এক খোলা চিঠিতে ইসরায়েলের জবাবদিহিতার দাবি জানিয়ে বিশিষ্ট ইহুদি ব্যক্তিত্বরা জাতিসংঘ ও বিশ্বনেতাদেরকে এই আহ্বান জানিয়েছেন।
সংগৃহিত
গাজায় ইসরায়েলের ‘বিবেকবর্জিত’ কর্মকাণ্ডকে গণহত্যার শামিল উল্লেখ করে দেশটির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের আহ্বান জানিয়েছেন বিশ্বের বিশিষ্ট ইহুদি ব্যক্তিত্বরা।
বুধবার প্রকাশিত এক খোলা চিঠিতে ইসরায়েলের জবাবদিহিতার দাবি জানিয়ে তারা জাতিসংঘ ও বিশ্বনেতাদেরকে এই আহ্বান জানিয়েছেন।
৪৬০ জন বিশিষ্ট ইহুদি ব্যক্তিত্ব এই খোলা চিঠিতে সই করেছেন—যাদের মধ্যে রয়েছেন, সাবেক ইসরায়েলি কর্মকর্তারা থেকে শুরু করে অস্কারজয়ী শিল্পী, লেখক ও বুদ্ধিজীবীরা।
ইসরায়েল গাজা, অধিকৃত পশ্চিম তীর ও পূর্ব জেরুজালেমে যা করছে সেসব কর্মকাণ্ডের জবাবদিহি চেয়েছেন তারা।
গাজায় গত ১০ অক্টোবর যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার পর এ চিঠিটিই ইসরায়েলের বিরুদ্ধে প্রথম এ ধরনের সমন্বিত আবেদন।
জাতিসংঘ মহাসচিবকে সম্বোধন করে চিঠিতে আন্তর্জাতিক আইন সমুন্নত রাখা, ইসরায়েলে অস্ত্র বিক্রি বন্ধ করা, নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা এবং গাজায় অবাধ মানবিক সাহায্য সরবরাহ নিশ্চিত করার জন্য বিশ্বনেতাদের কাছে আহ্বান জানানো হয়েছে।
চিঠিতে স্বাক্ষরকারীরা লিখেছেন, “আমরা ভুলে যাইনি যে হলোকাস্টের প্রতিক্রিয়ায় সব মানুষের জীবনের রক্ষাকবচ ও সুরক্ষার জন্য অনেক আইন, সনদ এবং নিয়মবিধি প্রণীত হয়েছে। ইসরায়েল এইসব সুরক্ষাব্যবস্থা ক্রমাগত লঙ্ঘন করে চলেছে।”
শান্তি ও ন্যায়বিচারের পক্ষে যারা প্রচার চালাচ্ছেন, তাদের বিরুদ্ধে ইহুদিবিদ্বেষের মিথ্যা অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করতেও বিশ্বনেতাদের আহ্বান জানিয়েছেন বিশিষ্ট এই ইহুদিরা।
তারা লিখেছেন, “ফিলিস্তিনিদের সঙ্গে আমাদের সংহতি ইহুদি ধর্ম পরিপন্থি নয়, বরং এটি এই ধর্মের পূর্ণতা। আমাদের পণ্ডিতরা যখন শিখিয়েছিলেন যে, একটি জীবন ধ্বংস করা মানে পুরো পৃথিবী ধ্বংস করা, তখন তারা ফিলিস্তিনিদের ক্ষেত্রেও এই নীতির কোনও ব্যতিক্রম রাখেননি।”
“এই যুদ্ধবিরতি যতক্ষণ না দখলদারিত্ব ও জাতিবিদ্বেষের সমাপ্তি ঘটায় ততক্ষণ পর্যন্ত আমরা চুপ করে বসে থাকব না।”
চিঠিতে আরও বলা হয়, “যখন প্রমাণ আসতে শুরু করে যে, ইসরায়েলের কর্মকাণ্ড আইনি সংজ্ঞায় গণহত্যার পর্যায়ে পড়ে, তখন অপরিমেয় দুঃখে আমাদের মাথা নত হয়ে আসে।”
গত কয়েক বছরে যুক্তরাষ্ট্রে ইহুদি এবং ভোটারদের বৃহত্তর অংশের মধ্যে ইসরায়েল সম্পর্কে জনমতে ব্যাপক পরিবর্তন ঘটার মধ্যে ইহুদি ব্যক্তিত্বদের এই আহ্বান এল।
‘দ্য ওয়াশিংটন পোস্ট’ পত্রিকার এক জরিপে দেখা গেছে, ৬১ শতাংশ মার্কিনি ইহুদি মনে করেন ইসরায়েল গাজায় যুদ্ধাপরাধ করেছে, আর ৩৯ শতাংশ একে গণহত্যা বলছেন।
ওদিকে, সাধারণ মার্কিনিদের বৃহত্তর অংশের মধ্যে ব্রুকিংস ইনস্টিটিউশনকে ৪৫ শতাংশ মানুষ জানিয়েছেন, তারা বিশ্বাস করেন ইসরায়েল গাজায় গণহত্যা চালাচ্ছে।
অন্যদিকে, গত অগাস্টে চালানো কুইনিপিয়াকের এক জরিপে দেখা যায়, মার্কিন ভোটারদের অর্ধেকই একই মত পোষণ করেন, যাদের ৭৭ শতাংশ ডেমোক্র্যাট।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাবে, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে ইসরায়েলের হামলায় অন্তত ৬৫ হাজার ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। আহত হয়েছে ১ লাখ ৬৭ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি।
জাতিসংঘের আনুমানিক হিসাব অনুযায়ী, গাজার বাসিন্দাদের ৯০ শতাংশই অভ্যন্তরীনভাবে বাস্তুচ্যুত হয়েছে।
সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান/মিডল ইস্ট আই
