্থান অর্থনৈতিকভাবে এবং রাজনৈতিকভাবে তার তুলনায় আমাদের ভিজিবিলিটি (কম) কি-না। আমরা কিন্তু সেটা মনে হয় না। বিভিন্ন ফোরামে যথেষ্ট ভিজিবল।”
