বাস, লঞ্চ, ট্রেন কিংবা বিমানের টিকিট ক্রয়ের ক্ষেত্রে কিছু বিষয় খেয়াল রাখা জরুরি।
হতে সংগৃহিত
তথ্যপ্রযুক্তির অগ্রগতির সুবাদে ট্রেন, বাস, লঞ্চ কিংবা বিমানের টিকেট কেনার জন্য আর ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়াতে হয় না।
একটি স্মার্টফোন বা কম্পিউটার থাকলেই ঘরে বসে সহজেই টিকেট কাটা সম্ভব।
এই প্রতিবেদনে সংশ্লিষ্ট ওয়েবসাইট অবলম্বনে লঞ্চ, ট্রেন বাস ও বিমানের টিকেট অনলাইনে কেনার প্রক্রিয়া আলোচনা করা হল।
ট্রেনের টিকেট যেভাবে কিনবেন
বাংলাদেশ রেলওয়ে ট্রেনের টিকেট কেনার জন্য দুটি সুবিধাজনক মাধ্যম প্রদান করে: ‘রেল সেবা’ অ্যাপ এবং বাংলাদেশ রেলওয়ের ওয়েবসাইট। নিচে দুই মাধ্যমের ধাপগুলো দেওয়া হল:
১. ‘রেল সেবা’ অ্যাপের মাধ্যমে ট্রেনের টিকেট কেনা
অ্যাপ ডাউনলোড: গুগল প্লে স্টোর বা অ্যাপল অ্যাপ স্টোর থেকে ‘Rail Sheba’ সার্চ করে অ্যাপটি ডাউনলোড করুন।
রেজিস্ট্রেইশন: অ্যাপে ‘সাইন আপ’ অপশনে ক্লিক করে নাম, ইমেইল, ফোন নম্বর এবং পাসওয়ার্ড দিয়ে রেজিস্ট্রেইশন করুন।
ইমেইল ভেরিফিকেশন: রেজিস্ট্রেশনের পর ইমেইলে পাঠানো ভেরিফিকেশন লিঙ্কে ক্লিক করে অ্যাকাউন্ট সচল করুন।
প্রোফাইল সম্পূর্ণ করা: জন্মতারিখ, জাতীয় পরিচয়পত্র বা জন্ম নিবন্ধন নম্বর দিয়ে প্রোফাইল পূরণ করুন।
টিকেট কেনা
লগইন করে যাত্রার শুরু ও শেষ স্টেশন, তারিখ, যাত্রী সংখ্যা এবং আসনের ধরন (শোভন, শোভন চেয়ার, এসি, স্নিগ্ধা ইত্যাদি) নির্বাচন করুন।
উপলব্ধ ট্রেন, সময়সূচী এবং সিটের তথ্য দেখতে পাবেন। পছন্দমতো সিট নির্বাচন করুন (সর্বোচ্চ ৪টি টিকেট)।
ভাড়া, ব্যাংক চার্জ ও ভ্যাটসহ মোট পরিমাণ দেখানো হবে।
মূল্য পরিশোধ: বিকাশ, রকেট, ভিসা, মাস্টারকার্ড বা নেক্সাস কার্ডের মাধ্যমে মূল্য পরিশোধ করা যাবে।
এজন্য ফোনে একটি কোড আসবে; কোডটি দিয়ে অর্থ প্রদান নিশ্চিত করতে হবে।
টিকেট প্রাপ্তি: মূল্য পরিশোধের পর টিকেট ইমেইলে পাঠানো হবে। অথবা অ্যাপের ‘হিস্টোরি’ থেকে টিকেট ডাউনলোড করা যাবে।
সীমাবদ্ধতা: একটি অ্যাকাউন্ট থেকে সপ্তাহে সর্বোচ্চ দুবার টিকেট কেনা যায়।
২. বাংলাদেশ রেলওয়ের ওয়েবসাইটের মাধ্যমে টিকেট কেনা
ওয়েবসাইটে প্রবেশ: https://eticket.railway.gov.bd ভিজিট করতে হবে।
রেজিস্ট্রেইশন: নাম, ইমেইল, মোবাইল নম্বর এবং পাসওয়ার্ড দিয়ে রেজিস্ট্রেইশন করতে হবে।
প্রোফাইল সম্পূর্ণ করা: জাতীয় পরিচয়পত্র বা জন্ম নিবন্ধন নম্বর দিয়ে প্রোফাইল পূরণ করতে হবে।
টিকেট নির্বাচন
যাত্রার শুরু ও শেষ স্টেশন, তারিখ, আসনের ধরন, এবং টিকেট সংখ্যা নির্বাচন করুন।
উপলব্ধ ট্রেনের তালিকা ও সময়সূচী দেখতে পাবেন।
মূল্য পরিশোধ: অনলাইন পেমেন্ট গেটওয়ের মাধ্যমে ভাড়া পরিশোধ করতে হবে।
টিকেট প্রাপ্তি: টিকেট ইমেইলে পাঠানো হবে। যাত্রার সময় টিকেট প্রিন্ট করে নিন বা স্টেশনের কাউন্টারে ই-টিকেট দেখিয়ে কাউন্টার টিকেট সংগ্রহ করা যাবে।
বাসের টিকেট যেভাবে কেনা যায়
বাসের টিকেট কেনার জন্য কোনো কেন্দ্রীয় প্ল্যাটফর্ম নেই, তবে বেশ কিছু অনলাইন প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে সহজেই টিকেট কাটা যায়।
প্রতিটি বাস প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব নিয়ম থাকলেও, সাধারণ প্রক্রিয়া নিচে দেওয়া হল:
অনলাইন বাস টিকেট কেনার ধাপ
প্ল্যাটফর্ম নির্বাচন: নিচের ওয়েবসাইটগুলোর মধ্যে যে কোনোটি বেছে নেওয়া যায়
https://www.shohoz.com
https://bdtickets.com
https://ticket.jatri.co
https://paribahan.com
https://shyamolitickets.com
যাত্রার তথ্য প্রদান: যাত্রার শুরু ও শেষের শহর, তারিখ, এবং যাত্রী সংখ্যা নির্বাচন করতে হবে।
উপলব্ধ বাস, ভাড়া, এবং সময়সূচীর তালিকা দেখতে পাবেন।
সিট নির্বাচন: পছন্দসই বাস ও সিট নির্বাচন করুন।
ব্যক্তিগত তথ্য: পূর্ণ নাম, ফোন নম্বর, এবং ইমেইল ঠিকানা দিন।
মূল পরিশোধ: বিকাশ, রকেট, ভিসা, মাস্টারকার্ড, বা অন্যান্য অনলাই মাধ্যমে ভাড়া পরিশোধ করা যাবে।
টিকেট প্রাপ্তি: মূল্য পরিশোধের পর টিকেট ইমেইলে পাঠানো হবে। টিকেট প্রিন্ট করে নিন বা ডিজিটাল কপি সঙ্গে রাখুন।
অতিরিক্ত টিপস
অগ্রিম বুকিং: ছুটির মৌসুমে বা জনপ্রিয় রুটে অগ্রিম টিকেট কাটা উচিৎ, কারণ সিট দ্রুত ফুরিয়ে যায়।
টিকেট যাচাই: টিকেটে বাসের নাম, সিট নম্বর এবং সময়সূচী যাচাই করুন।
বাস কোম্পানির সরাসরি ওয়েবসাইট: কিছু প্রতিষ্ঠান (যেমন- গ্রিনলাইন, শ্যামলি) নিজস্ব ওয়েবসাইটে টিকেট বিক্রি করে। তাদের সাইটে সরাসরি পরখ করতে পারেন।
লঞ্চ টিকেট
লঞ্চের টিকেট কেনার জন্য নিচের প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করা যায়:
https://bdtickets.com
https://ticket.jatri.co
বিমান টিকেট
বিমানের টিকেট কেনার জন্য নিচের ওয়েবসাইটগুলো ব্যবহার করা যায়:
www.biman-airlines.com
https://www.amybd.com
https://gozayaan.com
https://sharetrip.net
সতর্কতা ও পরামর্শ
নিরাপদ প্ল্যাটফর্ম: শুধুমাত্র বিশ্বস্ত ওয়েবসাইট বা অ্যাপ থেকে টিকেট কিনুন।
পেমেন্ট সুরক্ষা: পেমেন্টের সময় সুরক্ষিত গেটওয়ে ব্যবহার করুন এবং ওটিপি কোড কারও সঙ্গে শেয়ার করবেন না।
টিকেট সংরক্ষণ: টিকেট ডাউনলোড করে সংরক্ষণ করুন বা প্রিন্ট করে রাখুন।
যাচাইকরণ: যাত্রার আগে ট্রেন/বাসের সময়সূচী ও টিকেটের বিশদ যাচাই করুন।
বাতিলকরণ নীতি: টিকেট বাতিলের নিয়ম ও রিফান্ড পলিসি আগেই জেনে নিন।
অনলাইন টিকেট বুকিং ব্যবস্থা সময় ও শ্রম বাঁচিয়েছে। তবে সতর্ক থাকতে হবে। সঠিক প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে ঝামেলামুক্ত যাত্রা উপভোগ করা সম্ভব।
