“অপেক্ষা করছি, কবে তারেক রহমান সাহেব দেশে আসবেন। কবে নেতৃত্ব দেবেন।”
Published : 01 Aug 2025, 08:34 PM
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান যেন দ্রুত দেশে এসে ‘নেতৃত্ব দিতে’ পারেন, সেজন্য আল্লাহর কাছে দোয়া করলেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
শুক্রবার বিকালে ঢাকার উত্তরা আজমপুরে এক সমাবেশে তিনি বলেন, “খালেদা জিয়ার উপরে যে আস্থা রেখেছিল জনগণ, একইভাবে আজকে তারা তারেক রহমান সাহেবের উপর আস্থা রাখছে। অপেক্ষা করছি, কবে তারেক রহমান সাহেব দেশে আসবেন। কবে নেতৃত্ব দেবেন।
“আমরা আল্লাহর কাছে দোয়া করছি, যে তারেক রহমান সাহেব অতি দ্রুত দেশে আসেন, আমাদের সবাইকে ঐক্যবদ্ধ করে নেতৃত্ব দেন, সেটাই আমাদের কামনা।”
২০০৭-০৮ সালের সেনা নিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে খালেদা জিয়ার মত তার বড় ছেলে তারেক রহমানকেও গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। মুক্তি পাওয়ার পর তিনি পরিবার নিয়ে লন্ডনে চলে যান, দেশে আর ফেরেননি।
২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি খালেদা জিয়াকে যেদিন জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় সাজা দিয়ে কারাগারে পাঠানো হল, সেদিনই বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকে তারেককে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দায়িত্ব দেওয়া হয়।
এরপর গত সাত বছর ধরে লন্ডন থেকে ভিডিও কলেই তিনি দল চালাচ্ছেন। আর দেশে ঝড়-ঝাপটা সামলে বিএনপিকে টিকিয়ে রেখেছেন মহাসচিব মির্জা ফখরুল আলমগীরসহ কয়েকজন জ্যেষ্ঠ নেতা।
আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর তারেকের মা খালেদা জিয়া লন্ডনে গিয়ে চিকিৎসা করিয়ে এসেছেন। সে সময় তিনি তারেকের বাসাতেই ছিলেন।
পরে খালেদা জিয়ার সঙ্গেই ১৭ বছর পর দেশে আসেন তারেকের স্ত্রী জুবাইদা রহমান। কিন্তু তারেক আসেননি।
বিএনপি নেতাদের পক্ষ থেকে বিভিন্ন সময়ে বলা হয়েছে, আওয়ামী লীগ আমলে তারেকের বিরুদ্ধে হওয়া মামলাগুলোর জটিলতা কাটলেই তিনি ফিরতে পারেন।
যেসব মামলায় তারেককে সাজা দেওয়া হয়েছিল, তার সবগুলো থেকেই তাকে রেহাই দেওয়া হয়েছে গত কয়েক মাসে। তারপরও তার ফেরার কোনো দিনক্ষণ এখনও বলতে পারছেন না বিএনপি নেতারা।
শুক্রবারের সমাবেশে ফখরুল বলেন, “আমাদের নেতা তারেক রহমান সাহেব বারবার প্রতিদিন কথা বলছেন। প্রতিদিন তিনি বিভিন্ন জায়গায় (ভার্চুয়ারি) মিটিং করছেন। তিনি বলছেন যে আমরা একটা নতুন বাংলাদেশ তৈরি করব, যে বাংলাদেশে সব মানুষের সমান অধিকার থাকবে, যে বাংলাদেশে মানুষ ভোট দিতে পারবে, যে বাংলাদেশে সাধারণ গরিব মানুষ সে গরিব থাকবে না, আস্তে আস্তে সে উন্নতির দিকে যাবে এবং বারবার করে বলেছেন যে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করা হবে।”
নতুন বাংলাদেশ গড়তে তারেক রহমান আগামীতে প্রান্তিক মানুষের জন্য ‘ফার্মাস কার্ড’, ‘স্বাস্থ্য কার্ড’, ‘ফ্যামিলি কার্ড’ চালুর পরিকল্পনা নিয়েছেন বলেও জানান বিএনপি মহাসচিব।
উত্তরার আজমপুরে আমির কমপ্লেক্সের সামনে মহানগর উত্তর বিএনপির উদ্যোগে জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে শহীদ স্মরণে এই সমাবেশ হয়।
‘নির্বাচনটা আমরা চাই’
মির্জা ফখরুল বলেন, “যে ঘোষণা আমাদের প্রধান উপদেষ্টা দিয়েছেন, আগামী ফেব্রুয়ারি মাসে নির্বাচন হবে, এই নির্বাচনটা আমরা চাই, দেশের মানুষ চায়, দেশের মানুষ একটা নির্বাচিত সরকারের অধীনে দেশ পরিচালনা দেখতে চায়।
“আমার তো যাওয়ারই জায়গা নাই। এখন আমার কোনো সমস্যা হলে আমি কার কাছে যাব? কোনো এমপি নাইতো, আছে? তাহলে আমি যাব কার কাছে? আমার সমস্যাটা পার্লামেন্টে কে তুলে ধরবে? লোক নাই। কে পার্লামেন্টে আমার দাবি নিয়ে কথা বলবে? লোক নাই। এইজন্যই আমাদের দ্রুত নির্বাচন দরকার, খুব দ্রুত পার্লামেন্ট দরকার। যে পার্লামেন্টে আমরা আমাদের কথাগুলো বলতে পারব।”
বিএনপি মহাসচিব বলেন, “আমাদের অন্তবর্তীকালীন সরকারকে নিয়ে অনেকে অনেক কথা বলেন, অনেক ভুল আছে, ত্রুটি আছে, অভিজ্ঞতা নাই বেশি। আমি আশা করেছিলাম যে, এক বছরের মধ্যে আমাদের যারা শহীদ হয়েছে, প্রকৃত তালিকা করে তাদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করবে। দুর্ভাগ্য, তারা পুরোটা করতে পারেনি। কিন্তু তারা চেষ্টা করছে।
“এই যে সংস্কারের যে বৈঠক, সে বৈঠক গতকাল শেষ হয়েছে। আমরা আশা করছি, দুয়েকদিনের মধ্যেই পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট আসবে।”
‘লুটেরাদের’ সঙ্গে কোনো আপস না করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, “একটা বিরাট, একটা ভয়ঙ্কর ফ্যাসিবাদের হাত থেকে আমরা আপাতত মুক্তি পেয়েছি। এই মুক্তি তখনই চূড়ান্ত হবে যখন তাদেরকে আমরা রাজনৈতিকভাবে সম্পূর্ণ নিশ্চিহ্ন করে দিতে পারব।
“যারা লুটপাট করে, যারা ব্যাংক লুট করে, যারা চাঁদাবাজি করে, যারা মানুষের সম্পত্তি দখল করে নিয়ে যায়, তাদের বিরুদ্ধে আমাদের কোনো রকমের আপস থাকবে না। তাদেরকে আমরা কখনোই স্বীকার করব না এবং তাদেরকে আমরা কোনোমতেই সামনে আসতে দেব না।”
এক বছর আগে এই দিনে উত্তরা উত্তাল হয়েছিল, সেই স্মৃতি স্মরণ করে বিএনপি মহাসচিব শহীদ পরিবারের বেদনা-কষ্টের সঙ্গে সহমর্মিতা প্রকাশ করেন।
ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমিনুল হকের সভাপতিত্বে যুগ্ম আহ্বায়ক এবিএমএ আবদুর রাজ্জাকের সঞ্চালনায় বিএনপি চেয়ারপারসনের ভাইস চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম মনি, জুলাই-অগাস্ট গণঅভ্যুত্থান বর্ষপূর্তি পালন জাতীয় কমিটির সদস্য সচিব অধ্যাপক মোর্শেদ হাসান খান, নির্বাহী কমিটির সদস্য সাইফুল আলম নীরব, কৃষক দলের হাসান জাফির তুহিন, যুব দলের নুরুল ইসলাম নয়ন, স্বেচ্ছাসেবক দলের রাজিব আহসান, মহিলা দলের সুলতানা আহমেদ, জাসাসের হেলাল খান, তাঁতী দলের আবুল কালাম আজাদ, ঢাকা মহানগর উত্তরের সদস্য সচিব মোস্তফা জামান, যুগ্ম আহ্বায়ক এসএম জাহাঙ্গীরসহ শহীদদের পরিবারের সদস্যরা সমাবেশে বক্তব্য দেন।