এনসিপির প্রতীক বিষয়ে ইসি সচিব বলেন, “এখনও কমিশন আগের অবস্থানই আছে।”
সংগৃহিত
ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনের জন্য ৪২ হাজার ৭৬১টি ভোটকেন্দ্র নির্ধারণ করার কথা জানিয়েছে নির্বাচন কমিশন ।
সোমবার ঢাকার আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে ইসি সচিব আখতার আহমেদ বলেছেন, “আমরা চূড়ান্তভাবে ভোটকেন্দ্রের তালিকা প্রস্তুত করেছি। মোট ৬৪টি জেলার ৩০০টি সংসদীয় আসনে কেন্দ্রের সংখ্যা ৪২,৭৬১।
“কক্ষের হিসাবে পুরুষদের জন্য ১ লাখ ১৫ হাজার ১৩৭ এবং মহিলাদের জন্য ১ লাখ ২৯ হাজার ৬০২ কক্ষ নির্ধারণ করা হয়েছে। অর্থাৎ মোট কক্ষের সংখ্যা দাঁড়াচ্ছে ২ লাখ ৪৪ হাজার ৬৪৯।”
প্রাথমিকভাবে ১৪টি অস্থায়ী ভোটকেন্দ্র নির্ধারণ করা হয়েছে জানিয়েছে তিনি বলেন, “একটি ভোটকেন্দ্রে গড়ে ৩ হাজার ভোটার থাকবে। এটিকে ‘ক্যাচমেন্ট এরিয়া’ হিসেবে ধরা হয়েছে। ভোট ব্যবস্থাপনায় পরবর্তীতে প্রয়োজনে এই সংখ্যা সামঞ্জস্য করা হবে।”
গত ১০ সেপ্টেম্বর খসড়া ভোটকেন্দ্রের তালিকা প্রকাশ করা হয়। এরপর ২৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত খসড়া নিয়ে দাবি বা আপত্তি গ্রহণ গ্রহণ করা হয়, যা নিষ্পত্তি করা হয় ১২ অক্টোবর। এরপর ভোটকেন্দ্রের সম্ভাব্য তালিকা ২০ অক্টোবর চূড়ান্ত করা হয়।
গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ, ১৯৭২ এর অনুচ্ছেদ ৮ (১) ও (২) অনুযায়ী ভোটকেন্দ্রের তালিকা সংরক্ষণ ও চূড়ান্ত করে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ২৫ দিন আগে গেজেট প্রকাশ করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে।
‘দল ও পর্যবেক্ষক সংস্থা নিবন্ধন হলেই প্রস্তুতি সম্পন্ন’
সেপ্টেম্বরে রাজনৈতিক দল নিবন্ধন এবং মধ্য অক্টোবরে পর্যবেক্ষক সংস্থার নিবন্ধন শেষ করার লক্ষ্য ঠিক করেছিল ইসি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ইসি সচিব আখতার আহমেদ বলেন, “কর্মপরিকল্পনা অনুযায়ী, দুটি বিষয়ে কিছুটা পিছিয়ে আছে কমিশন।
“একটি হলো রাজনৈতিক দল নিবন্ধন, অন্যটি পর্যবেক্ষক সংস্থা নিবন্ধন। ২২টি রাজনৈতিক দলকে আমরা প্রাথমিকভাবে বিবেচনাযোগ্য মনে করেছি। এদের বিষয়ে মাঠপর্যায়ে অতিরিক্ত কিছু তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে। ইনশাআল্লাহ, এই সপ্তাহের মধ্যেই তা সম্পন্ন করতে পারব।”
এক প্রশ্নের জবাবে ইসি সচিব বলেন, “হ্যাঁ, আমরা সামান্য পিছিয়ে আছি, তবে দুশ্চিন্তার কিছু নেই।
“বাকি সময়ের মধ্যেই সবকিছু কাভার করা সম্ভব হবে।”
পর্যবেক্ষক সংস্থার বিষয়ে তিনি বলেন, “দেশীয় পর্যবেক্ষক সংস্থাগুলোর পর্যালোচনা চলছে। কিছু প্রতিষ্ঠানের অযোগ্যতার বিষয় নিয়ে সংবাদ প্রকাশ করা হয়েছে, সেগুলো আমরা পর্যালোচনা করব।
“আশা করছি, এই সপ্তাহের মধ্যেই পর্যবেক্ষক সংস্থার নিবন্ধনও শেষ হবে।”
নির্বাচন প্রস্তুতি কতটা এগিয়েছে, এমন প্রশ্নের জবাবে ইসি সচিব আখতার বলেন, “যদি শতকরা হিসেবে বলেন, তাহলে বলতে পারি আমরা এখন ৯০ থেকে ৯৫ শতাংশ প্রস্তুত।
“রাজনৈতিক দল ও পর্যবেক্ষক সংস্থার নিবন্ধন এই সপ্তাহে সম্পন্ন হলে প্রস্তুতি শতভাগে পৌঁছাবে।”
জোটগত ভোটের প্রতীক প্রসঙ্গ
জোটে ভোট করলেও নিজ দলের প্রতীকে নির্বাচন করতে হবে—এমন বিধান সংবলিত গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) সংশোধন অধ্যাদেশে বৃহস্পতিবার চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে উপদেষ্টা পরিষদ।
তবে এ বিধান নিয়ে আপত্তি তুলে জোটভুক্ত যেকোনো দলের প্রতীকে ভোট করার বিদ্যমান নিয়ম বহাল রাখার দাবি তুলেছে বিএনপি।
এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে ইসি সচিব আখতার আহমেদ বলেন, “বর্তমানে বিষয়টি আইন মন্ত্রণালয়ে রয়েছে, কমিশন পরবর্তীতে সিদ্ধান্ত নেবে।”
তিনি বলেন, গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ সংশোধন প্রশ্নে বিভিন্ন প্রস্তাব পাঁচটি দৃষ্টিকোণ থেকে বিবেচনা করেছে ইসি।
“যেগুলো স্বচ্ছ ও গ্রহণযোগ্য মনে হয়েছে, যেগুলো ভাষাগত বা সংখ্যাগতভাবে সামান্য সংশোধনযোগ্য, যেগুলো রাজনৈতিক ঐক্যমত ছাড়া সম্ভব নয়, যেগুলো বিদ্যমান আইনে পর্যাপ্তভাবে নির্ধারিত এবং যেগুলো কমিশনের নিজস্ব বিবেচনায় সংশোধনযোগ্য মনে হয়েছে।
এই পাঁচটি দিক বিবেচনা করেই সংশোধন প্রস্তাবনাটি উপদেষ্টা পরিষদে পাঠানো হয়েছে এবং তারা নীতিগত সম্মতি দিয়েছেন।”
এক প্রশ্নের জবাবে আখতার আহমেদ বলেন, “আরপিও সংশোধনের আগে ঐকমত্য কমিশন দীর্ঘ সময় রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করেছে।
“এখন পর্যন্ত কোনো সাংঘর্ষিক বিষয় দেখা যায়নি। তাই অনুমান নির্ভর মন্তব্য করা ঠিক হবে না।”
‘এনসিপির প্রতীক বিষয়ে ইসি আগের অবস্থানেই’
এনসিপি নির্বাচনি প্রতীক হিসেবে কাঙ্ক্ষিত ‘শাপলা’ না পেলে নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে আন্দোলনে নামবে বলে রোববার হুঁশিয়ারি দেন দলটির উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম।
জুলাই অভ্যুত্থানে নেতত্বদানকারী তরুণদের দলটির প্রতীকের বিষয়ে জানতে চাইলে ইসি সচিব আখতার আহমেদ বলেন, “কমিশন ইতোমধ্যেই তাদের অবস্থান জানিয়েছে। এখন পর্যন্ত এ বিষয়ে কোনো বিকল্প প্রস্তাব কমিশনের কাছে আসেনি।
“এখনও কমিশন আগের অবস্থানই আছে।”
কমিশন নিজস্ব বিবেচনা অনুযায়ী দলটিকে প্রতীক বরাদ্দ দিয়ে চলতি সপ্তাহেই আদেশ জারি করবে বলেও জানান তিনি।
নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠনে এনসিপির দাবির বিষয়ে আখতার আহমেদ বলেন, “এই বিষয়ে আমার কোনো মন্তব্য নেই। রাজনৈতিক বিষয় কমিশনের এখতিয়ারের বাইরে।”
তিনি বলেন, “আমরা আমাদের সাংবিধানিক দায়িত্বের জায়গা থেকে কাজ করছি। সবাই সহযোগিতা করলে নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই নির্বাচন সফলভাবে সম্পন্ন করা সম্ভব হবে।”
গণভোট প্রসঙ্গ
নির্বাচন কমিশন যখন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন আয়োজনের জন্য সব ধরনের প্রস্তুতি এগিয়ে নিচ্ছে, তখন জুলাই সনদ বাস্তবায়নের জন্য গণভোট আয়োজনের মতামত পেয়েছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন।
এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে ইসি সচিব আখতার আহমেদ বলেন, “নির্বাচন কমিশনে এখনো পর্যন্ত গণভোট সম্পর্কিত কোনো তথ্য আসেনি। তাই অনুমানভিত্তিক কোনো মন্তব্য করা উচিত নয়।
“যে বিষয়টি কমিশনে আনুষ্ঠানিকভাবে আসেনি, সে বিষয়ে আমি কিছু বলতে পারব না।”
ককটেল নিক্ষেপ ‘অনাকাঙ্ক্ষিত’
নির্বাচন ভবনের সামনে শনিবার রাতে ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনার বিষয়ে আখতার আহমেদ বলেন, “এটা নিঃসন্দেহে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা। পুলিশ তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নিয়েছে এবং সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে আটক করেছে।
“পুলিশ মামলা করেছে এবং তদন্ত করছে। যার কাজ, সেই করবে। কমিশন তার দায়িত্বেই মনোযোগ দিচ্ছে।”
