যদি বিশ্বস্ত ওয়েবসাইট বেছে প্রাইভেসি সেটিংস আপডেট রাখেন, অপ্রয়োজনীয় অনুমতি বন্ধ করেন তাহলে গুগল বা ফেইসবুক লগইন ব্যবহার নিরাপদ হতে পারে।
Published : 22 Oct 2025, 05:52 PM
আজকের ডিজিটাল যুগে প্রায় প্রতিদিনই কোনো না কোনো ওয়েবসাইটে লগইন করতে হয়। কখনও কেনাকাটার জন্য, কখনও পড়াশোনার ওয়েবসাইটে আবার কখনও বিনোদনের খোঁজে। প্রতিবারই নতুন একটি অ্যাকাউন্ট তৈরি করা, ইমেইল যাচাই করা আর পাসওয়ার্ড মনে রাখার ঝামেলা সব মিলিয়ে কাজটা বিরক্তিকর হয়ে ওঠে।
ফলে এখন অনেকেই সহজ পথ হিসেবে বেছে নিচ্ছেন ‘কন্টিনিউ উইথ গুগল’ বা ‘লগইন উইথ ফেইসবুক’ অপশনটি। এক ক্লিকেই প্রবেশ, কোনো ঝামেলা ছাড়াই কিন্তু এই সহজতার আড়ালে লুকিয়ে আছে কি কোনো ঝুঁকি?
গুগল বা ফেইসবুক দিয়ে লগইন করার পদ্ধতিটি খুবই সুবিধাজনক। যখন কোনো ওয়েবসাইটে এই অপশন ব্যবহার করেন, তখন সেটি সরাসরি সোশাল অ্যাকাউন্ট থেকে মৌলিক তথ্য যেমন নাম, ইমেইল, প্রোফাইল ছবি সংগ্রহ করে নেয়। এতে নতুন করে তথ্য টাইপ করা, ইমেইল ভেরিফিকেশন করা এসব ঝক্কি থেকে মুক্তি মেলে।
সাইবার নিরাপত্তা বিষয়ক সাইট ম্যাকাফি লিখেছে, সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো, ওয়েবসাইটটি কখনোই পাসওয়ার্ড দেখতে পায় না। বরং, গুগল বা ফেইসবুক নিজেই নিশ্চিত করে যে এটি আসল ব্যবহারকারী, তারপর ওই ওয়েবসাইটে পাঠিয়ে দেয়। ফলে সংযোগটি নিরাপদ থাকে এবং সময়ও বাঁচে।
নিরাপত্তা কতটা নিশ্চিত?
এই সুবিধাজনক প্রক্রিয়ায় যেমন স্বাচ্ছন্দ্য আছে, তেমনি আছে কিছু সমঝোতা।
যখন গুগল বা ফেইসবুক দিয়ে লগইন করা হয় ওয়েবসাইটটি পাসওয়ার্ড না পেলেও ব্যবহারকারীর ইমেইল ঠিকানা এবং কিছু প্রোফাইল তথ্য পেয়ে যায়। এই মৌলিক তথ্যগুলো অনেক সময় বিজ্ঞাপননির্ভর অ্যালগরিদমে ব্যবহৃত হতে পারে যা অনলাইন আচরণকে ট্র্যাক করে।
ফেইসবুক দিয়ে লগইন কতটা নিরাপদ?
ফেইসবুক লগইন মোটামুটি নিরাপদ যদি শুধু বিশ্বস্ত ও সুরক্ষিত ওয়েবসাইটে এটি ব্যবহার করা হয়।
ফেইসবুক নিজেই সুযোগ দেয় কতটা তথ্য শেয়ার করবেন তা নিয়ন্ত্রণ করার। চাইলে প্রাইভেসি সেটিং পরিবর্তন করে দিতে পারেন যাতে কোনো ওয়েবসাইট ব্যক্তিগত তথ্যের খুব সীমিত অংশেই প্রবেশ করতে পারে।
তবে মনে রাখতে হবে সব ওয়েবসাইট একইভাবে কাজ করে না। অনেক ওয়েবসাইটের তাদের সার্ভিস চালাতে কিছু তথ্যের প্রয়োজন হয়। তাই যদি প্রাইভেসি সীমিত করে দেন তবে সাইটটি সঠিকভাবে কাজ নাও করতে পারে।
গুগল দিয়ে লগইন নিরাপদ?
গুগলও ফেইসবুকের মতো লগইন অপশন দেয় তবে এর নিরাপত্তা ব্যবস্থা তুলনামূলক শক্তিশালী।
গুগলের সিকিউরিটি অ্যালগরিদম সন্দেহজনক লগইন বা হ্যাকিংয়ের চেষ্টা দ্রুত শনাক্ত করতে পারে। এ কারণে অনেকেই মনে করেন ফেইসবুকের চেয়ে গুগল লগইন কিছুটা নিরাপদ।
তবে এখানেও প্রাইভেসির বিষয়টি বিবেচনা করা জরুরি। গুগল অ্যাকাউন্টের ‘প্রাইভেসি অ্যান্ড সিকিউরিটি’ সেটিং থেকে ব্যবহারকারী ঠিক করতে পারেন কোন তথ্যগুলো থার্ড পার্টির সঙ্গে শেয়ার করবেন। এতে ব্যবহারকারী নিরাপদ থাকবেন এবং ব্যক্তিগত তথ্যও নিয়ন্ত্রণে থাকবে।
কোনটা বেছে নেবেন?
ফেইসবুক বা গুগল দিয়ে লগইন করার সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো গতি ও সুবিধা কোনো অতিরিক্ত পাসওয়ার্ড মনে রাখার দরকার নেই, সাইনআপের সময়ও বাঁচে।
কিন্তু এর বিনিময়ে ওয়েবসাইটকে কিছু তথ্য শেয়ার করছেন যা কখনও কখনও বিজ্ঞাপন বা ডেটা অ্যানালিটিক্সে ব্যবহৃত হতে পারে।
অন্যদিকে, আলাদা ইমেইল ও পাসওয়ার্ড দিয়ে অ্যাকাউন্ট তৈরি করা সময়সাপেক্ষ হলেও তথ্যের উপর নিয়ন্ত্রণ পুরোপুরি ব্যবহারকারীর হাতেই থাকে।
ইন্টারনেটের যুগে ‘সহজ’ আর ‘নিরাপদ’ দুটো শব্দকে একই বাক্যে বসানো প্রায় অসম্ভব।
তবু সচেতন ব্যবহারকারী হিসেবে যদি বিশ্বস্ত ওয়েবসাইট বেছে নেন প্রাইভেসি সেটিংস আপডেট রাখেন, এবং অপ্রয়োজনীয় অনুমতি বন্ধ করেন তাহলে গুগল বা ফেইসবুক লগইন ব্যবহার করাও নিরাপদ থাকতে পারে।
