২০২৫ সালের ১৮ মার্চ নানা বাড়ি যাওয়ার পথে মেয়েটিকে দলবেঁধে ধর্ষণ করা হয়।
সংগৃহিত
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সময় নিহতের কিশোরী মেয়েকে দলবেঁধে ধর্ষণের মামলার তিন আসামিকে কারাদণ্ড দিয়েছে আদালত।
তাদের মধ্যে দুজনকে ১৩ বছর এবং একজনকে ১০ বছরের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।
বুধবার সকালে পটুয়াখালী নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক নিলুফার শিরিন এ রায় ঘোষণা করেন।
রায়ে উল্লেখ করা হয়, দণ্ডপ্রাপ্তরা অপ্রাপ্তবয়স্ক। ফলে শিশু আদালত আইনের আওতায় তাদের সর্বোচ্চ শাস্তি প্রদান করা হয়েছে।
আদালতের রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী আব্দুল্লাহ আল নোমান বলেন, তিন আসামিকে ধর্ষণ মামলায় দশ বছর করে বিনাশ্রম কারাদণ্ড দিয়েছে আদালত।
তাদের মধ্যে আবার দুজনকে পর্নগ্রাফি আইনে আরও তিন বছর করে বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।
কিশোরীর বাবা ১৯ জুলাই রাজধানীর মোহাম্মদপুর এলাকায় গুলিবিদ্ধ হন। ১০ দিন পর তিনি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।
মামলার বিররণে বলা হয়, ২০২৫ সালের ১৮ মার্চ সন্ধ্যায় দুমকি উপজেলার পাংগাশিয়া ইউনিয়নের নলদোয়ানি গ্রামে নানাবাড়ি যাওয়ার পথে মেয়েটিকে দলবেঁধে ধর্ষণ করা হয়। পরে মেয়েটি নিজেই বাদী হয়ে তিন জনের বিরুদ্ধে দুমকি থানায় মামলা করে।
তদন্ত শেষে দুমকি থানার ওসি (তদন্ত) মো. রফিকুল ইসলাম চলতি বছরের ১ মে তিন আসামির বিরুদ্ধে পটুয়াখালীর চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন।
এ ঘটনার পর মানসিক আঘাত সইতে না পেরে ওই বছরের ২৬ এপ্রিল ঢাকার শেখেরটেক এলাকার একটি ভাড়া বাসায় মেয়েটি আত্মহত্যা করে। পরে তার মরদেহ নিজ গ্রামে এনে শহীদ বাবার কবরের পাশে দাফন করা হয়।
রায় ঘোষণার পর পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) আব্দুল্লাহ আল নোমান বলেন, মোট ১৬ জন স্বাক্ষীর দীর্ঘ সাক্ষ্যগ্রহণ, জেরা ও যুক্তিতর্ক শেষে এই রায় ঘোষণা করা হয়।
“আমরা মামলাটি সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণ করতে পেরেছি। আদালত যে ন্যায়বিচার দিয়েছেন, তা কিছুটা হলেও সান্ত্বনা বয়ে আনবে।”
জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ও জেলা জজ আদালতের আইনজীবী অ্যাডভোকেট মজিবুর রহমান টোটন বলেন, “এই মামলার রায় সমাজের জন্য একটি বার্তা। কেউ অপরাধ করলে তাকে শাস্তি পেতেই হবে, সে যত প্রভাবশালীই হোক না কেন।”
অন্যদিকে আসামিপক্ষের আইনজীবী মো. শহিদুল ইসলাম তালুকদার ও গাজী আল মামুন রায়ে সন্তুষ্ট নন বলে জানান। তারা বলেন, রায়ের কপি হাতে পাওয়ার পর উচ্চ আদালতে আপিল করা হবে।
রায় ঘোষণার পর আদালত প্রাঙ্গণে উপস্থিত সাধারণ মানুষ, নারী অধিকারকর্মী ও মানবাধিকার সংগঠনের সদস্যরা সন্তোষ প্রকাশ করেন এবং আদালতের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান।
