“গোপালগঞ্জ পৌরসভার টি-শার্ট পরা কর্মীরা অন্তত চার দিন নির্মমভাবে কুকুর হত্যা করেছে।”
সংগৃহিত
গোপালগঞ্জ পৌরসভার বিভিন্ন এলাকার সড়কের বেওয়ারিশ কুকুর হত্যা করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছে এলাকাবাসী।
তাদের ভাষ্য, ভোরে ও রাতে পৌরসভার লোকজন ‘জাল দিয়ে’ ধরার পর ‘বিষক্ত ইনজকেশন’ পুশ করে কুকুর হত্যা করছে। পরে ছোট ময়লার গাড়িতে করে মৃত কুকুর নিয়ে যায়।
গোপালগঞ্জ পৌর কর্তৃপক্ষ এ অভিযোগ অস্বীকার করে বলছে, এ ঘটনায় পৌরসভার কোনো সম্পৃক্ততা নেই। এ বিষয়ে অবগত নন বলে জানিয়েছেন জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তারাও।
তবে জেলা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর বলছে, আইন করে কুকুর নিধন বন্ধ করা হয়েছে; এমন কাজ দণ্ডনীয় অপরাধ।
গোপালগঞ্জ পৌরসভার নবীণবাগ এলাকার বাসিন্দা রবিউল ইসলাম বলেন, “গত ২০ অক্টোবর ভোরে ঢাকা যাওয়ার উদ্দেশ্যে বাসা থেকে বের হই। পথে গোপালগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালের সামনে দেখি, পৌরসভার লোকজন নেট দিয়ে কুকুর ধরছে।
“পরে ইনজকেশন পুশ করে মেরে ফেলছে। এরপর মৃত কুকুরগুলো পৌরসভার ময়লার গাড়িতে করে নিয়ে যাওয়া হয়।”
গোপালগঞ্জ সদর এলাকার থানাপাড়া এলাকার প্রাণী প্রেমী ফ্লোরা হোসেন বলেন, “গোপালগঞ্জ পৌরসভার টি-শার্ট পরা কর্মীরা অন্তত চার দিন নির্মমভাবে কুকুর হত্যা করেছে। অ্যানিমেল লাভার সোসাইটি বা সংগঠনগুলোকে অবহিত না করে তারা এটি করেছে। কুকুর বন্ধ্যাকরণ করার দায়িত্ব পৌরসভার। কিন্তু তারা এটি করেনি।”
“নির্মম ভাবে কুকুর নিধনের ঘটনা আমাকে মর্মাহত করেছে। বিষয়টি আমি এনিমেল লাভারসহ বিভিন্ন বড় বড় ফেসবুক গ্রুপ ও সংগঠনকে অবহিত করেছি।”
তিনি বলেন, “এখন পৌরসভা কর্তৃপক্ষ কুকুর হত্যার বিষয়টি অস্বীকার করেছে। আমাদের কাছে যথেষ্ট প্রমাণ রয়েছে। তাই কুকুর হত্যার জন্য তাদের ক্ষমা চাইতে হবে।”
এসব অভিযোগ অস্বীকার করে গোপালগঞ্জ পৌরসভার প্রশাসক বশ্বজিৎ কুমার পাল বলেন, “কুকুর নিধন বিষয়ে পৌরসভা এখন পর্যন্ত কোন উদ্যোগ নেয়নি। তবে পৌরবাসীর পক্ষ থেকে বিভিন্ন সময় অভিযোগ এসেছে যে, শহরে বেওয়ারিশ কুকুরের সংখ্যা বেড়ে গেছে। এ বিষয়ে জেলা আইনশৃঙ্খলা কমটির সভায় একাধিকবার আলোচনা হয়েছে।
“আমরা বিষয়টি পর্যবক্ষেণ করছি, কিভাবে জনভোগান্তি কমিয়ে এদের অন্য জায়গায় স্থানান্তর করা যায়। এখন পর্যন্ত এ ধরনের কোন কার্যক্রম হাতে নেওয়া হয়নি।”
তিনি বলেন, “আমরা জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা সঙ্গে আলোচনা করছি। কোনো ব্যবস্থা নিলে তা অবশ্যই আইনগতভাবে করা হবে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যে ছবিগুলো ছড়ানো হয়েছে সেগুলো যাচাই করা হচ্ছে।
“এগুলো বিভ্রান্তিকর কি-না বা উদ্দশ্যেপ্রণোদতি কি না, সেটাও দেখা হচ্ছে। বিষয়টি খতিয়ে দেখতে তদন্ত কমিটি গঠনের পরিকল্পনা রয়েছে।”
গোপালগঞ্জ জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা গোবন্দি চন্দ্র সরদার বলেন, “আইন করে কুকুর নিধন সর্ম্পূণ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। শুধু কুকুর নয়, কোনো প্রাণি হত্যা করাও আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ।
“কোনো সংস্থা যদি এমন কাজ করে থাকে সেটিও আইনের আওতায় পড়বে। প্রাণিসম্পদ বিভাগ কখনোই এ ধরনের কর্মকাণ্ডকে সর্মথন করে না।”
তিনি বলেন, “শুধু বিশেষ ক্ষত্রে, যেমন কোন কুকুর জলাতঙ্কে আক্রান্ত হয়ে মানুষ বা অন্য প্রাণির জন্য হুমকি হয়ে উঠে, তখন প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে।
“সাধারণত জলাতঙ্ক রোধে আমরা নিয়মিত কুকুরকে ভ্যাকসিন দেওয়ার কাজ করে যাচ্ছি।”
