“আমাদের দেশে দুর্বল সরকার হলে, বাংলাদেশের লাভ কি? লাভ কাদের? এটা দেশপ্রেমিক জনগণ বুঝে,” বলেন তিনি।
সংগৃহিত
দেশে ‘দুর্বল সরকার প্রতিষ্ঠার’ উদ্দেশ্যেই জাতীয় নির্বাচনে সংখ্যানুপাতিক (পিআর) পদ্ধতির দাবি তোলা হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য হাফিজ উদ্দিন আহমেদ।
শনিবার দুপুরে এক আলোচনা সভায় তিনি বলেন, “সংখ্যানুপতিক পদ্ধতি-পিআর এর দাবি মানেই একটা দুর্বল সরকারের দাবি। যাদের জনগণের প্রতিনিধি হওয়ার যোগ্যতা নাই, এসব লোককে জাতীয় সংসদে ঢুকাবার জন্য এই ধরনের অবাস্তব পরিকল্পনা দেওয়া হচ্ছে।”
হাফিজ উদ্দিন বলেন, “এটি বোঝাই যাচ্ছে, নির্বাচনকে পেছাবার জন্যে এবং নির্বাচন যদি হয়েও যায়, একটা দুর্বল সরকার যেন বাংলাদেশের মানুষের সামনে উপস্থাপিত হয়, সেই জন্যই তারা পিআরের এই দাবি করছে।”
সংসদের উভয় কক্ষে পিআর পদ্ধতি চালু করাসহ পাঁচ দফা দাবিতে জামায়াতে ইসলামীসহ ছয়টি দল যুগপৎ আন্দোলনে নেমেছে। ইতোমধ্যে তারা দুই দফা বিক্ষোভ ও গণমিছিলসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করেছে।
বিএনপি নেতা হাফিজ উদ্দিন বলেন, “আমাদের দেশে দুর্বল সরকার হলে, বাংলাদেশের লাভ কি? লাভ কাদের? এটা দেশপ্রেমিক জনগণ বুঝে।
“এবারের নির্বাচনে আমাদেরকে অবশ্যই একটা শক্তিশালী সরকার গঠন করতে হবে।”
ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি ভবনের ক্র্যাব মিলনায়তনে বাংলাদেশ লেবার পার্টির ৪৮তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে এই আলোচনা সভা হয়।
‘ধানের শীষ প্রতীকে মিত্ররাও যাতে ভোট করতে পারে’
গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের (আরপিও) সংশোধনী উপদেষ্টা পরিষদ অনুমোদন করেছে। সংশোধিত আরপিও অনুযায়ী, জোটবদ্ধ নির্বাচনের ক্ষেত্রে রাজনৈতিক দলগুলোকে নিজেদের প্রতীকে নির্বাচন করতে হবে। এ নিয়ে বিএনপিসহ কয়েকটি দলের আপত্তি থাকার বিষয়টি সংবাদমাধ্যমে এসেছে।
আগামীয় ফেব্রুয়ারির জাতীয় নির্বাচনে বিএনপি ও তার মিত্ররা জোট আন্দোলনের বিষয়ে আলোচনা চালিয়ে আসছে।
দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য হাফিজ উদ্দিন বলেন, “অতীতে সব নির্বাচনে বিএনপি মিত্রদলকে নিয়ে জোট করেছে… তারা বিএনপির প্রতীক ধানের শীষ ব্যবহার করেই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছে। এমনকি জামায়াতে ইসলামী, যারা এখন আমাদের প্রতিপক্ষ রূপে দাবি করে তারাও ধানের শীষ নিয়ে নির্বাচন ২০১৮ সালের নির্বাচন করে এসেছে।
“আমরা নির্বাচন কমিশনকে লিখিতভাবে জানাবো। বিএনপি জোটের অধীনে যে সকল রাজনৈতিক দল অংশগ্রহণ করবে তাদেরকে যেন ধানের শীষ প্রতীক দেওয়া হয়।”
‘বিতর্কিত উপদেষ্টাদের অপসারণ করুন’
অন্তর্বর্তী সরকার সুষ্ঠু একটি নির্বাচন আয়োজন করবে, এমন প্রত্যাশা জানিয়ে হাফিজ উদ্দিন বলেন, “ইতোমধ্যে বর্তমান সরকারের কিছু কিছু দুর্বলতা আমরা দেখতে পাচ্ছি। আমরা দেখতে পাচ্ছি, তাদের কিছু কিছু উপদেষ্টা দুই একটি রাজনৈতিক দলের অনুসারী। আগে হয়তো তারা ছাত্র সংগঠনে ছিলেন। তারপরে কর্মজীবনে প্রবেশ করেও ওই রাজনৈতিক দলকে সহায়তা করার জন্য ভূমিকা রেখেছেন।
“তাদের মধ্যে যদি কোনো রাজনৈতিক দলের ঘনিষ্ঠ অনুসারী কিংবা সহায়ক শক্তি হিসেবে কেউ থাকেন, তাহলে তাদেরকে সরিয়ে দিন।”
প্রধান উপদেষ্টার মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে প্রতিনিধি প্রতিনিধিদলের বৈঠকের প্রসঙ্গে টেনে তিনি বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার যেভাবে কাজ করে অন্তর্বর্তী সরকারকে সেই ‘আদলে’ চলে যাওয়ার কথা প্রধান উপদেষ্টাকে বলে এসেছেন বিএনপির প্রতিনিধিরা।
“নিরপেক্ষতা আপনারা অবলম্বন করুন, নিরপেক্ষভাবে একটা নির্বাচন পরিচালনা করুন, সকলের প্রতি সমান আচরণ করুন।”
‘ওরা নাশকতার পরিকল্পনা করছে’
বাংলাদেশের প্রতি ভারতের মনোভাবের কথা বলতে গিয়ে বিএনপির এই নেতা বলেন, “আমাদের প্রতিবেশী রাষ্ট্র আমাদের ভালো চায় না, এ কথা একটা শিশুও এখন বুঝে বাংলাদেশে। তারা সেখানে বসেই আগামী নির্বাচন পর্যন্ত যতগুলো দিন যাবে, প্রত্যেকটা দিন তারা নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করবে। ইতোমধ্যে বিমানবন্দরে আগুন অন্যান্য এলাকাতে যে আগুন দেখেছেন, অনেকে সন্দেহ করে যে তাদের হাত এখানে থাকতে পারে।”
হাফিজ উদ্দিন দাবি করেন, “প্রতিবেশী রাষ্ট্র কিংবা তাদের দালাল আওয়ামী লীগ তারা বাংলাদেশের নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড চালিয়ে বাংলাদেশের স্থায়িত্ব, বাংলাদেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব বিপন্ন করতে চায়। কেউ ভাববে না যে, আমাদের সংগ্রাম ৫ আগস্ট তারিখে শেষ হয়ে গিয়েছে। আমরা জাতীয়তাবাদী সংগ্রামে দীর্ঘস্থায়ী অংশগ্রহণের জন্য, আমরা মানসিকভাবে প্রস্তুতি নেব।”
‘সকল শিক্ষার্থীদের সামরিক ট্রেনিং দেওয়া হবে’
বিএনপির এই স্থায়ী কমিটির সদস্য বলেন, “প্রতিবেশী রাষ্ট্র যদি সামরিক শক্তি দেখাতে চায়, আমরা সামরিকভাবেই তাদেরকে মোকাবেলা করব। আমরা বাংলাদেশের জনগণকে একটা সেনাবাহিনীতে পরিণত করবো। আমরা তাদেরকে সামরিক ‘ট্রেনিং’ দেব। সকল ছাত্রকে অন্যান্য দেশে যেমন ন্যাশনাল সার্ভিস থাকে… এক বছর কিংবা দু-বছর সামরিক বাহিনীতে ভলান্টারি সার্ভিস দেয় ছাত্ররা। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল যদি ক্ষমতায় যায়, আমরা ইনশাল্লাহ সেই ব্যবস্থা করব।”
লেবার পার্টির চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান ইরানের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় জাতীয় পার্টির (কাজী জাফর) মোস্তফা জামাল হায়দার, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য মজিবুর রহমান সরোয়ার, নির্বাহী কমিটির সদস্য নাজিম উদ্দিন আলম, লেবার পার্টির ভাইস চেয়ারম্যান জোহরা খাতুন জুঁই, এসএম ইউসুফ আলী, আমিনুল ইসলাম রাজু, হিন্দুরত্ম রামকৃষ্ণ, এ কে এম সাইফুদ্দোহা, ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব খন্দকার মিরাজুল ইসলাম, যুগ্ম মহাসচিব আবদুর রহমান খোকন, হেলাল উদ্দিন চৌধুরী, মো. রুম্মান সিকদার।
