বিভাগগুলো হচ্ছে উন্নয়ন অধ্যয়ন, ভূতত্ত্ব, ভূগোল, ইতিহাস, সামাজিক নৃবিজ্ঞান, পরিসংখ্যান, লজিস্টিকস ও সরবরাহ চেইন বিশ্লেষণ, মানব উন্নয়ন ও পরিবারবিদ্যা এবং গার্হস্থ্য অর্থনীতি।
সংগৃহিত
ব্যাচেলর অব স্টাডিজের (বিএস) বিভিন্ন কোর্সে শিক্ষার্থী ভর্তির হার কমে যাওয়ায় পাকিস্তানের খাইবার পাখতুনখোয়ার পেশোয়ার বিশ্ববিদ্যালয় চলতি শরৎকালীন সেমিস্টার থেকে ৯টি বিভাগ বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
এ বিভাগগুলো হচ্ছে উন্নয়ন অধ্যয়ন, ভূতত্ত্ব, ভূগোল, ইতিহাস, সামাজিক নৃবিজ্ঞান, পরিসংখ্যান, লজিস্টিকস ও সরবরাহ চেইন বিশ্লেষণ, মানব উন্নয়ন ও পরিবারবিদ্যা এবং গার্হস্থ্য অর্থনীতি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের নথির বরাত দিয়ে ডন জানিয়েছে, এবার মাত্র একজন মানব উন্নয়ন ও পরিবারবিদ্যা সংক্রান্ত বিএস প্রোগ্রামে ভর্তি হতে আবেদন করেছে, দুইজন করে আবেদন করেছে উন্নয়ন অধ্যয়ন, লজিস্টিকস ও সরবরাহ চেইন বিশ্লেষণ এবং গার্হস্থ্য অর্থনীতিতে, তিনজন করে ইতিহাস ও ভূগোলে, সামাজিক নৃবিজ্ঞানে ৫ জন, পরিসংখ্যানে ৭ আর ভূগোলে ১৪ জন।
এর প্রেক্ষিতে পেশোয়ার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ যে ঘোষণা দিয়েছে তাতে বলা হয়েছে, “বিশবিদ্যালয়ের নীতিমালা অনুযায়ী, যদি কোনো কোর্সে ভর্তি শিক্ষার্থীর সংখ্যা ১৫ জনের কম হয় তাহলে ওই ভর্তি বাতিল বলে গণ্য হবে।
“ওই নীতিমালা অনুযায়ী ভর্তি শিক্ষার্থী সংখ্যা নির্ধারিত মানদণ্ডের নিচে থাকায় ৯টি বিভাগ আর চালু রাখা হবে না।”
তারা এই বিভাগগুলোতে ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীদের বিভাগ বদলেরও পরামর্শ দিয়েছে।
পেশোয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক সূত্র জানিয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয়টিতে ৬৯টি বিভাগ রয়েছে, এবং প্রতিটি বিভাগ ৪ বছরের বিএস কোর্সে ৬০ জন করে শিক্ষার্থী ভর্তি করে।
কিন্তু এবার গণিত, রসায়ন, সামাজিক কাজ, উর্দু, পশতু, সাংবাদিকতা ও গণযোগাযোগ, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও নগর পরিকল্পনার মতো অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিভাগেও কম শিক্ষার্থী ভর্তি হয়েছে।
পর্যাপ্ত শিক্ষার্থী পেয়েছে ওষুধশাস্ত্র, ইংরেজি, মনোবিজ্ঞান, কম্পিউটার বিজ্ঞান, আইন, পরিবেশ বিজ্ঞান, পদার্থ, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক, রাষ্ট্রবিজ্ঞান, শান্তি ও সংঘর্ষ অধ্যয়ন, অপরাধবিদ্যা ও ব্যবস্থাপনা বিজ্ঞান।
বিভিন্ন বিভাগে শিক্ষার্থী ভর্তি কম হওয়ার পেছনে অনেক কারণ আছে বলে মনে করছেন পেশোয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের মুখপাত্র। বিভাগ বা বিষয় বেছে নেওয়ার ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীরা পর্যাপ্ত নির্দেশনা ও পরামর্শ পায় না বলেই তিনি মনে করেন।
“সমন্বিত স্বাস্থ্য বিজ্ঞান ও কম্পিউটার বিজ্ঞানের মতো সম্প্রতি চালু হওয়া বিষয়ের প্রতি শিক্ষার্থীদের আগ্রহ বেশি থাকে, কারণ এসব বিষয়ে পড়লে পাকিস্তানের পাশাপাশি বিদেশেও ভালো সুযোগ থাকে। বাজারে গুরুত্ব কম থাকায় বিভিন্ন ভাষাভিত্তিক বিষয়ের প্রতি আকর্ষণ কমে গেছে। শিক্ষার্থীরা বাজারে কাটতি আছে এমন বিষয় বেছে নিচ্ছে,” বলেছেন তিনি।
পাকিস্তানি শিক্ষাবিদ ইউসুফ আলি পেশোয়ারের পাশাপাশি মোটাদাগে বিএস কোর্সেই শিক্ষার্থী কমে যাওয়ার জন্য অনেকগুলো কারণকে দায়ী করছেন।
বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর পাশাপাশি উচ্চশিক্ষা সংক্রান্ত প্রশাসনিক দপ্তর এমন একটি তথ্যকেন্দ্র বানাতে পারেনি, যেখান থেকে নীতি নির্ধারণ ও পরিকল্পনার জন্য প্রকৃত ও বিশ্বাসযোগ্য তথ্য নেওয়া যেতে পারে, বলেছেন তিনি।
এরপরও উচ্চশিক্ষা দপ্তর থেকে যে তথ্য মিলছে তাতে দেখা যাচ্ছে, দেশটির বিশ্ববিদ্যালয়গুলো এবং সংশ্লিষ্ট কলেজগুলোতে ২০২২ সালে বিএস, এমফিল ও পিএইচডি কোর্সে ভর্তি হয়েছিল এক লাখ ৬০ হাজার শিক্ষার্থী, এ বছর সেটি কমে দাঁড়িয়েছে এক লাখ ৫৫ হাজারে।
এতেই বোঝা যাচ্ছে, উচ্চশিক্ষায় ভর্তির প্রবণতা নিম্নমুখী।
ইউসুফ বলছেন, কোনো ধরনের পরিকল্পনা ছাড়াই একসঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজ পর্যায়ে বিএস কোর্স চালু করে দেওয়াই শিক্ষার্থী ভর্তি কমে যাওয়ার মূল কারণ।
“বিশ্ববিদ্যালয় এবং কলেজ উভয়েই একই কোর্স দিচ্ছে। পেশোয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ে গড়ে প্রতি কোর্সে সেমিস্টারে লাগছে ৭৫ হাজার রুপি, বছরে দেড় লাখ; একই কোর্স কলেজ পর্যায়ে পড়লে সেমিস্টারে দিতে হচ্ছে ৭ হাজার রুপি, বছরে ১৪ হাজার,” বলেছেন তিনি।
তীব্র আর্থিক সঙ্কটে থাকা পেশোয়ার বিশ্ববিদ্যালয় নিয়মিতই তাদের ফি বাড়াচ্ছে, যা বহন করা বেশিরভাগ শিক্ষার্থীর জন্য কষ্টসাধ্য হয়ে উঠছে।
“বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে কম শিক্ষার্থী ভর্তির পেছনে প্রদেশে হু হু করে উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান বেড়ে যাওয়ার ভূমিকাও কম নয়। এখনই এই প্রদেশে ৩৪টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়, ১০টি প্রাইভেট। পাবলিক, প্রাইভেট মিলিয়ে কলেজের সংখ্যাও এক হাজারের কাছাকাছি, এর মধ্যে কমার্স ও ম্যানেজমেন্ট কলেজও রয়েছে,” বলেছেন ইউসুফ।
তার মতে, পরিবর্তিত পরিস্থিতি ও বাজারের কারণে অনেক বিভাগ প্রাসঙ্গিকতা হারাচ্ছে। চাকরি ক্ষেত্রে, বাজারে সেগুলোর গুরুত্ব হারিয়ে গেছে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও বিভাগগুলোর ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ থাকারাও বর্তমান বাস্তবতার সঙ্গে মিলিয়ে কোর্সগুলোতে নতুনত্ব আনার ক্ষেত্রে চরমভাবে ব্যর্থ হয়েছে।
“কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে নানান গুরুতর সমস্যার মুখোমুখি এই বিএস কোর্সগুলোর ভবিষ্যৎ নিয়ে সরকারকে ভাবতে হবে,” বলেছেন তিনি।
