সামাজিক মাধ্যম পোস্ট করা ভিডিওতে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী মোদীর কাছে তাকে ভারতে ফিরিয়ে নিয়ে আসার আবেদন জানান ওই শ্রমিক।
সংগৃহিত
সৌদি আরবের মরুভূমিতে পালিয়ে বেড়ানো এক ভারতীয় শ্রমিকের ভিডিও আবেদন সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হওয়ার পর বিষয়টি নিয়ে নড়েচড়ে বসেছে রিয়াদে ভারতীয় দূতাবাস।
ভারতীয় গণমাধ্যম এনডিটিভি জানিয়েছে সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওটিতে দেখা যায়, উত্তর প্রদেশের প্রয়াগরাজ জেলার হান্দিয়ার বাসিন্দা বলে দাবি করা ওই ব্যক্তিকে মরুভূমিতে অত্যন্ত ভীত ও বিপর্যস্ত দেখাচ্ছে। তার সঙ্গে একটি উট আছে। এ অবস্থার মধ্যে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর কাছে সাহায্য চাইছেন তিনি।
ভিডিওতে তিনি বলেন, “আমার পাসপোর্ট কেড়ে নিয়েছে আমার চাকরিদাতা ‘কপিল’। তিনি আমাকে হত্যার হুমকি দিচ্ছেন। দয়া করে আমাকে সাহায্য করেন, আমি মরে যাব।”
মোদীর কাছে তাকে ভারতে ফিরিয়ে নিয়ে আসার আবেদন জানান ওই শ্রমিক।
ভিডিওটির সঙ্গে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের কাছে জানানো একটি আবেদনও ছিল। সেখানে লেখা ছিল, “মাননীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী, দয়া করে অবিলম্বে ব্যবস্থা নিন। প্রয়াগরাজের হান্দিয়া, প্রতাপপুরের এক বাসিন্দা সৌদি আরবে আটকে আছেন।”
আটকা পড়া বলে দাবি করা ওই ব্যক্তি ভিডিওতে বলেন, “আমার গ্রাম এলাহাবাদে। আমি সৌদি আরবে এসেছিলাম। কপিলের কাছে আমার পাসপোর্ট। আমি তাকে বলেছি, আমার দেশে ফেরা দরকার; কিন্তু সে আমাকে হত্যার হুমকি দিচ্ছে।”
ভিডিওটিতে হিন্দিতে লেখা ছিল, “আমি আমার মায়ের কাছে ফিরতে চাই।”
তিনি সামাজিক মাধ্যম ব্যবহারকারীদের অনুরোধ করেন, তারা যাতে ভিডিওটি বেশি করে ছড়িয়ে দেন যেন এটি মোদীর চোখে পড়ে।
“এই ভিডিওটি অনেক বেশি শেয়ার করুন যেন ভারত থেকে আপনাদের সমর্থনে আমি সহায়তা পেতে সক্ষম হই ও ভারতে ফিরতে পারি,” বলেন তিনি।
ভিডিওটি ছড়িয়ে পড়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই রিয়াদের ভারতীয় দূতাবাস সামাজিক মাধ্যমে বলে, “আমরা ওই ব্যক্তিকে খুঁজে বের করার চেষ্টা করছি। তবে ভিডিওতে সৌদি আরবের নির্দিষ্ট কোনো জায়গা, প্রদেশ বা যোগাযোগের তথ্য না থাকায় পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া যাচ্ছে না।”
ঘটনাটি এমন সময় সামনে এলো, যখন সৌদি আরব সম্প্রতি বহু বছর ধরে বিতর্কিত ‘কাফালা’ বা স্পন্সরশিপ ব্যবস্থা বাতিল করেছে।
এই ব্যবস্থাকে দীর্ঘদিন ধরে অভিবাসী শ্রমিকদের ওপর শোষণ ও নির্যাতন চালানোর সুযোগ তৈরি করার জন্য দায়ী করা হচ্ছিল।
১৯৫০-এর দশকে চালু হওয়া ‘কাফালা’ ব্যবস্থায় বিদেশি শ্রমিকদের একজন স্থানীয় স্পন্সরের (কাফিল) সঙ্গে বাঁধা থাকতে হতো, যিনি তাদের চাকরি, চলাফেরা এমনকি দেশ ছাড়ার অনুমতিও নিয়ন্ত্রণ করতেন।
এই ব্যবস্থার আওতায় অনেক সময় নিয়োগকর্তারা শ্রমিকদের পাসপোর্ট জব্দ করে রাখতেন এবং চাকরি পরিবর্তনের সুযোগ দিতেন না—যা মানবাধিকার সংস্থাগুলোর ভাষায় ছিল ‘আধুনিক দাসপ্রথা’র কাছাকাছি।
সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের ভিশন ২০৩০ সংস্কার কর্মসূচির অংশ হিসেবে ‘কাফালা’ ব্যবস্থা তুলে নেওয়ার সিদ্ধান্তকে বলা হচ্ছে শ্রমিক অধিকার সুরক্ষায় এক ‘ঐতিহাসিক পদক্ষেপ’। এই সংস্কার থেকে উপকৃত হতে পারেন সৌদি আরবে থাকা প্রায় এক কোটি ৩০ লাখ অভিবাসী শ্রমিক, যাদের মধ্যে প্রায় ২৫ লাখই ভারতীয়।
