জাতিসংঘ বিশেষজ্ঞরা ট্রাম্পের দাবিকৃত সামরিক পদক্ষেপের কারণকে স্বীকার করেছেন কিন্তু এর আইনি ও নৈতিক ভিত্তি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।
সংগৃহিত
ক্যারিবীয় সাগরের আন্তর্জাতিক জলসীমায় ভেনেজুয়েলার নৌযানগুলোর বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের হামলা উত্তেজনার বিপজ্জনক বৃদ্ধি এবং ‘বিচারবহির্ভুত হত্যাকাণ্ডের’ সামিল বলে মন্তব্য করেছে জাতিসংঘের স্বাধীন বিশেষজ্ঞদের একটি দল।
গত কয়েক সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প ক্যারিবীয় সাগরে অন্তত ছয়টি সন্দেহভাজন মাদকবাহী নৌযানে আঘাত হানার নির্দেশ দেন। এসব হামলায় অন্তত ২৭ জন নিহত হন।
ট্রাম্পের অভিযোগ, ভেনেজুয়েলা থেকে আসা ও এর প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরোর সঙ্গে সম্পর্কিত একটি ‘মাদকসন্ত্রাসী’ হুমকির মুখে পড়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এই কথিত ‘হুমকির’ বিরুদ্ধে ট্রাম্পের চলমান সামরিক অভিযানের অংশ হিসেবে ওই হামলাগুলো চালানো হচ্ছে।
রয়টার্স জানিয়েছে, জাতিসংঘ বিশেষজ্ঞরা ট্রাম্পের দাবিকৃত সামরিক পদক্ষেপের কারণকে স্বীকার করেছেন কিন্তু এর আইনি ও নৈতিক ভিত্তি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।
তারা বলেছেন, “যদি এমন অভিযোগ সত্য বলে প্রমাণিতও হয় তারপরও কোনো যথাযথ আইনিভিত্তি ছাড়া আন্তর্জাতিক জলসীমায় প্রাণঘাতী শক্তির ব্যবহার আন্তর্জাতিক সামুদ্রিক আইনের লঙ্ঘন এবং বিচারবহির্ভুত হত্যাকাণ্ডের সমতুল্য।”
জাতিসংঘের মানবাধিকার পরিষদ কর্তৃক নিয়োগকৃত এই স্বাধীন বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, এই হামলা দক্ষিণ আমেরিকার দেশ ভেনেজুয়েলার সার্বভৌমত্বের লঙ্ঘন। এর পাশাপাশি এটি অন্য দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ না করার ও সামরিক শক্তি ব্যবহারের হুমকি না দেওয়ার যুক্তরাষ্ট্রের ‘মৌলিক আন্তর্জাতিক বাধ্যবাধকতার’ও লঙ্ঘন।
এক বিবৃতিতে তারা বলেছে, “এই পদক্ষেপগুলো ক্যারিবীয় অঞ্চলের শান্তি ও নিরাপত্তার ক্ষেত্রে মারাত্মক প্রভাব ফেলার মতো অত্যন্ত বিপজ্জনক উত্তেজনা বৃদ্ধি।”
ওয়াশিংটন ২০২৪ সালের নির্বাচনে মাদুরের জয়কে প্রত্যাখ্যান করে বলেছে, ওই নির্বাচনে তার বিরোধী প্রার্থী জয়ী হয়েছেন এমন ‘পর্যাপ্ত প্রমাণ’ আছে।
জাতিসংঘের ওই স্বাধীন বিশেষজ্ঞদের ‘তথাকথিত বিশেষজ্ঞদের দল’ বলে অভিহিত করে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেছেন, তারা ‘যুক্তরাষ্ট্রের বিচার থেকে পলাতক এক অবৈধ নেতার পক্ষে’ কথা বলছেন যে কিনা ‘অঞ্চলিক নিরাপত্তাকে বিঘ্নিত করার পাশাপাশি আমেরিকানদের বিষ দিচ্ছেন’।
যুক্তরাষ্ট্রের দাবি তাদের পদক্ষেপগুলো জাতিসংঘের প্রতিষ্ঠাকালীন সনদের ৫১ নম্বর অনুচ্ছেদের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। এই অনুচ্ছেদে কোনো রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে সশস্ত্র আক্রমণ হলে তার আত্মরক্ষার সহজাত অধিকারের স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে আর এই অধিকার প্রয়োগের ক্ষেত্রে অবশ্যই সদস্য রাষ্ট্রকে অবিলম্বে এ বিষয়ে নিরাপত্তা পরিষদকে অবহিত করতে হয়।
ভেনেজুয়েলার পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইভান গিল বলেছেন, জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞরা যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক অভিযানের বিষয়ে কারাকাসের উদ্বেগকে দৃঢ়ভাবে সমর্থন করেছেন।
জাতিসংঘের ওই বিবৃতির বিষয়ে টেলিগ্রামে দেওয়া এক বার্তায় তিনি বলেছেন, “যুক্তরাষ্ট্র আত্মরক্ষার কথিত অধিকারকে ন্যায্যতা দেওয়ার জন্য বিপক্ষের বিরুদ্ধে বানোয়াট অভিযোগ আনে, আর সেটি ক্যারিবীয় অঞ্চলে নির্বিচার হত্যাকাণ্ড ঘটাচ্ছে।”