এ সম্পদের মধ্যে এর বাইরে গুলশান, বসুন্ধরা, নারায়ণগঞ্জ ও মুন্সিগঞ্জ এলাকায় আরও অনেক সম্পত্তি থাকার কথা বলছে সংস্থাটি।
সংগৃহিত
ঢাকার বারিধারায় ট্রিপ্লেক্স আর যুক্তরাষ্ট্রে সাড়ে ৫ লাখ ডলারের বাড়িসহ ফারইস্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স লিমিটেডের সাবেক চেয়ারম্যান মো. নজরুল ইসলামের ২০০ কোটি টাকার বেশি সম্পদের তথ্য পেয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
তার বিপুল এ সম্পদের মধ্যে এর বাইরে গুলশান, বসুন্ধরা, নারায়ণগঞ্জ ও মুন্সিগঞ্জ এলাকায় আরও অনেক সম্পত্তি থাকার কথা বলছে সংস্থাটি।
দুর্নীতির মামলায় গত বৃহস্পতিবার গ্রেপ্তারের পর তাকে জিজ্ঞাসাবাদের ভিত্তিতে এসব তথ্য পাওয়ার কথা বিজ্ঞপ্তি দিয়ে বলেছে দুদক।
এদিকে সোমবার নজরুল ইসলাম ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম (সিএমএম) আদালতে ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেন।
তবে পরে তার জবানবন্দি লিখে দিলেও শেষ মুহূর্তে তিনি সই করতে অস্বীকার করেন বলে দুদকের জনসংযোগ কর্মকর্তা ও উপপরিচালক মো. আকতারুল ইসলাম জানিয়েছেন।
অপরদিকে বর্তমানে পাঁচ দিনের রিমান্ডে থাকার সময় জিজ্ঞাসাবাদে ফারইস্ট লাইফের সাবেক এই চেয়ারম্যানের বিপুল সম্পদের তথ্য উদ্ঘাটিত হয়েছে বলে সংবাদমাধ্যমকে তথ্য দিয়েছে দুদক।
সোমবার পাঠানো এসব তথ্যে বলা হয়, দুদকের জিজ্ঞাসাবাদে নজরুল ইসলাম জানিয়েছেন, তিনি বড় অঙ্কের অর্থ ব্যয় করে ঢাকার অভিজাত অন্তত ১০টি ক্লাবের সদস্যপদ নিয়েছেন, যার মধ্যে রয়েছে বোট ক্লাবও।
গত বৃহস্পতিবার (২৩ অক্টোবর) ঢাকার নিম্ন আদালতে পাসপোর্ট সংগ্রহ করতে গিয়ে দুর্নীতির মামলায় গ্রেপ্তার হন নজরুল।
এরপর মামলার তদন্ত কর্মকর্তা দুদকের উপপরিচালক মো. মশিউর রহমান সাত দিনের রিমান্ড আবেদন করলে আদালত পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে।
এর আগে গত ৩১ জুলাই দুদকের উপপরিচালক সৈয়দ আতাউল কবির বাদী হয়ে নজরুল ইসলামসহ ২৪ জনের বিরুদ্ধে ‘দুর্নীতির’ মাধ্যমে ২৮ কোটি টাকা ‘আত্মসাতের’ মাধ্যমে ভাগ বাটোয়ারা করে নেওয়ার অভিযোগে মামলা করেন।
এর আগে ২০২২ সালের সেপ্টেম্বরের শুরুর দিকে গ্রাহকের ৮০০ কোটি টাকার বেশি আত্মসাতের অভিযোগে নজরুল ইসলামসহ আরও কয়েকজনের বিরুদ্ধে শাহবাগ থানায় মামলা করেন জসীম উদ্দিন নামের এক ব্যক্তি। পরে নজরুলকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। ওই মামলায় দুই দফায় রিমান্ডেও নেওয়া হয়েছিল।
সবশেষ ২৩ অক্টোবর গ্রেপ্তারের পর রিমান্ডে থাকার সময় তাকে জিজ্ঞাসাবাদের তথ্যের বিষয়ে দুদকের ঊর্ধ্বতন একজন কর্মকর্তা বলেন, রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদের সময় নজরুল ইসলামের দুটি আইফোন জব্দ করা হয়, যেখানে তার বিদেশে সম্পত্তি কেনাসহ মোট ২০০ কোটি টাকার বেশি সম্পদের তথ্য পাওয়া গেছে।
জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া তথ্যের বরাতে সংবাদমাধ্যমের কাছে দুদকের পাঠানো তথ্যে বলা হয়, নজরুল স্বীকার করেছেন, তিনি ও তার পুরো পরিবার যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক। ২০১৫ সালে তিনি দেশটির ফ্লোরিডার ওয়েলিংটনে সাড়ে ৫ লাখ ডলারে একটি বাড়ি কিনেছেন।
জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে দুদক বলছে, ২০১৪ সালে ফারইস্ট লাইফ ইন্স্যুরেন্সের নামে ৩৬ তোপখানা রোডে ২০৭ কোটি টাকায় একটি জমি কেনার সময় ‘২৮ কোটি টাকার ভাগ-বাটোয়ারা’ হয়, যার মধ্যে নজরুল ইসলাম ৬ কোটি টাকা পান। এরপর জমি বিক্রেতা আজহার হোসেন খানের সঙ্গে যৌথ ব্যবসা শুরু করেন এবং তার কাছ থেকে নিজের হিসাবে ১০ কোটি টাকা ও স্ত্রীর হিসাবে ৯ কোটি ৫০ লাখ টাকা স্থানান্তর করেন।
এসব অর্থ ‘বিদেশে পাচার করেন’ বলে অভিযোগ থাকার বলেছে সংস্থাটি।
ফারইস্ট ইন্স্যুরেন্সের প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক এম এ খালেকের তার নিজের ও পরিচিতদের নামে ১১টি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে ৫৯১ কোটি টাকা ‘ঋণের নামে আত্মসাৎ’ করার অভিযোগ তুলে ধরে দুদক দাবি করেছে, ওই অর্থ আত্মসাতে সাবেক চেয়ারম্যান নজরুল ইসলামসহ অন্যরা জড়িত ছিলেন বলে জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করেছেন নজরুল।
তিনি বলেছেন, এম এ খালেক, তার ছেলে শাহরিয়ার খালেদ, প্রাইম ফাইন্যান্সিয়াল সিকিউরিটিজ লিমিটেড, পিএফআই সিকিউরিটিজ, প্রাইমেশিয়া ইউনিভার্সিটি, প্রাইমেশিয়া ফাউন্ডেশনসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান দেখিয়ে এসব ঋণ আত্মসাৎ করা হয়।
জিজ্ঞাসাবাদে নজরুল বলেছেন, তিনি বর্তমানে ঢাকা বোট ক্লাব, ঢাকা ক্লাব, গুলশান ক্লাবসহ ১৪টি ক্লাবের সদস্য। ২০১৬ সালে ১০ লাখ টাকা দিয়ে এক ক্লাবের সদস্যপদ নেন এবং বারিধারা ক্লাবের সদস্য হন ২ লাখ টাকায়।
জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া তথ্যের বরাতে দুদক বলেছে, বারিধারায় তার ৮ কাঠা জমির উপর ‘পুতুল হাউজ’ নামে একটি ট্রিপ্লেক্স বাড়ি আছে, যা বিদেশিদের ভাড়া দেওয়া হয়। এছাড়া গুলশান-১ এ ভাসাবির পেছনে ৩,২০০ বর্গফুটের একটি ফ্ল্যাট এবং বারিধারার ডিওএইচএস এলাকায় ২,৮৪১ বর্গফুটের আরেকটি ফ্ল্যাট রয়েছে। গুলশান-২ এ ৫ কাঠা জমির ওপর ২ তলা অফিস ভবনও রয়েছে।
এছাড়া ভূলতা গাউছিয়া, নারায়ণগঞ্জে নজরুল ইসলাম, এম এ খালেক ও আজহার হোসেন খানের যৌথ মালিকানায় ‘প্রাইম শপ’ নামে ১৮ কোটি টাকার সম্পদ রয়েছে।
মাতুয়াইল ও যাত্রাবাড়িতে তার আরও ২ কোটি টাকার সম্পদ রয়েছে, যা বর্তমানে তার দখলে নেই। নিকুঞ্জে ‘পুতুল হাউজ’ নামে তিন কাঠার ওপর ডুপ্লেক্স হাউজ আছে।
সিরাজদিখান, মুন্সিগঞ্জে আলু কেনা ও উৎপাদনের জন্যও জমি কিনেছেন তিনি। বসুন্ধরার ‘জি’ ব্লকে ৩,৬০০ বর্গফুটের ফ্ল্যাটসহ বিভিন্ন সম্পদ আয়কর নথিতে দেখানো আছে।
এছাড়া তার নামে ফারইস্ট লাইফ, ফারইস্ট ইসলামী সিকিউরিটিজ, ফারইস্ট ইসলামী প্রোপার্টিজ, সিভিসি ফাইন্যান্স, ফারইস্ট ফাইন্যান্সসহ একাধিক প্রতিষ্ঠানে শেয়ার রয়েছে, যার মূল্য ১৫ থেকে ২০ কোটি টাকার মধ্যে বলে জিজ্ঞাসাবাদে ধারণা দিয়েছেন তিনি।
নজরুল ইসলামের বিরুদ্ধে গত ৩১ জুলাই করা মামলার অভিযোগে বলা হয়, আসামিরা ঢাকার তোপখানা রোডের একটি জমি ও স্থাপনা অনিয়ম করে ২০৭ কোটি ৩৬ লাখ টাকায় কেনাবেচা করেন। এই লেনদেনের মাধ্যমে ফারইস্ট ইসলামী লাইফের ৪৫ কোটি টাকা আত্মসাৎ করে নজরুল ইসলাম, পরিচালক এম এ খালেক এবং তাদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বিভিন্ন ব্যাংক হিসাবে স্থানান্তর করেন।
