সঠিকভাবে ব্যবহার না করলে শুধু রান্নাই খারাপ হবে না, চুলাও নষ্ট হবে দ্রুত।
হতে সংগৃহিত
রান্নাঘরের সবচেয়ে প্রয়োজনীয় যন্ত্র চুলার ব্যবহার ঠিকমতো না করলে ধীরে ধীরে নষ্ট হয়ে যায়।
এলজি করপোরেশন’য়ের যুক্তরাষ্ট্রের জ্যেষ্ঠ পণ্য ব্যবস্থাপক ভিক্টর জ্যাকোবিয়া রিয়েলসিম্পল ডটকম-এ প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলেন, “নানান দৈনন্দিন অভ্যাস চুলার আয়ু কমিয়ে দেয় এবং ভবিষ্যতে ব্যয়বহুল মেরামতের ঝামেলায় ফেলে।”
ভুলভাবে চুলা বসানো
ভিক্টর জ্যাকোবিয়ার মতে, “বেশিরভাগ মানুষই চুলা বসানোর সময় নির্দেশিকা ভালোভাবে পড়েন না। এতে বায়ু চলাচলের ফাঁকফোকর, সঠিকভাবে সমান করে বসানো বা বায়ুনিষ্কাশনের বিষয়গুলো উপেক্ষিত হয়।”
ভুলভাবে বসানো চুলা দ্রুত গরম হয়ে যায়, সমানভাবে রান্না হয় না বা গ্যাস ও বিদ্যুতের সংযোগে ত্রুটি তৈরি হয়। ফলে চুলার আয়ু অনেক কমে যায়।
তিনি বলেন, “চুলা সঠিকভাবে সমানভাবে বসানো না হলে শুধু খাবারই খারাপ হবে না, যন্ত্রও ক্ষতিগ্রস্ত হবে। সঠিকভাবে সমান করা থাকলে নিখুঁত প্যানকেক বানানোও সহজ হয়।”
দেরিতে পরিষ্কার করা
রান্নাঘরে একবার ময়লা হলে অনেকে ভেবেই নেই পরে পরিষ্কার করব। কিন্তু চুলার ক্ষেত্রে এটি মারাত্মক ভুল।
ভিক্টর জ্যাকোবিয়া বলেন, “খাবারের তরল বা তেল ছড়িয়ে পড়লে আর তা দ্রুত পরিষ্কার না করলে গ্যাস বের হওয়ার জায়গা আটকে যেতে পারে। অন্যদিকে কাচের চুলায় দাগ স্থায়ী হয়ে যায় বা পৃষ্ঠতল ক্ষয়ে যায়।”
তিনি পরামর্শ দেন, “রান্না শেষের সঙ্গে সঙ্গেই চুলা মুছে ফেলতে হবে। নিয়মিত বার্নার খুলে পরিষ্কার করা, ঢাকনা ঠিকমতো বসানো— এসব অভ্যাস চুলার আয়ু দীর্ঘ করে।”
ক্ষতিকর রাসায়নিক ব্যবহার
অনেকে মনে করেন শক্তিশালী রাসায়নিক বা ঘষা দিলে ভালো পরিষ্কার হয়। বাস্তবে এগুলো উল্টো ক্ষতি করে। কাচের চুলার সুরক্ষা স্তর উঠে যায়, আঁচড় পড়ে। গ্যাস চুলার ধাতব জালের আবরণ নষ্ট হয়ে মরিচা ধরে।
ভিক্টর জ্যাকোবিয়া পরামর্শ দেন- ব্লিচ-ধর্মী শক্তিশালী রাসায়নিক ব্যবহার না করে বরং নরম মাইক্রোফাইবার কাপড় ব্যবহার করতে।
কাচের পৃষ্ঠতল পরিষ্কার করতে প্রয়োজনে সুরক্ষিত রেজার ব্লেড ব্যবহার করা যায়। আর অবশ্যই রান্নার হাঁড়ি-পাতিলের নিচের অংশ পরিষ্কার রাখতে হবে।
ভুল মাপের হাঁড়ি-পাতিল ব্যবহার
চুলায় যেকোনো হাঁড়ি বা পাত্র বসানো যায়— এমনটা ভেবে অনেক সময় ছোট বা বড় আকারের পাত্র ব্যবহার করি। এতে শুধু রান্নাই অসমান হয় না, বরং চুলারও ক্ষতি হয়।
ভিক্টর জ্যাকোবিয়ার ভাষায়, “কখনও কখনও পরিস্থিতি মেনে নিতে হয়। তবে বড় পাত্র অতিরিক্ত তাপ আটকে রেখে বার্নার বা কাচের ক্ষতি করে। আবার ছোট পাত্র শক্তি অপচয় করে এবং গরম-ঠাণ্ডার অসামঞ্জস্য তৈরি করে।”
ভারী হাঁড়ি বা ঢাকনা দিয়ে জোরে আঘাত করা
অনেক সময় ঢাকনায় থাকা পানি বা রান্নার সময় লেগে থাকা খাবারের অংশ ঝাড়তে, জোরে ঠোকা হয় হাঁড়িতে- এটা বিশেষ করে কাচের স্তর দেওয়া চুলার জন্য ক্ষতিকর। ভারী হাঁড়ি, পাত্র বা ঢাকনা জোরে ঠোকা দেওয়া হলে কাচ ভেঙে যেতে পারে।
জ্যাকোবিয়া বলেন, “অনেকে গরম ঢাকনা ভুল করে সরাসরি কাচের ওপর রাখেন। এতে ভ্যাকুয়াম তৈরি হয়, যা জোরে টানলে কাচ ভেঙে যেতে পারে। তাই ঢাকনা কখনও সরাসরি কাচের ওপর রাখবেন না।”
ইঁদুরের সমস্যা অবহেলা করা
শুনতে অবাক লাগলেও, ইঁদুরও চুলার বড় শত্রু। আধুনিক যন্ত্রে যত বেশি তার বা বৈদ্যুতিক অংশ থাকে, ইঁদুর তত বেশি ক্ষতি করে।
ভিক্টর জ্যাকোবিয়া সতর্ক করেন, “ইঁদুর গরম জায়গা আর তার চিবোতে ভালোবাসে। তাই ঘরে ইঁদুর থাকলে ধরে নিতে হবে যে তারা যন্ত্রপাতির ক্ষতি করবে।”
আর্দ্রতার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ না করা
আর্দ্রতা বা অতিরিক্ত স্যাঁতসেঁতে পরিবেশও চুলার ক্ষতি করে।
ভিক্টর জ্যাকোবিয়া বলেন, “স্বাভাবিক মাত্রার বাইরে আর্দ্রতা থাকলে ধাতব অংশে মরিচা ধরে, ভেতরের যন্ত্রাংশও নষ্ট হয়। তাই ঘরে আর্দ্রতার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখা জরুরি।”
অতিরিক্ত কিছু অভ্যাস যেগুলোও ক্ষতি করে
ভিক্টর জ্যাকোবিয়ার মতে- বার্নার ঢাকনা ভুলভাবে বসানো, রান্না শেষে গরম চুলায় ঠাণ্ডা পানি ফেলা, চুলার ওপর ভারী জিনিসপত্র রাখা— এসব অভ্যাসও চুলার ক্ষয়ক্ষতি হয় দ্রুত।
