ড্রোন শনাক্তের জন্য বিভিন্ন নতুন নতুন প্রযুক্তি তৈরি করা হচ্ছে। এর মধ্যে রয়েছে শব্দ সেন্সর, যা ড্রোনের গুঞ্জন বা আওয়াজ শুনে শনাক্ত করে।
সংগৃহিত
বর্তমানে বিভিন্ন কাজে বাড়ছে ড্রোনের ব্যবহার। নিয়ন্ত্রিত বা স্বয়ংক্রিয়ভাবে উড়তে পারে ড্রোন, যা সাধারণত প্লেন বা হেলিকপ্টারের মতো দেখতে হলেও পাইলট ছাড়াই আকাশে ওড়ে।
ড্রোনকে দূর থেকে রিমোট কন্ট্রোল করা যায়। ফলে প্রোগ্রাম করা পথ অনুসরণ করতে পারে এটি। ছবির শুটিং, ডেলিভারি, সার্ভেইল্যান্স, খামার বা সামরিক কাজের মতো নানা কাজে ব্যবহৃত হয় ড্রোন।
কিন্তু, সব ড্রোন বন্ধুভাবাপন্ন নয়। ফলে সেগুলোর মোকাবেলা কখনও কখনও জরুরী হয়ে ওঠে। কিন্তু ড্রোন শনাক্ত ও ধ্বংস করার উপায় কী?
ডেনমার্কের উত্তরাঞ্চলের শহর অ্যালবোর্গে ‘মাইডিফেন্স’ নামের কোম্পানি এমন টুল বা যন্ত্রপাতি তৈরি করে, যা ড্রোনের সংকেত ব্লক করে ও ড্রোনকে কোনো অঞ্চলের বাইরে বা দূরে ঠেলে দেয়।
কোম্পানির প্রধান নির্বাহী ড্যান হারমানসেন বলেছেন, “অনেক মানুষ বা কোম্পানি এখন আমাদের তৈরি পণ্য বা পরিষেবায় আগ্রহ দেখাচ্ছে।”
তিনি বলেছেন, অক্টোবরের শুরু পর্যন্ত তাদের কোম্পানিটি মূলত বিভিন্ন প্রতিরক্ষা সংস্থার সঙ্গে কাজ করত। তবে এখন তাদের কাজের ধরন ‘পুরোপুরি বদলে গিয়েছে’।
কোম্পানিটির তৈরি ছোট ও বাক্সের মতো এসব যন্ত্র নেটো দেশগুলো ও ইউক্রেইনের সামরিক বাহিনী ব্যবহার করে বলে প্রতিবেদনে লিখেছে বিবিসি।
তবে সম্প্রতি সাধারণ গ্রাহকদের কাছ থেকেও চাহিদা বাড়ছে তাদের এ যন্ত্রের। হারমানসেন বলেছেন, “বড় বিভিন্ন কোম্পানি নিজেদের মূল্যবান সম্পদ বা সিস্টেমকে ড্রোন থেকে নিরাপদ রাখতে এই যন্ত্র কিনছে”।
তিনি বলেছেন, যন্ত্রটি ড্রোন ও তার চালকের মধ্যে সংযোগ শনাক্ত করে, তারপর একই ফ্রিকোয়েন্সিতে শক্তিশালী রেডিও সিগনাল ছেড়ে সেই সংযোগ বন্ধ করে দেয়। সহজ করে বললে, ড্রোনকে নিয়ন্ত্রকের কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন করতে সংকেত ব্লক করে যন্ত্রটি।
তিনি আরও বলেছেন, ড্রোনকে আকাশে ধ্বংস না করে, বরং দূরে ঠেলে দেওয়া হয়, যাতে তা নিয়ন্ত্রিতভাবে নেমে আসতে পারে। এক্ষেত্রে ড্রোন যদি জিপিএস সিগনালে পুনরায় সংযোগ স্থাপনের চেষ্টা করে তা-ও ব্লক করা যায়।
হারমানসেনের ধারণা, রেডিও ফ্রিকোয়েন্সি জ্যামিং বা সংকেত ব্যাহত করার প্রযুক্তি উড়ুক্কু ড্রোনকে ৮০ থেকে ৯০ শতাংশ কার্যকরভাবে থামাতে কাজ করে।
ড্রোনের সংকেত ব্লক বা আটকানোর যন্ত্র-পাতি সাধারণত সবাই ব্যবহার করতে পারে না। এগুলো নানা নিয়ম-কানুনে বাঁধা থাকে, পুলিশ বা বিভিন্ন প্রতিরক্ষা সংস্থায় ব্যবহার করতে পারে। এ ক্ষেত্রে বিভিন্ন দেশের নিয়মও ভিন্ন হতে পারে।
অননুমোদিত বা অবৈধ কোনো ড্রোন বন্ধ করতে হলে প্রথমে সেটিকে শনাক্ত করতে পারা খুব জরুরি।
ড্রোন শনাক্ত
‘ইউনিভার্সিটি অফ সাউদার্ন ডেনমার্ক’-এর ‘মারস্ক ম্যাক-কিনি মোলার ইনস্টিটিউট’-এর পরিচালক ক্যাসপার হ্যালেনবার্গ বলেছেন, “প্রথম ধাপটি হচ্ছে, ড্রোন শনাক্তকরণ। আর দ্বিতীয় ধাপটি ড্রোনকে আটকানো বা থামানোর ব্যবস্থা।”
ড্যানিশ ডিফেন্স অ্যাকাডেমির ‘মিলিটারি টেকনোলজি ইনস্টিটিউট’-এর গবেষণা প্রধান আন্দ্রেয়াস গ্রায়ে বলেছেন, “ড্রোন শনাক্তের কাজটি সহজ নয়।
“ড্রোন খুব ছোট আবার অনেক বড়ও হতে পারে। এগুলো প্রায়ই প্লাস্টিক বা কাপড়ের মতো উপাদান দিয়ে তৈরি, যেগুলো সাধারণত রেডারে সহজে ধরা যায় না।”
ছোট ও বাক্সের মতো এসব যন্ত্র নেটো দেশগুলো ও ইউক্রেইনের সামরিক বাহিনী ব্যবহার করে। ছবি: মাইডিফেন্স
ড্রোন শনাক্তের জন্য বিভিন্ন নতুন নতুন প্রযুক্তি তৈরি করা হচ্ছে। এর মধ্যে রয়েছে শব্দ সেন্সর, যা ড্রোনের গুঞ্জন বা আওয়াজ শুনে শনাক্ত করে, উচ্চ রেজুলিউশনের উন্নত অপটিক্যাল ক্যামেরা ও আধুনিক ট্যাকটিক্যাল রেডার, যা দূর থেকে কাজ করতে ও ড্রোন আর পাখির মধ্যে পার্থক্যও বুঝতে পারে।
ড্রোন ধ্বংস
এরপরের ধাপটি হচ্ছে ড্রোন শনাক্তের পর তা নিষ্ক্রিয় করা। ‘মাই ডিফেন্স’-এর কাছে ড্রোন বন্ধের জন্য যে সংকেত-জ্যামিং প্রযুক্তি রয়েছে তা ইউক্রেইন যুদ্ধে ব্যবহারের ফলে দ্রুত উন্নত হয়েছে।
গ্রায়ে বলেছেন, “ইউক্রেইনের যুদ্ধক্ষেত্র পুরোপুরি জ্যাম থাকে, যেখানে ড্রোন চালকরা নিজেদের ড্রোনের নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলে বা ঠিকভাবে চালাতে পারে না।
অতএব, রাশিয়া ও ইউক্রেইন এমন ড্রোন ব্যবহার করছে, যা জ্যামিংয়ের মধ্যেও কাজ করতে পারে। যার মধ্যে রয়েছে, ফাইবার অপটিক কেবলের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রিত হয় বা এমন ড্রোন যা স্বয়ংক্রিয়ভাবে নিজে চলতে পারে বা আগে থেকে প্রোগ্রাম করা পথ অনুসরণ করে উড়তে পারে এমন সব ড্রোন।
এ ধরনের ড্রোনকে আটকানো বা গুলি করে নামাতে হয় এবং অনেক কোম্পানি নতুন নতুন পদ্ধতি তৈরির কাজ করছে। যার মধ্যে রয়েছে সুইডিশ স্টার্টআপ ‘নর্ডিক এয়ার ডিফেন্স’।
স্টার্টআপটি কম খরচের ‘ইন্টারসেপ্টর’ তৈরি করছে, যা টার্গেট করা ড্রোনকে ধ্বংস করতে পারে।
‘নর্ডিক এয়ার ডিফেন্স’-এর ব্যণিজ্য পরিচালক জেন্স হোলজাপফেল বলেছেন, “ক্ষেপণাস্ত্রের মতো আকৃতির হওয়ায় এটি খুব দ্রুত চলে, যা তৈরি করাও খুব সহজ। এটি মূলত থ্রিডি প্রিন্টিংয়ে তৈরি হয়।”
ড্রোন ঠেকাতে খরচের বিষয়টিও গুরুত্বপূর্ণ।
গত মাসে নেটোর সাধারণ সম্পাদক মার্ক রুটে বলেছেন, “এক বা দুই হাজার ডলারের ড্রোনকে এমন সব ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে ধ্বংস করা হচ্ছে, যার দাম কয়েক লাখ, এমনকি ১০ লাখ ডলার। বিষয়টি একেবারেই গ্রহণযোগ্য নয়।”