দুপুরে আন্দোলনরত শিক্ষক-কর্মচারীদের ‘মুখে কালো কাপড় বেঁধে’ শাহবাগে বিক্ষোভ করার কথা রয়েছে।
বাড়ি ভাড়াসহ বিভিন্ন ভাতা বাড়ানোর দাবিতে এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের আন্দোলন গড়িয়েছে দশম দিনে।
মঙ্গলবার সকালে শহীদ মিনারে শিক্ষক-কর্মচারীরা অবস্থান নিয়ে বাড়ি ভাড়া, চিকিৎসা ভাতা বাড়ানোর দাবি জানাচ্ছেন। একইসঙ্গে এমপিওভুক্ত কর্মচারীদের উৎসব ভাতা মূল বেতনের ৭৫ শতাংশ করারও দাবি তুলেছেন তারা।
অবস্থান কর্মসূচির পাশাপাশি শিক্ষক-কর্মচারীদের একাংশের অংশগ্রহণে ‘আমরণ অনশন’ কর্মসূচিও চলছে। অনশনরত ৪ জন শিক্ষক অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। আন্দোলনরত শিক্ষক-কর্মচারীদের প্রধান নেতা অধ্যক্ষ দেলাওয়ার হোসেন আজিজী নিজেও অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। তিনি জ্বর ও পেটের পীড়ায় ভুগছেন বলে সকালে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানিয়েছেন।
এদিন দুপুরে আন্দোলনরত শিক্ষক-কর্মচারীদের ‘মুখে কালো কাপড় বেঁধে’ শাহবাগে বিক্ষোভ করার কথা রয়েছে।
সকালে সরকারের প্রতিনিধিদের সঙ্গে শিক্ষক নেতারা দাবি-দাওয়া নিয়ে আলোচনা চালাচ্ছেন বলে জানিয়েছেন এমপিওভুক্ত শিক্ষা জাতীয়করণ প্রত্যাশী জোটের সদস্য সচিব অধ্যক্ষ দেলাওয়ার হোসেন আজিজী।
তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমাদের সঙ্গে আলোচনা চাচ্ছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। আমরা সচিবালয়ে আলোচনার জন্য যাব। সরকার কি প্রস্তাব দেয় তা নিয়ে শিক্ষক-কর্মচারীদের সঙ্গে আলোচনা করে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
“আশা করছি দ্রুত সমাধানের দিকে এগিয়ে যাবে।”
মূল বেতনের ২০ শতাংশ বাড়ি ভাড়া ভাতা, এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের চিকিৎসাভাতা ৫০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১ হাজার ৫০০ টাকা করা এবং এমপিওভুক্ত কর্মচারীদের উৎসব ভাতা মূল বেতনের ৫০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৭৫ শতাংশ নির্ধারণের দাবিতে এমপিওভুক্ত শিক্ষা জাতীয়করণ প্রত্যাশী জোটের ব্যানারে গত ১২ অক্টোবর থেকে আন্দোলন চালাচ্ছেন শিক্ষক-কর্মচারীরা। গত ১৭ অক্টোবর তারা সব বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান জাতীয়করণের দাবিও যুক্ত করেছেন।
বিএনপি, জাতীয় নাগরিক পার্টির-এনসিপি, জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশ, ইনকিলাব মঞ্চসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা ইতোমধ্যে এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের দাবির প্রতি একাত্মতা জানিয়েছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ-ডাকসু, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ-জাকসুসহ বিভিন্ন শিক্ষক সংগঠন এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ও বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়-বুয়েটের শিক্ষার্থীরাও শিক্ষক-কর্মচারীদের দাবির প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন।
গত ৩০ সেপ্টেম্বর এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের বাড়িভাড়া ভাতা প্রথম দফায় ৫০০ টাকা বাড়িয়েছিল সরকার; তবে গত ৫ অক্টোবর এই ঘোষণা প্রকাশ্যে এলে শিক্ষকরা তা প্রত্যাখ্যান করে আন্দোলনের ডাক দেন।
এরপর গত ৬ অক্টোবর এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের বাড়ি ভাড়া ভাতা অন্তত দুই হাজার বা তিন হাজার টাকা করার প্রস্তাব অর্থ বিভাগে পাঠায় শিক্ষা মন্ত্রণালয়। ১২ অক্টোবর থেকে শিক্ষক-কর্মচারীরা লাগাতার আন্দোলন শুরু করেন।
আন্দোলনের মধ্যেই ১৯ অক্টোবর মূল বেতনের ৫ শতাংশ বা ন্যূনতম ২ হাজার টাকা বাড়ি ভাড়া ভাতা নির্ধারণ করা হয় শিক্ষক-কর্মচারীদের জন্য। তবে শিক্ষক-কর্মচারীরা মূল বেতনের ২০ শতাংশ বাড়িভাড়া ভাতা নির্ধারণে নিজেদের দাবিতে অনড় অবস্থান নিয়েছেন।
এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীরা জাতীয় বেতন স্কেল অনুযায়ী বেতন পান। তারা মূল বেতনের সঙ্গে মাসে ৫০০ টাকা চিকিৎসা ভাতা পান। আর ১ হাজার টাকা বাড়িভাড়া ভাতা পেতেন, যা দুই দফায় বাড়িয়ে নূন্যতম ২ হাজার টাকা করা হয়েছে।
এমপিওভুক্ত শিক্ষকরা আগে বছরে ২৫ শতাংশ হারে বছরে দুইটি উৎসব ভাতা পেলেও গত মে মাসে বাড়ানোর পর তারা ও এমপিওভুক্ত কর্মচারীরা মূল বেতনের ৫০ শাতাংশ হারে উৎসব ভাতা পাচ্ছেন।
সংগৃহিত
