পুরানো দেয়াল রাঙাতে বা নতুন বাসায় নতুন রং বাছাই করতে জানা থাকা চাই কিছু কৌশল।
সংগৃহিত
একটা নতুন রংয়ের প্রলেপ ঘরের পুরো পরিবেশটাই বদলে দিতে পারে। তাও আবার খুব অল্প খরচে।
তবে সমস্যা হয় তখনই, যখন সেই নতুন রং মিলিয়ে নিতে হয় ঘরের পুরানো সাজসজ্জা আর মেঝের টাইলস, আসবাব, পর্দা, কিংবা দেয়ালে টাঙানো ছবির সাথে।
যুক্তরাষ্ট্রের ‘আর্কিটেকচারাল কালার কনসালট্যান্ট’ এমি ক্রেইন রিয়েলসিম্পল ডটকম-এ প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলেন, “প্রতিটি ঘরকে অন্য ঘরের সাথে রংয়ের মাধ্যমে সংযুক্ত করতে হয়। সব সময় থাকতে হবে ভারসাম্য, প্রবাহ ও সামঞ্জস্য।”
ঘরের রংয়ের উপাদান
রং বাছাই মানে শুধু নীল, লাল বা সবুজ বেছে নেওয়া নয়। রংয়ের রয়েছে তিনটি মৌলিক উপাদান ‘হিউ’, ‘ভ্যালু’, এবং ‘ক্রোমা’।
এমি ক্রেইন বলেন, “হিউ’ নির্দেশ করে রংয়ের ধরন; যেমন- নীল, লাল, হলুদ ইত্যাদি। ‘ভ্যালু’ বোঝায় রং কতটা গাঢ় বা হালকা এবং ‘ক্রোমা’ বোঝায় রংয়ের উজ্জ্বলতা বা গভীরতা।”
তিনি বলেন, “যদি দেয়ালের সব রং একই গাঢ়ত্ব বা উজ্জ্বলতার হয়, তবে ঘরটা একঘেয়ে লাগবে। দৃষ্টিনন্দন ভারসাম্য আনতে হলে ‘হিউ’, ‘ভ্যালু’, কিংবা ‘ক্রোমা’র যে কোনো একটি বা একাধিক উপাদানে বৈচিত্র্য আনতে হবে।”
যদি ঘরে গাঢ় কাঠের আসবাব থাকে, তবে দেয়ালে হালকা শেইড ব্যবহার করলে ঘরটা দেখতে অনেক বেশি প্রশস্ত ও প্রাণবন্ত লাগবে।
নিজের পছন্দকেও গুরুত্ব
রংয়ের ক্ষেত্রে সঠিক বা ভুল বলে কিছু নেই। নিজের পছন্দই এখানে মূল ভূমিকা পালন করে।
এমি ক্রেইন বলেন, “নিজেকে জানতে হবে, রংয়ের সঙ্গে ব্যক্তিগত সম্পর্ক কেমন! উজ্জ্বল রংয়ে প্রাণবন্ত বোধ করেন, নাকি মৃদু রংয়ে প্রশান্তি পান? সেই অনুযায়ী জায়গাটি সাজান।”
যারা সাহসী রং পছন্দ করেন, তারা গাঢ় টারকোয়েজ, রয়্যাল ব্লু বা ম্যারুনের মতো রং বেছে নিতে পারেন। অন্যদিকে যারা শান্ত ও নিরিবিলি পরিবেশ চান তারা ক্রিম, বেইজ বা হালকা ধূসর ব্যবহার করতে পারেন।
গাঢ় রংয়ে ভারসাম্য
নাটকীয় বা উজ্জ্বল রং পছন্দ করেন? তবুও চোখকে বিশ্রাম দিতে কিছুটা সংযম রাখা দরকার।
ক্রেইন বলেন, “যদি ঘরের প্রতিটি উপাদানই উজ্জ্বল হয়, চোখের কোনো জায়গা বিশ্রাম পাবে না, ফলে ঘরটা আর শান্ত বা আরামদায়ক মনে হবে না।”
তার পরামর্শ- “যদি আসবাব বা পর্দায় গাঢ় রং ব্যবহার করেন, তাহলে দেয়ালে ব্যবহার করতে হবে হালকা বা নিরপেক্ষ রং। আবার যদি দেয়ালেই রংয়ের সাহস দেখাতে চান, তবে বাকি উপকরণে ব্যবহার করতে হবে নরম ও শান্ত শেড।”
যেমন- শিশুদের ঘরের নিচের দেয়াল গাঢ় নীল হলে ওপরের অংশে হালকা নিরপেক্ষ রং রাখতে হবে।
অনুপ্রেরণা ঘরের ভেতরেই
ঘরেই হয়ত লুকিয়ে আছে পরবর্তী রংয়ের অনুপ্রেরণা।
ক্রেইন বলেন, “ধরা যাক, একটি কার্পেটে টিয়েল রংয়ের নকশা আছে। সেই রংটি দেয়ালে ব্যবহার করা যেতে পারে। তবে দেয়ালে একে কিছুটা হালকা শেইডে ব্যবহার করাই ভালো।”
কারণ, ঘরের বড় অংশে খুব বেশি ‘স্যাচুরেইটেড’ বা উজ্জ্বল রং ব্যবহার করলে সেটা চোখে আরাম দেয় না। তাই কার্পেটের গভীর রংকে হালকা করে দেয়ালে ব্যবহার করলে ঘরে আসবে কোমল ভারসাম্য।
ম্লান বা ফিকে রং মেলাতে সতর্ক
ফিকে বা ‘ডি-স্যাচুরেইটেড’ রংগুলো একসাথে ব্যবহার করা বেশ জটিল।
ক্রেইন সতর্ক করে বলেন, “যখন নিরপেক্ষ রং মেলানো হয়, তখন রংয়ের পরিবার বা ‘হিউ ফ্যামিলি’ খেয়াল রাখতে হবে। যেমন- গোলাপি-বেইজ রংয়ের সাথে হলুদ-বেইজ রং ভালো লাগে না। কিংবা নীল-ধূসর ও বাদামি-ধূসরও একসঙ্গে বেমানান লাগে।”
তিনি আরও বলেন, “যখন রং খুব ফিকে হয়ে যায়, তখন মিল খুঁজে পাওয়া কঠিন হয়ে পড়ে। অনেক সময় মনে হয় মিলাতে চেয়েছিলেন, কিন্তু পুরোপুরি পারেননি।”
তাই ফিকে রং বাছাইয়ের সময় রংয়ের উষ্ণতা ও ঠাণ্ডাভাব- দুটাই বিবেচনা করা জরুরি।
পাশের ঘরগুলোর রং-ও মাথায় রাখা
একটি ঘরের রং অন্য ঘরের রংয়ের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ না হলে পুরো বাড়ি-ই বিচ্ছিন্ন মনে হয়। তাই নতুন রং বাছাইয়ের সময় দেখতে হবে, সেই ঘরটি কোন কোন জায়গা থেকে দেখা যায় বা কোথায় খোলে। এক ঘরের রং থেকে অন্য ঘরে যেন রংয়ের প্রবাহ থাকে।
খুব বেশি মিলিয়ে ফেলবেন না
এমি ক্রেইন বলেন, “একটি ঘরে একই রংয়ের অতিরিক্ত ব্যবহার সেটিকে নিরস করে তোলে। নীল দেয়াল, নীল টাইলস, নীল পর্দা এসব একত্রে ব্যবহার করলে ঘরটি প্রাণহীন লাগতে পারে।”
তিনি পরামর্শ দেন, “একটি ঘর তখনই ভারসাম্যপূর্ণ লাগে যখন উষ্ণ ও ঠাণ্ডা রংয়ের মিশ্রণ ঘটে। যেমন- নীল রংয়ের সঙ্গে পিচ বা ক্রিম শেইড যোগ করলে ঘরে উষ্ণতা আসে যা নীলের শীতলতার সঙ্গে দারুণ মানায়।”
যদি ঘরে আসবাব, পর্দা ও গৃহসজ্জার উপকরণে আগে থেকেই অনেক রংয়ের বৈচিত্র্য থাকে তবে দেয়ালের রং হিসেবে বেছে নিতে হবে হালকা বা নিরপেক্ষ কোনো শেইড। যেমন- ‘অফ হোয়াইট’, ধূসর বা বেইজ রং।
এতে ঘরের সামগ্রিক ভারসাম্য বজায় থাকবে।
