আর্কটিক সীল বিস্তৃত সামুদ্রিক বাস্তুতন্ত্রের ভারসাম্য বজায় রাখার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ এক প্রাণী। এর ওপর মেরু ভালুক, মানুষসহ জীবজগতের অনেকেই নানাভাবে নির্ভরশীল।
হতে সংগৃহিত
আর্কটিক সীলের তিনটি প্রজাতি বিলুপ্তির পথে আরেকটু এগিয়ে গেছে বলে প্রকৃতি সংরক্ষণ নিয়ে কাজ করা আন্তর্জাতিক সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর কনজারভেশন অব নেচারের (আইইউসিএন) হুমকিতে থাকা প্রজাতিগুলোকে নিয়ে করা হালনাগাদ লাল তালিকায় দেখা যাচ্ছে।
এর মধ্যে হুডেড সীল বিপন্ন প্রজাতির তালিকাভুক্ত হয়েছে। বিয়ার্ডেড বা দাঁড়িযুক্ত সীল ও হার্প সীল ‘কম উদ্বেগজনকের’ তালিকা থেকে উঠে এসেছে ‘প্রায় সঙ্কটাপন্ন’ প্রজাতির তালিকায়।
আর্কটিক সীলগুলোর জন্য মূল বিপদ ডেকে এনেছে জলবায়ু পরিবর্তন; এ কারণে সমুদ্রের বরফ দ্রুত গলে যাচ্ছে। বরফ এ সীলগুলোর প্রজনন, বিশ্রাম, খাদ্য সংগ্রহ ও চলাফেরার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ, বলা হয়েছে আইইউসিএনের শুক্রবারের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে।
বরফ কমে আসার অর্থ দাঁড়াচ্ছে আর্কটিক অঞ্চল মানুষের জন্য আরও সহজগম্য হচ্ছে, যা সীলের এই প্রজাতিগুলোর ঝুঁকিও বাড়িয়ে তুলছে।
আর্কটিক সীল বিস্তৃত সামুদ্রিক বাস্তুতন্ত্রের ভারসাম্য বজায় রাখার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ এক প্রাণী। এর ওপর মেরু ভালুক, মানুষসহ জীবজগতের অনেকেই নানাভাবে নির্ভরশীল।
জাহাজ চলাচল, শব্দ, তেল ও খনিজ অনুসন্ধান, শিকার, মাছ ধরার সময় অপ্রয়োজনীয় সামুদ্রিক প্রাণী ধরার কারণেও আর্কটিক সীলের ওপর চাপ বাড়ছে, বলছে আন্তর্জাতিক সংস্থাটি।
তাদের হালনাগাদ তালিকায় দেখা যাচ্ছে, বিশ্বে পাখির যত প্রজাতি আছে তার অর্ধেকের বেশিরই সংখ্যা কমছে।
তারা মোট ১১ হাজার ১৮৫টি প্রজাতির অবস্থা খতিয়ে দেখেছে, এর ৬১ শতাংশেরই সংখ্যা কমছে। ২০১৬ সালেও প্রজাতিগুলোর মধ্যে ৪৪ শতাংশ ছিল এমন সঙ্কটে। পাখিদের এক হাজার ২৫৬টি প্রজাতি বিলুপ্ত হওয়ার ঝুঁকিতেও রয়েছে, বলা হয়েছে আইইউসিএনের এবারের ‘রেড লিস্টে’।
কৃষি, কাঠ কাটা ও বন উজাড়ের কারণেই মূলত পাখিরা এমন বিপদে পড়ছে। মাদাগাস্কার, পশ্চিম আফ্রিকা ও মধ্য আমেরিকার উষ্ণমণ্ডলীয় বন কমে আসায় পাখিরা বেশি ঝুঁকিতে পড়েছে, শ্লেগেলস আসিটি ও নর্দার্ন নাইটিঙ্গেল-রেনের মতো প্রজাতি রয়েছে মারাত্মক হুমকির মুখে।
আইইউসিএনের তালিকায় ইতিবাচক খবরও আছে। সংরক্ষণবাদী নানান উদ্যোগের কারণে সবুজ সামুদ্রিক কচ্ছপের পরিমাণ বাড়ছে বলেই জানিয়েছে তারা।
১৯৭০ এর দশকের তুলনায় এই কচ্ছপের পরিমাণ এখন প্রায় ২৮ শতাংশ বেড়েছে। যে কারণে ‘বিপন্ন’ তালিকা থেকে নামিয়ে একে ‘কম উদ্বেগজনক’ তালিকায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
সৈকতে ডিম পাড়ায় সুরক্ষা, স্থানীয়দের নিয়ে নানান কর্মসূচি, অপ্রয়োজনে শিকার কমিয়ে আনার মাধ্যমে এ প্রজাতিটিকে অনেকটাই ফিরিয়ে আনা সম্ভব হয়েছে, বলেছে আইইউসিএন।
আবুধাবিতে সংস্থাটির বিশ্ব প্রকৃতি সংরক্ষণ সম্মেলনে দেওয়া এই হালনাগাদ তালিকায় স্তন্যপায়ী ক্রিসমাস আইল্যান্ড শ্রু, শামুকের একটি প্রজাতি ও স্লেন্ডার-বিলড কারল্যু পাখিসহ ছয়টি প্রজাতি বিলুপ্ত হয়ে যাওয়ার কথাও জানানো হয়েছে।
কারা কারা ব্যাপক ঝুঁকির মুখে রয়েছে এবং চাইলে যে অনেক প্রাণীকে ঝুঁকিমুক্ত অবস্থায় নিয়ে আসা যায় হালনাগাদ তালিকা থেকেই তা স্পষ্ট হচ্ছে, বলেছেন আইইউসিএনের মহাপরিচালক ড. গ্রেথেল অ্যাগিলার।
জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ মানুষ ও প্রকৃতির ভবিষ্যতের জন্য অপরিহার্য, বলেছেন তিনি।
