মাত্র ৩৬ দিনের মধ্যে একটা ‘ফ্যাসিস্ট সরকার বা ফ্যাসিস্ট শাসকের’ পতন হয়েছে মনে করাটা সঠিক নয়, বলেন তিনি।
বিস্তারিত কমেন্টে
বিএনপিকে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের ‘বিপরীতে দাঁড় করানোর’ অপচেষ্টা সফল হবে না বলে মন্তব্য করেছেন সালাহ উদ্দিন আহমদ।
রোববার সকালে এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, “কোন একটি রাজনৈতিক দল নয়, সকল রাজনৈতিক দল যারা ফ্যাসিবাদবিরোধী গণতান্ত্রিক সংগ্রামে অবদান রেখেছে, অবিরাম সংগ্রাম করেছে তাদের সকলের অবদানের প্রেক্ষিতেই সংগঠিত হয়েছে ছাত্র-গণঅভ্যত্থান-২০২৪।
“মাত্র ৩৬ দিনের মধ্যে যদি আমরা মনে করি যে একটা ফ্যাসিস্ট সরকার বা ফ্যাসিস্ট শাসকের পতন হয়েছে, সেটা সঠিক নয়।”
গণঅভ্যুত্থানকে ১৬ বছরের ধারাবাহিক আন্দোলন-সংগ্রামের ফসল দাবি করে সালাহউদ্দিন বলেন, “বিএনপিকে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের বিপরীতে দাঁড় করানোর যে কোনো অপচেষ্টা আমার মনে হয় সফল হবে না।”
জুলাই অভ্যুত্থানে আহতদের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি, আইনি সুরক্ষা, পুনর্বাসনের দাবিতে শুক্রবার জুলাই সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠানের মঞ্চের সামনে অবস্থান নিয়ে ‘জুলাই যোদ্ধারা’ বিক্ষোভ দেখান।
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহ সভাপতি আলী রীয়াজ মঞ্চে এসে তাদের দাবি পূরণে জুলাই সনদে সংশোধনী আনার ঘোষণা দেন।
ওই প্রতিশ্রুতির পরও ‘জুলাই যোদ্ধারা’ সেখান থেকে না সরলে পুলিশ ধাওয়া দিয়ে ও লাঠিপেটা করে সেখান থেকে তাদের সরায়। তাদের ছত্রভঙ্গ করতে টিয়ারশেল ও সাউন্ড গ্রেনেডও ব্যবহার করে পুলিশ।
এ সময় ‘জুলাই যোদ্ধারা’ সংসদ ভবনের বাইরে কয়েকটি যানবাহন ভাঙচুর করে। সড়কে টায়ার ও কাঠ এবং অনুষ্ঠানের জন্য বাইরে বানানো ছোট ছোট তাঁবু একসঙ্গে করে তারা আগুন ধরিয়ে দেন।
শনিবার রাজধানীর শেরে বাংলা নগরে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এ প্রসঙ্গ টানেন বিএনপি নেতা সালাহউদ্দিন।
তিনি বলেন, “যেসব বিশৃঙ্খলা হয়েছে, আমরা খোঁজ নিয়েছি, এটা তদন্তাধীন আছে। দেখা গেছে, এখানে ‘জুলাই যোদ্ধাদের’ নামে কিছু সংখ্যক ছাত্র নামধারী উচ্ছৃঙ্খল লোক ঢুকেছে। সেটা ‘ফ্যাসিস্ট’ সরকারের ‘ফ্যাসিস্ট বাহিনী’ বলে মনে করি। আওয়ামী ‘ফ্যাসিস্টরা’ বিভিন্ন ফাঁকফোকরে বিশৃঙ্খলার চেষ্টা করছে। এখানে কোনো সঠিক জুলাই বা অভ্যুত্থানের সঙ্গে জড়িত কেউ থাকতে পারে না।”
এর পরে ‘জুলাই যোদ্ধাদের’ আওয়ামী লীগের ‘ফ্যাসিস্ট বাহিনী’ হিসেবে মন্তব্য করায় বিএনপি নেতা সালাহউদ্দিন আহমদকে ক্ষমা চাইতে বলেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম।
এই পরিপ্রেক্ষিতে এদিন গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে আসেন বিএনপির এই নেতা।
তিনি বলেন, “জুলাই ছাত্র-গণঅভ্যুত্থানে এই পর্যন্ত আমাদের যে পরিসংখ্যান বেরিয়েছে ৪২২ জন, আমরা ছবি সহকারে আমাদের নেতা-কর্মীদের তালিকা প্রকাশ করেছি, এ সংখ্যা আরো বেশি হবে যারা জুলাই ছাত্র-গণঅভ্যুত্থানে নিজেদের প্রাণ বিসর্জন করেছেন, শহীদ হয়েছেন।
“দীর্ঘ ১৬ বছরের ফ্যাসিবাদ বিরোধী গণতান্ত্রিক আন্দোলনে বিএনপি যে ভূমিকা, যে সংগ্রাম, যে ত্যাগ করেছে সেই রক্তের সিঁড়ি বয়ে জুলাই গণঅভ্যুত্থান সংঘটিত হয়েছে।”
তবে শুধু বিএনপি নয়, বাংলাদেশের ফ্যাসিবাদবিরোধী গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দলগুলোর অবিরাম সংগ্রাম ত্যাগ ও রক্তদানের মধ্য দিয়েই গণঅভ্যুত্থান সোপান গড়ে ওঠার কথাও মনে করিয়ে দেন সালাহউদ্দিন।
তিনি বলেন, “শাপলা চত্ত্বরের যে নৃশংস হত্যাকাণ্ড সেটা পৃথিবীর ইতিহাসে বিরল।”
নাহিদের বক্তব্যের প্রসঙ্গ টেনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য বলেন, “গতকালকে একটি রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকে সংবাদ সম্মেলনে বিভিন্ন বিষয়ে বক্তব্য দেওয়ার সময় আমার একটা বক্তব্যের প্রসঙ্গ টেনে আমাকে ক্ষমা চাওয়ার জন্য তারা আহ্বান জানিয়েছেন, আমি এটাকে স্বাগত জানাই।
“এভাবেই রাজনৈতিক চর্চা হওয়া উচিত, গণতান্ত্রিক চর্চা হওয়া উচিত, যথেষ্ট সম্মানের সাথেই তারা কথাগুলো বলেছেন। আসলে বয়সের কারণে অনেকেই আবেগে হয়তো অনেক কথা বলেছেন। আমি সেটা নিয়ে সমালোচনা করতে চাই না।”
জুলাই অভ্যুত্থানে জড়িত সকলের আত্মত্যাগের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, “তাদের সামান্য কিছু ভুল-ত্রুটি থাকতেই পারে, সেটা আমরা রাজনীতিতে যেহেতু অনেক দিনের আমাদের অভিজ্ঞতা, আমরা সেই দৃষ্টিকোণ থেকে দেখি এবং আশা করি তারা এ সমস্ত ভুলভ্রান্তি থেকে মুক্ত হবে ভবিষ্যতে।”
ফ্যাসিবাদবিরোধী যে জাতীয় ঐক্য গড়ে উঠেছে তাতে কোনো কলঙ্ক লাগুক সেটি তারা চান না তুলে ধরে সালাহউদ্দিন বলেন, “এই প্রেক্ষিতে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সম্মানিত আমির একটি স্ট্যাটাস দিয়েছেন, আমি দেখলাম তাতেও তিনি আহ্বান জানিয়েছেন যে, জুলাই যোদ্ধাদের ফ্যাসিবাদের দোসর নামে অভিহিত করে বক্তব্য দেওয়া উচিত নয়।
“সে বক্তব্যের সাথে আমি একমত এবং সেই বক্তব্যকে ধারণ করা আমাদের সকলের উচিত, তাদেরও উচিত। কিন্তু আমাদের বক্তব্য নিয়ে কাটিং করে বিভিন্নভাবে অপব্যাখ্যা দেওয়া থেকে সর্বমহলকে বিরত থাকার জন্য আমি অনুরোধ জানাবো।”
আপনার বক্তব্য বিকৃত করা হয়েছে কি না? জবাবে তিনি বলেন, “আমি মনে করি না, বিকৃত করা হয়েছে। তবে আংশিক বক্তব্যটা ‘কাট’ করে তারা কথা বলেছে বলে আমার মনে হয়। কারণ আমি আমার বক্তব্যের শেষ লাইনে বলেছি যে ওখানে কোন জুলাই যোদ্ধা, সঠিক কোনো জুলাই অভ্যুত্থানের সাথে জড়িত কোনো সংগঠন অথবা ব্যক্তি ওই বিশৃঙ্খল ঘটনার সাথে জড়িত থাকতে পারে না, জড়িত থাকতে পারে বলে আমি বিশ্বাস করি না।”
সালাহউদ্দিন বলেন, “কয়েকটা ভিডিওতে আমি দেখেছি, একটা ছেলে জুলাই নামে একটা গেঞ্জি গায়ে দেওয়া ছিল। একটা পুলিশের ব্যারিকেড নিজে নিজেই সরাচ্ছে এবং ধপাস করে পড়ে যাচ্ছে একটা ইটের উপরে নিজে নিজেই… কয়েকজন ধরে বলল যে এই হয়েছে, সেই হয়েছে।
“আরেকজন ছেলে দেখলাম যে নিজে নিজেই পড়ে গিয়ে বলছে যে আহত হয়েছে এবং তার পায়ে সিটি স্ক্যান লাগবে এবং বলছে যে সে এসএসসি পাস করছে সিলেটের এমসি কলেজ থেকে।”
‘বিষয়টি তদন্তাধীন আছে, এখনই প্রতিক্রিয়া নয়’
‘জুলাই যোদ্ধাদের’ সঙ্গে পুলিশের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় চারটি মামলা হয়েছে। এসব মামলায় অজ্ঞাতনামা অন্তত ৯০০ জনকে আসামি করা হয়েছে, আর একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
ঘটনাটি তদন্তনাধীন থাকার কথা তুলে ধরে বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য বলেন, “সরকারও সম্ভবত একটা তদন্ত টিম গঠন করেছে, তাদের তদন্তে কী আসে দেখা যাক?
“তবে আমার মনে হয়, কিছু কিছু ঘটনা একই সূত্রে গাঁথা যে দেশে একটা অস্থিরতা সৃষ্টি করার জন্য হয়তবা এগুলো করে থাকতে পারে কোনো কোনো গোষ্ঠী, তার সাথে হয়ত পতিত ফ্যাসিবাদের দোসররা এবং পতিত ফ্যাসিবাদ জড়িত থাকতে পারে। তবে সেটা তদন্ত করার আগে বলা যাবে না।”
