ভোটের ৬৩ দশমিক ৪ শতাংশ তার বাক্সে গেছে, প্রতিদ্বন্দ্বী হিদার হামফ্রিস পেয়েছেন মাত্র ২৯ দশমিক ৫ শতাংশ।
সংগৃহিত
আয়ারল্যান্ডের রাজনীতিতে কট্টর বামপন্থি অংশের সদস্য, প্রবীণ আইনপ্রণেতা ক্যাথরিন কনলি প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীকে বিপুল ব্যবধানে হারিয়ে ইউরোপের দেশটির প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছেন।
শনিবারের ভোটের এই ফলকে কিছুদিন আগে পুনর্নির্বাচিত হওয়া মধ্য-বাম জোট সরকারের প্রতি জনগণ, বিশেষ করে তরুণদের তীব্র অসন্তোষের বহিঃপ্রকাশ বলেই মনে করছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।
৬৮ বছর বয়সী কনলি ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) দীর্ঘদিনের সমালোচক। কিছুদিন আগেও তিনি খুব একটা জনপ্রিয় ছিলেন না, প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রচারের শুরুর দিকেও অনেকেই তার সম্ভাবনা খারিজও করে দিয়েছিলেন। কিন্তু প্রচারণা যত এগিয়েছে, ততই তার অবস্থান মজবুত হয়েছে, তরুণদের মধ্যে সমর্থন বেড়েছে।
আয়ারল্যান্ডে সরকার পরিচালনায় প্রেসিডেন্টের ভূমিকা নেই, তার পদ অনেকটাই অলঙ্কারিক। আইন সংবিধানসম্মত কিনা তা খতিয়ে দেখতে কখনো কখনো বিরল ক্ষমতার প্রয়োগ করতে পারেন তিনি। তবে প্রেসিডেন্টই সাধারণত বিশ্বমঞ্চে দেশের প্রতিনিধিত্ব করেন, অন্য দেশের রাষ্ট্রপ্রধানদের আয়ারল্যান্ডে স্বাগত জানানোও তার দায়িত্বের মধ্যেই পড়ে।
শনিবারের ভোটে গণনাকৃত বৈধ ব্যালটের ৬৩ দশমিক ৪ শতাংশই স্বতন্ত্র প্রার্থী কনলির বাক্সে পড়েছে, প্রতিদ্বন্দ্বী সাবেক কেন্দ্রীয় মন্ত্রী হিদার হামফ্রিস পেয়েছেন মাত্র ২৯ দশমিক ৫ শতাংশ ভোট।
“যে শুনবে, চিন্তা করবে এবং প্রয়োজন হলে কথা বলবে, এমন প্রেসিডেন্ট হব আমি। একসঙ্গে আমরা নতুন এক প্রজাতন্ত্র গড়ে তুলব, যা সবাইকে মূল্য দেবে,” ডাবলিন প্রাসাদে দেওয়া বক্তব্যে এমনটাই বলেছেন তিনি।
সামরিক ব্যয় বৃদ্ধির ইইউ পরিকল্পনার সমালোচনা থেকে শুরু করে গাজা যুদ্ধে অবস্থানের ভিত্তিতে যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন ও ফ্রান্সের বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তোলা- এরকম অনেক কিছুতে বামপন্থি কনলির দৃষ্টিভঙ্গি তাকে সমর্থন করা দলগুলো, এমনকী বর্তমান প্রেসিডেন্ট মাইকেল ডি হিগিন্সের চেয়েও কট্টর।
২০১৬ সালে পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষে প্রথমবার বিজয়ী হওয়া কনলি একসময় সেখানকার ডেপুটি স্পিকারেরও দায়িত্ব পালন করেছেন।
প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে তার জয়কে দেখা হচ্ছে সাম্প্রতিক এক প্রবণতার অংশ হিসেবে, যেখানে ভোটাররা প্রার্থীর যোগ্যতা ও মূল্যবোধের ভিত্তিতে নির্দলীয়, স্বতন্ত্র কাউকেই বেছে নিতে বেশি আগ্রহ দেখাচ্ছে।
প্রচারণায় ক্ষমতাসীন জোটের দুই প্রভাবশালী দলের নিদারুণ ব্যর্থতাও কনলির সুবিধা করে দিয়েছে। হামফ্রিস ফাইন গেইল দলের প্রথম পছন্দ ছিলেন না। ফিয়ান্না ফাল বেছে নিয়েছিল সাবেক ফুটবল কোচ জিম গ্যাভিনকে, কিন্তু আর্থিক এক কেলেঙ্কারির কারণে পরে তিনি প্রতিদ্বন্দ্বিতা থেকে সরে দাঁড়ান।
তবে কনলির জয় বাম-ঘরানার বিরোধী দলগুলোকে ঐক্যবদ্ধ হতে অনুপ্রেরণা যোগাবে বলেই মনে করা হচ্ছে। পার্লামেন্টের প্রধান বিরোধীদল শিন ফেইনের সঙ্গে অনেক ইস্যুতেই লেবার পার্টিসহ অন্যান্য বাম মনোভাবাপন্ন দলগুলোর মতদ্বৈততা রয়েছে। কিন্তু কনলির জয় হয়তো তাদের মধ্যে মধ্য-ডানপন্থি জোটকে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে নিজেদের সরকার বসানোর তীব্র আকাঙ্ক্ষার জন্ম দিতে পারে।
এবারের নির্বাচনে রেকর্ড ১৩% ভোটার তাদের ভোট নষ্ট করেছে বলেও জানিয়েছে রয়টার্স। নির্বাচিত প্রতিনিধিদের কাছ থেকে পর্যাপ্ত সমর্থন না পেয়ে ব্যালটে নাম লেখাতে ব্যর্থ এক রক্ষণশীল প্রার্থীর সমর্থকরা ভোট নষ্ট করার আহ্বান জানিয়েছিলেন, তার ফলশ্রুতিতেই এ কাণ্ড হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী মাইকেল মার্টিন অবশ্য বলেছেন, তার সরকার এই প্রার্থী নির্বাচন প্রক্রিয়া সংস্কারে আগ্রহী।
