উড়োজাহাজে থাকা চারজনকেই জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে।
হতে সংগৃহিত
হংকং আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের রানওয়ে থেকে ছিটকে একটি কার্গো উড়োজাহাজ সাগরে গিয়ে পড়েছে।
বিবিসি লিখেছে, এমিরেটসের ফ্লাইট ইকে৯৭৮৮ দুবাই থেকে আসার পথে স্থানীয় সময় রাত ৩টা ৫০ মিনিটের দিকে উত্তর দিকের রানওয়েতে একটি বাহনের সঙ্গে ধাক্কা খায়।
বেসামরিক বিমান চলাচল বিভাগ জানিয়েছে, এ দুর্ঘটনায় বিমানবন্দরের দুজন গ্রাউন্ড স্টাফ সাগরে পড়ে যান।
পুলিশের বরাতে স্থানীয় সংবাদমাধ্যম আরটিএইচকে জানিয়েছে, তাদের উদ্ধার করা হলেও পরে হাসপাতালে মারা যান; একজনের বয়স ৩০, আরেকজনের ৪১ বছর।
হংকং আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ১৯৯৮ সালের জুলাইয়ে কাই টাক থেকে চেক ল্যাপ কক-এ স্থানান্তরের পর এটি দ্বিতীয় প্রাণঘাতী দুর্ঘটনা।
১৯৯৯ সালের অগাস্টে টাইফুনের সময় চায়না এয়ারলাইন্সের একটি যাত্রীবাহী ফ্লাইট বিধ্বস্ত হলে তিনজন নিহত হন।
হংকং বিমানবন্দরের অবকাঠামোতে উত্তর রানওয়েটি তুলনামূলক নতুন সংযোজন বলা চলে, যা এখন বন্ধ রাখা হয়েছে। তবে বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, কেন্দ্রীয় ও দক্ষিণ রানওয়ে সচল রয়েছে, যার মাধ্যমে বিমানবন্দরের কার্যক্রম চালু রাখা হয়েছে।
বিমানবন্দরের নির্বাহী পরিচালক (অপারেশন্স) স্টিভেন ইয়ু সিউ-চাং সংবাদ সম্মেলন করে বলেছেন, দুর্ঘটনার সময় আবহাওয়া উড়োজাহাজ পরিচালনার জন্য উপযোগী ছিল। এ দুর্ঘটনার প্রভাব অন্য কোনো ফ্লাইটের ওপর পড়েনি।
তিনি জানান, নিহত দুই গ্রাউন্ড স্টাফের একজনের ৭ বছরের, অপরের জনের ১২ বছরের অভিজ্ঞতা ছিল।
দুর্ঘটনার বর্ণনায় স্টিভেন ইয়ু বলেন, উড়োজাহাজটি অবতরণের সময় রানওয়ে থেকে ছিটকে গিয়ে বেড়া ভেঙে ফেলে।
“দুর্ভাগ্যবশত তখন বিমানবন্দরের একটি নিরাপত্তা টহল গাড়ি সেখানে ছিল। বিমানটির সঙ্গে ওই গাড়ির সংঘর্ষ বাধে এবং সেটিকে সাগরে ঠেলে দেয়।”
বিমানে থাকা চারজন ক্রুকে দ্রুত উদ্ধার করা হয় বলে জানান তিনি।
ফায়ার সার্ভিসের এক কর্মকর্তা জানান, খবর পাওয়ার দুই মিনিটের মধ্যে দমকল কর্মীরা ঘটনাস্থলে পৌঁছে যান। তারা দেখতে পান, উড়োজাহাজটি ভেঙে দুই ভাগ হয়ে গেছে এবং অংশবিশেষ পানিতে ভাসছে। চার এমিরেটস ক্রু নিজেরা দরজা ভেঙে বাইরে বের হন, আর তখনই উদ্ধারকারী দল এসে পৌঁছায়।
পরিস্থিতি মোকাবেলায় মোট ২১৩ জন দমকলকর্মী ও প্রাথমিক স্বাস্থ্য সেবাকর্মী সেখানে কাজ শুরু করেন। তাদের সঙ্গে ছিল ৪৫টি যানবাহন ও নৌযান।
হংকং এয়ার অ্যাক্সিডেন্ট ইনভেস্টিগেশন অথরিটির একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, তারা এখন সাগরে ফ্লাইট ডেটা রেকর্ডার ও ককপিট ভয়েস রেকর্ডার (ব্ল্যাক বক্স) খুঁজছেন।
তিনি বলেন, “তদন্ত কত দ্রুত হবে তা নির্ভর করছে আমরা কখন ব্ল্যাক বক্সগুলো খুঁজে পাই, তার ওপর।”
বিবিসি লিখেছে, দুর্ঘটনাকবলিত বোয়িং ৭৪৭-৪৮১ (বিডিএসএফ) বিমানটি একসময় যাত্রীবাহী উড়োজাহাজ ছিল, পরে সেটাকে মালবাহী উড়োজাহাজে রূপান্তর করা হয়।
ট্র্যাকিং সাইট এয়ারফ্লিটস জানিয়েছে, ৩০ বছরের বেশি পুরনো উড়োজাহাজটি প্রথম উড়েছিল ১৯৯৩ সালে।
উড়োজাহাজটি বিভিন্ন সময় বিভিন্ন এয়ারলাইনের অধীনে পরিচালিত হয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে জাপানের অল নিপ্পন এয়ারওয়েজ (এএনএ), সৌদি আরবের সৌদি অ্যারাবিয়ান এয়ারলাইন্স (বর্তমানে সৌদিয়া নামে পরিচিত)।
সোমবার উড়োজাহাজটি এমিরেটস স্কাইকার্গো ফ্লাইট ৯৭৮৮ হিসেবে পরিচালিত হচ্ছিল। রোববার দুবাই থেকে রওনা হয়ে হংকং আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে স্থানীয় সময় রাত ৩টা ৫০টার দিকে পৌঁছায়।
এমিরেটসের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ফ্লাইট ইকে৯৭৮৮ হংকং বিমানবন্দরে অবতরণের সময় ‘ক্ষতিগ্রস্ত’ হয়েছে।
“ক্রুরা সবাই নিরাপদ রয়েছেন এবং বিমানে কোনো কার্গো (মালামাল) ছিল না।”
বিবৃতি বলা হয়েছে, বোয়িং ৭৪৭ কার্গো উড়োজাহাজটি ‘ওয়েট লিজ’ এর আওতায় এয়ার এসিটি থেকে ভাড়া নিয়ে পরিচালিত হচ্ছিল।
‘ওয়েট লিজ’ ব্যবস্থায় একটি এয়ারলাইন অন্য একটি এয়ারলাইনকে বিমান, ক্রু, বীমা ও অন্যান্য সেবা সরবরাহ করে।
ফ্লাইট ট্র্যাকিং সাইট ফ্লাইটরাডার২৪ অনুযায়ী, এয়ার এসিটি’র বহরে আরেকটি বোয়িং ৭৪৭ রয়েছে।
