যদিও পদ্ধতি সোজা তারপরও দরকার মনোযোগ ও নজর রাখা।
হতে সংগৃহিত
রান্না বা বেইকিং ভালোবাসেন অথচ বাদামি মাখন বা ‘ব্রাউন বাটার’ নামটি শোনেননি এমন মানুষ খুব কমই আছেন।
অনেক রেসিপিতেই এখন এই বিশেষ ধরনের মাখন ব্যবহার করা হয়, যা সাধারণ মাখনের চেয়ে গন্ধে ও স্বাদে অনেক সমৃদ্ধ।
তবে এই বাটার তৈরি করার সময় অনেকেই সমস্যায় পড়েন; একটু অসাবধান হলেই তা পুড়ে যায়।
অথচ সঠিক কৌশল জানলে খুব সহজেই ঘরেই তৈরি করা যায় দারুণ ঘ্রাণযুক্ত বাদামি বাটার।
এই বিষয়ে পরামর্শ দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের অভিজ্ঞ শেফ ও খাদ্য–বিজ্ঞানী টিফানি সোয়ান, যিনি বহুমুখী রন্ধন প্ল্যাটফর্ম ‘সল্ট অ্যান্ড সেজ’–এর প্রতিষ্ঠাতা।
২৫ বছরের বেশি সময় ধরে পেশাদার রান্নাঘরে কাজ করা এই রন্ধন-শিল্পী জানিয়েছেন কীভাবে অল্প সময় ও যত্নসহকারে নিখুঁত বাদামি বাটার তৈরি করা যায়, যাতে পোড়া গন্ধ না আসে বরং তৈরি হয় বাদামের মতো সুন্দর সুবাস।
বাদামি বাটার বা মাখন আসলে কী?
যখন বাটার বা মাখন গরম করা হয়, তখন তাতে থাকা দুধের অংশ বা দুধের কঠিন পদার্থ বাটারের চর্বি থেকে আলাদা হয়ে নিচে জমে যায়।
এই অংশ যখন হালকা তাপে রান্না হতে থাকে, তখন বাদামি রং ধারণ করে। আর এর মধ্য থেকেই তৈরি হয় সেই বাদামি বাটার।
এই প্রক্রিয়ায় বাটারের গন্ধ হয়ে ওঠে বাদামের মতো সুগন্ধি ও স্বাদে গভীর। এটি ব্যবহার করা যায় পাস্তা, সস, বেইকিং, কিংবা ডেজার্টে। যেখানে সামান্য ঘ্রাণেই পুরো স্বাদ বদলে যায়।
তবে সমস্যা হল একটু তাপ বেশি হলেই এটি পুড়ে যায় এবং তিতা গন্ধ ছড়িয়ে পড়ে। তাই এই প্রক্রিয়ায় দরকার মনোযোগ ও ধৈর্য।
প্রথম ধাপ: সঠিক পাত্র নির্বাচন
টিফানি সোয়ান ‘ইটদিস নটদ্যাট ডটকম’য়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলেন, “বাদামি বাটার তৈরির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল সঠিক পাত্র বেছে নেওয়া।”
তিনি বলেন, “সবচেয়ে ভালো হয় যদি স্টেইনলেস স্টিলের সসপ্যান ব্যবহার করা যায়। কারণ এতে নিচের রং পরিবর্তন স্পষ্ট দেখতে পারা যায়। যা নন–স্টিক প্যানে বোঝা যায় না।”
স্টেইনলেস স্টিলের পাত্রে বাবল বা ফেনা তৈরি হলেও চিন্তার কারণ থাকে না। কারণ এর ঘের-অংশ তুলনামূলক উঁচু থাকে। ফলে ফেনা ছড়িয়ে পড়ে না এবং রান্না নিয়ন্ত্রণে রাখা সহজ হয়।
দ্বিতীয় ধাপ: তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ
বাটার পোড়ানো বা বাদামি করার সবচেয়ে বড় পার্থক্য ঘটে তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে।
তাই সোয়ানের পরামর্শ, “মাঝারি আঁচে বাটার গলানো শুরু করা উচিত। এক থেকে ১০ স্কেলের মধ্যে চার বা পাঁচ তাপমাত্রায় রাখাই সবচেয়ে উপযুক্ত।”
তিনি বলেন, “যদি বাটার খুব দ্রুত গলে বা বেশি ফেনা উঠে, তখন আঁচ কিছুটা কমিয়ে দিতে হবে। আবার যদি গলতে সময় নেয়, তাহলে সামান্য বাড়িয়ে দিতে হবে।”
তাপমাত্রা ঠিক রাখা মানেই বাটারের সঠিক রং ও ঘ্রাণ ধরে রাখা।
তৃতীয় ধাপ: চোখ ফেরানো যাবে না
বাদামি বাটার তৈরির সময় সামান্য অসাবধানতা মানেই সব পরিশ্রম নষ্ট। তাই সোয়ানের পরামর্শ— এসময় অন্য কোনো কাজ করা যাবে না।
তিনি বলেন, “বাটারে যখন বাবল বা ফেনা তৈরি হতে শুরু করে, তখনই সবচেয়ে ঝুঁকির সময়। কারণ, এই ফেনা তৈরি হয় বাটারে থাকা পানির অংশ ফুটে ওঠায়। পানি না থাকলে মাখন খুব সহজেই পুড়ে যেতে পারে।”
এই সময় মাখন একটু ঘুরিয়ে দিতে বা হালকা নেড়ে দিতে হবে। এতে নিচে জমে থাকা দুধের অংশ সমানভাবে তাপে রান্না হবে এবং পোড়ার সম্ভাবনা কমবে।
চতুর্থ ধাপ: ঘ্রাণে বুঝুন কখন হবে বন্ধ
মাখন কখন প্রস্তুত হচ্ছে, তা সবচেয়ে ভালো বোঝা যায় ঘ্রাণে।
টিফানি সোয়ান বলেন, “যখন দুধের অংশ প্রোটিন ও চিনি মিশে হালকা বাদামি হয়ে যায়, তখন থেকেই বাদামি গন্ধ ছড়াতে শুরু করে। এই গন্ধ আসা মানেই রান্না শেষের পথে।”
যেই মুহূর্তে গন্ধটা বাদামি ও মিষ্টি লাগবে, বুঝতে হবে মাখন প্রস্তুত। এই সময়ই চুলা থেকে নামিয়ে ফেলতে হিবে।
পঞ্চম ধাপ: আলাদা পাত্রে ঢেলে নিতে হবে
অনেকে চুলা বন্ধ করলেও মাখন প্যানেই রেখে দেন। তবে এটাই বড় ভুল। কারণ প্যান গরম থাকে আর তাতে থাকা মাখনও রান্না হতে থাকে। এর ফলেই তা পুড়ে যায়।
টিফানি সোয়ান বলেন, “চুলা থেকে নামানোর পর সঙ্গে সঙ্গে মাখন অন্য পাত্রে ঢেলে নিতে হবে। এতে তাপমাত্রা কমে যাবে এবং রান্না বন্ধ হবে।”
তিনি পরামর্শ দেন- অগভীর একটি পাত্র যেমন- পাস্তার সমতল বাটি বা থালা ব্যবহার করতে। এতে দ্রুত ঠাণ্ডা হবে এবং সঠিক রংও ঘ্রাণ অক্ষুণ্ণ থাকবে।
বাদামি মাখন ব্যবহারের সুবিধা
বাদামি মাখন শুধু গন্ধে নয়, স্বাদেও মজাদার। এটি সস বা পাস্তার স্বাদ বাড়ায়।
বেইকিংয়ে বিশেষ ঘ্রাণ যোগ করে। বিস্কুট বা কেক’য়ে দেয় গভীর রং।
এমনকি সবজির ওপরে ছড়িয়ে দিলে স্বাদে আনে নতুন মাত্রা।
তবে মনে রাখতে হবে- এটি ঘন ও সুগন্ধ যুক্ত। তাই সাধারণ মাখনের তুলনায় পরিমাণে কিছুটা কম ব্যবহার করতে হয়।
