যে অল্প কয়েক প্রজাতির মশারা প্রচণ্ড ঠাণ্ডায়ও টিকে থাকতে পারে, তাদের মধ্যে কিউলিসেটা অ্যানুলেটা অন্যতম।
সংগৃহিত
গেল বসন্তে রেকর্ডভাঙা গরম দেখা আইসল্যান্ডে প্রথমবার মতো মশার খোঁজ মিলেছে।
পতঙ্গপ্রেমী বিয়র্ন হিয়াল্টাসান জানান, মথ দেখার জন্য তিনি গত সপ্তাহে একাধিক রাতে ওয়াইনে ভেজানো দড়ি ব্যবহার করেছিলেন. ওই রাতগুলোতে তিনি মশার দেখা পান বলে স্থানীয় গণমাধ্যমগুলোর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।
হিয়াল্টাসন দুটি স্ত্রী মশা ও একটি পুরুষ মশার কথা বলেছেন, যেগুলো কিউলিসেটা অ্যানুলেটা প্রজাতির সদস্য বলে পরে নিশ্চিত হওয়া গেছে।
যে অল্প কয়েক প্রজাতির মশারা প্রচণ্ড ঠাণ্ডায়ও টিকে থাকতে পারে, তাদের মধ্যে কিউলিসেটা অ্যানুলেটা অন্যতম, জানিয়েছে বিবিসি।
এই আবিষ্কারের আগ পর্যন্ত আইসল্যান্ড ছিল পৃথিবীর দুটি মশা-মুক্ত স্বর্গের একটি। অন্যটি হল অ্যান্টার্কটিকা। মূলত, ঠাণ্ডা আবহাওয়ার কারণেই এই এলাকাগুলোতে মশা থাকতে পারে না।
আইসল্যান্ডের রাজধানী রেইকিয়াভিকের দক্ষিণ পশ্চিমের হিমবাহ উপত্যকা কিয়োসে এই মশাগুলো পাওয়া গেছে।
হিয়াল্টাসন তার আবিষ্কারের খবর স্থানীয় বণ্যপ্রাণী সংশ্লিষ্ট একটি ফেইসবুকে শেয়ার করে মশাগুলোর ছবিও দেন; সঙ্গে লেখেন, লাল ওয়াইনের ফিতায় অদ্ভূত এক মাছি’, বলেছে স্থানীয় গণমাধ্যমগুলো।
“আমি সঙ্গে সঙ্গেই বুঝে ফেলি যে এটা এমন কিছু যা আমি আগে কখনো দেখিনি,” ফেইসবুকে দেওয়া ওই পোস্টে এমনটাই লিখেছেন হিয়াল্টাসন।
তার ওই পোস্টের স্ক্রিনশট নিয়ে তা শেয়ার করেছে আইসল্যান্ডের সংবাদমাধ্যম মরগুনব্লাদিথ। সেখানে তারা লেখে, “শেষ দূর্গেরও পতন হয়েছে বলে মনে হচ্ছে।”
হায়াল্টাসন পরে তার পাওয়া পোকাগুলোকে শনাক্তের জন্য আইসল্যান্ডের ইনস্টিটিউট অব নেচারাল হিস্টরিতে পাঠালে এই পতঙ্গগুলো যে মশা, তা নিশ্চিত করেন পতঙ্গবিদ মাথিয়াস আলফ্রেদসন।
মশার এই প্রজাতিটি ইউরোপের বিভিন্ন অংশ ও উত্তর আমেরিকায় প্রায়শই দেখা যায়; এটি ঠিক কীভাবে আইসল্যান্ডে পৌঁছেছে তা স্পষ্ট নয়, সিএনএনকে বলেছেন আলফ্রেদসন।
আইসল্যান্ডের ঠাণ্ডা আবহাওয়া এবং প্রজননের জন্য গুরুত্বপূর্ণ স্থির জলাশয় না থাকায় দেশটিতে এতদিন মশাদের উপস্থিতি ছিল না, বলছেন ওয়ার্ল্ড পপুলেশন রিভিউ।
কিন্তু এ বছর দেশটিতে এতটাই গরম পড়েছে যে তা আগের একাধিক রেকর্ড ভেঙে দিয়েছে।
আইসল্যান্ডের আবহাওয়া দপ্তর বলছে, আইসল্যান্ডে মে মাসে ২০ ডিগ্রির বেশি তাপমাত্রা কালেভদ্রে দেখা যেত, হলেও এই ধরনের তাপপ্রবাহ ২-৩ দিনের বেশি দীর্ঘায়িত হত না।
এবার পরিস্থিতি ভিন্ন। এ বছরের মে-তে দেশটির বিভিন্ন অংশে টানা ১০ দিন ২০ ডিগ্রির বেশি তাপমাত্রা দেখা গেছে।
এবার তারা মে মাসে তাদের ইতিহাসের সবচেয়ে উষ্ণ দিনও দেখেছে, সেদিন এগ্লিস্তাদির বিমানবন্দরের তাপমাত্রা পৌঁছেছিল ২৬ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসে।
তাপমাত্রার এমন পরিবর্তন আইসল্যান্ড ও এর আশপাজুড়ে ঠাণ্ডা আবহাওয়া সংশ্লিষ্ট সংবেদনশীল বাস্তুতন্ত্রে ‘মারাত্মক’ প্রভাব ফেলবে বলে গ্লোবাল হিট হেলথ ইনফরমেশন নেটওয়ার্কে প্রকাশিত জুনের এক গবেষণায় ধারণা দেওয়া হয়েছে।
রেকর্ড বিবেচনায় গত বছর ছিল বিশ্বের সবচেয়ে উষ্ণ বছর। বায়ুমণ্ডল, সমুদ্র ও স্থলভাগের এ উষ্ণায়নের পেছনে মানুষের প্রভাবই ‘অপরিসীম’, বলছে জাতিসংঘের জলবায়ু বিষয়ক কর্তৃপক্ষ।
মশা কী ‘আসলেই আইসল্যান্ডে আবাস গাড়তে পেরেছে কীনা’ তা নিশ্চিত হতে আসন্ন বসন্তে আরও পর্যবেক্ষণের প্রয়োজন আছে বলে মনে করেন আলফ্রেদসন।
মশাগুলো কোথা থেকে এসেছে তা নিয়ে ধন্দে আছেন হায়াল্টাসনও।
“যে কেউই গ্রুন্দারতাঙ্গিকে (সমুদ্রবন্দর) সন্দেহ করতে পারেন, এটা আমার কাছ থেকে মাত্র ৬ কিলোমিটার দূরে, অনেক কিছুই জাহাজে বা কন্টেইনারে চেপে চলে আসে। হতে পারে (মশাগুলো) এ পথেই এসেছে।
“তাদের মধ্যে তিনটি যদি সরাসরি আমার বাগানে চলে আসতে পারে, তার মানে হয়তো আরও আছে,” মরগুনব্লাদিথকে বলেছেন তিনি।