“যে জাতি নিজেকে সভ্য দাবি করবে সে জাতি তার নদীগুলোকে আবার দূষিত করবে, দুটো তো একসাথে হতে পারে না।”
সংগৃহিত
বন্যপ্রাণী সংরক্ষণে নতুন করে যে আইন করা হচ্ছে তার খসড়ায় জামিনের সুযোগ ‘না রাখার’ প্রস্তাব করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন পরিবেশ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান।
রোববার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বন ভবনে আন্তর্জাতিক মিঠাপানির ডলফিন দিবস ২০২৫ অনুষ্ঠানে কথা বলছিলেন পরিবেশ উপদেষ্টা। সেখানে ওয়াইল্ডলাইফ কনজারভেশন সোসাইটির কান্ট্রি ডিরেক্টর মো. জাহাঙ্গীর আলম, মিঠাপানির জরিপ ২০২৪-২৫ এর ফল তুলে ধরেন।
পরিবেশ উপদেষ্টা বলেন, “আইন স্পষ্ট করার পাশাপাশি আমাদের রেজাউল করিম সাহেব যে প্রবন্ধটা পড়লেন বা যে সাইটগুলো দেখালেন উনার একটা দাবি ছিল যে ডলফিনের বিরুদ্ধে যে নৃশংসতা হয় এটাকে কগনিজেবল এবং নন বেইলেবল করা।
“আমরা বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইন যেটা নতুন ড্রাফট করেছি, সেখান আমরা ‘কগনিজেবল’ এবং ‘ নন বেইলেবল’ করেছি। যা এখনো খসড়া আকারে রয়েছে এবং ক্যাবিনেটে যায়নি।”
বর্তমান আইনটি ২০১২ সালে করা। সেখানে বলা হয়েছে, ৩৬ ধারার অধীন অপরাধটি অজামিনযোগ্য। বাকি ধারার অপরাধ আমল অযোগ্য, জামিনযোগ্য ও ক্ষতিপূরন সাপেক্ষে আপোষযোগ্য।
৩৬ ধারায় বাঘ ও হাতি হত্যার অপরাধে দণ্ড তুলে ধরা হয়েছে।
৩৭ ধারায় তিমি বা ডলফিন হত্যার কথা বলা হয়েছে। এক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ৩ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড অথবা সর্বোচ্চ তিন লাখ টাকা পর্যন্ত অর্থদণ্ড অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হওয়ার কথা বলা হয়েছে।
তবে একই অপরাধের পুনরাবৃত্তি ঘচলে সর্বোচ্চ পাঁচ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড অথবা সর্বোচ্চ পাঁচ লাখ টাকা অর্থদণ্ড বা দণ্ডে দণ্ডিত হওয়ার কথা বলা হয়েছে।
এদিন ওই অনুষ্ঠানে দেশে ৪৫টি বড় নদীর ৩ হাজার ৩৮৩ কিলোমিটার জলপথ জরিপ করে ৭৮৭ দলে, ২ হাজার ৮২টি শুশুকের সংখ্যা নির্ণয় করেছে জরিপটি।
অত্যন্ত দূষিত বংশী ও বুড়িগঙ্গা নদীতেও এর উপস্থিতি মিলেছে বলে জরিপে তুলে ধরা হয়েছে। এক্ষেত্রে দেশব্যাপী শুশুকের আবাসস্থলের শীর্ষ ১০ শতাংশ বা ২৫টি অঞ্চলকে শুশুকের হটস্পট হিসেবে নির্ণয় করা গেছে।
রিজওয়ানা বলেন, “আমাদের দুর্ভাগ্য যে যে জিনিসগুলো আমাদেরকে প্রশান্তি দেয় সেগুলো নিয়েও আমাদেরকে দুঃস্বপ্নের ঘরে থাকতে হয়। ডলফিনগুলোর বাঁচাবার জন্য বা বংশবৃদ্ধি করার জন্য যা প্রয়োজন তা কিন্তু একটা সভ্য সমাজের মানদণ্ডের নির্ণায়ক।”
তার ভাষ্য, “আপনি যদি বলেন যে শুশুক বা আমাদের ডলফিন থাকবে পরিষ্কার পানিতে তাহলে যে কোন সভ্য জাতিও থাকবে পরিষ্কার পানির পাশেই। যে জাতি নিজেকে সভ্য দাবি করবে সে জাতি তার নদীগুলোকে আবার দূষিত করবে- দুটো তো একসাথে হতে পারে না। দুটো তো সাংঘর্ষিক হয়ে যাচ্ছে।
“ফলে যখন আমার ডলফিনের সংখ্যা বাড়বে তখন আমার বুঝতে হবে যে নদী দূষণে আমরা নিয়ন্ত্রণের দিক থেকে এগচ্ছি। যখন আমার ডলফিনের সংখ্যা কমবে তখন আমি বুঝবো যে আমার নদীগুলোকে আমি ঝুঁকিপূর্ণ করে ফেলছি। নদীগুলো মানুষের জন্য যখন ঝুঁকিপূর্ণ তখন ডলফিনের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। নদীগুলো যখন ডলফিনের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ তখন তা মানুষের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ।”
বণ্যপ্রাণী সংরক্ষণে ৬৪ জেলায় একটা স্বেচ্ছাসেবী দল গড়ে তোলার কথাও বলেন পরিবেশ উপদেষ্টা।
