অতিরিক্ত নখের সাজ কিংবা শারীরিক অসুস্থতার কারণেও দেখা দিতে পারে নখে সাদা দাগ।
বিস্তারিত কমেন্টে
টাইপ করার সময়, ফোনে মেসেজ বা চামচ ধরার সময় ছাড়া হয়ত আঙুলের নখের দিকের তাকানোর সময়ই হয় না।
সারা দিনে হাত দিয়ে যেহেতু সব কাজ করতে হয় তাই নখ ভেঙে যাওয়া, হলদে দাগ হওয়া স্বাভাবিক। তবে নখে সাদা দাগ হলে ব্যবস্থা নিতে হবে সাথে সাথেই।
‘আমেরিকান জার্নাল অব ক্লিনিকাল ডার্মাটোলজি’ অনুযায়ী, নখের সাদা রং বা ‘লিউকোনিকিয়া’ কখনও কখনও ত্বকের সমস্যা বা স্বাস্থ্যগত কোনো অবস্থার সূচক হতে পারে।
নখের মাত্রা, পুরুত্ব বা স্পর্শের অনুভূতিও শরীরের সামগ্রিক সুস্থতার ইঙ্গিত দিতে পারে।
মার্কিন ত্বক-বিশেষজ্ঞ আস্মি বেরি ওয়েলঅ্যান্ডগুড ডটকম-এ প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলেন, “নখের গঠন নরম, মসৃণ এবং সামান্য বাঁকানো হওয়া উচিত। নখের রং সমান গোলাপী টোনের হওয়া উচিত। খসখসে, ফাটল বা ভেঙে যাওয়া নখ স্বাভাবিক নয়।”
তাহলে, এই সাদা দাগগুলো কি গুরুত্বপূর্ণ, নাকি নাকচ করার মতো?
ভিটামিনের ঘাটতি: নখের সাদা দাগের অন্যতম সাধারণ কারণ হতে পারে ভিটামিনের অভাব।
লস-অ্যাঞ্জেলেস ভিত্তিক চর্মরোগ-বিশেষজ্ঞ ডেব্রা জালিম্যান একই প্রতিবেদনে বলেন, “জিঙ্ক, বায়োটিন বা ক্যালসিয়ামের ঘাটতি নখে সাদা দাগ তৈরি করতে পারে।”
ভিটামিনের ঘাটতি সবসময় চোখে পড়ার মতো লক্ষণ দেখায় না। তাই যদি সন্দেহ হয়, রক্ত পরীক্ষা করানো সবচেয়ে ভালো উপায়।
চিকিৎসক যদি কোনও ঘাটতি শনাক্ত করেন, তবে খাদ্য তালিকায় ভিটামিন সমৃদ্ধ খাবার বা সম্পূরক যোগ করার পরামর্শ দেবেন।
জিঙ্ক, বায়োটিন এবং ক্যালসিয়ামে সমৃদ্ধ খাবার হল- শেলফিশ, মুরগি, শিম, ডিম, ব্রকলি এবং দুগ্ধজাত খাবার।
নিয়মিত নখের সাজ: যদি প্রতি দুই সপ্তাহে ম্যানিকিউর করতে যান, বিশেষ করে জেল পলিশের ব্যবহার করেন, তবে নখের সাদা দাগের কারণ খুঁজে পেতে পারেন।
আস্মি বেরি বলেন, “নখের রিমুভার এবং জেল পণ্য নখকে শুষ্ক করে তুলতে পারে, যার ফলে সাদা দাগ তৈরি হয়।”
এই সাদা দাগগুলো সাধারণত স্বাস্থ্যজনিত সমস্যা নয়, বরং নখের সৌন্দর্যের বিষয়। তবে নখের বিশ্রাম দেওয়া, কম ক্ষতিকর পলিশ ব্যবহার করা বা ম্যানিকিউরের মাত্রা কমানো কার্যকর হতে পারে।
তাই নখের স্বাস্থ্যের জন্য কম ক্ষতিকর পলিশ বা প্রাকৃতিক পণ্য ব্যবহার করা উচিত।
নখের আঘাত: নখের ‘বেড’ বা ভিত্তি অত্যন্ত সংবেদনশীল, তাই কোনো কঠিন বস্তুর সঙ্গে আঘাত লাগলে সাদা দাগ দেখা দিতে পারে।
এ ধরনের আঘাত সাধারণত ছোট সাদা দাগ তৈরি করে, তবে পুরো নখের রং পরিবর্তন বা বড় দাগ হয় না।
বিশেষজ্ঞরা মত দেন, যদি পুরো নখ সাদা হয়ে যায়, তবে এটি লিভার বা যকৃতের সমস্যা (যেমন- লিভার সিরোসিস) বা কিডনি অর্থাৎ বৃক্কে সমস্যা (যেমন- কিডনি ফেলিওর) ইঙ্গিত দেয়।
এই ক্ষেত্রে ক্লিনিকাল লক্ষণ, যেমন- ক্লান্তি, দুর্বলতা, পেটে ব্যথা বা বমি দেখা দিতে পারে।
নখে আঘাত এড়াতে, হাতের যত্ন নেওয়া গুরুত্বপূর্ণ। নখ কামড়ানো হতে পারে সাদা দাগের কারণ। তাই অভ্যাস থেকে বিরত থাকা উচিত।
ফাঙ্গাল সংক্রমণ: নখে হালকা ফাঙ্গাল সংক্রমণও সাদা দাগের কারণ হতে পারে।
ডা. বেরি জানান, “নখের চারপাশে লালচে ভাব, ফোলা, চুলকানি বা নখের পুরুত্ব বৃদ্ধি হলে ফাঙ্গাল সংক্রমণের শঙ্কা থাকে। এই ক্ষেত্রে অ্যান্টিফাঙ্গাল ক্রিম বা ওরাল মেডিকেইশন বা মুখে সেবন যোগ্য ওষুধ প্রয়োজন।”
ফাঙ্গাল সংক্রমণ পুরোপুরি প্রতিরোধ করা যায় না। তবে সঠিক যত্ন, নখ কেটে রাখা এবং হাত পরিষ্কার রাখা সাহায্য করতে পারে।
নখের সাদা দাগ প্রতিরোধ এবং চিকিৎসা
সাদা দাগের চিকিৎসা বা প্রতিরোধ মূলত কারণের ওপর নির্ভর করে।
নিয়মিত ম্যানিকিউর বা রাসায়নিকের কারণে হলে, কিছুদিন নখকে বিশ্রাম দেওয়াই যথেষ্ট। ঘরোয়া পরিষ্কারের জন্য গ্লাভস ব্যবহার করা বা কম ক্ষতিকর পলিশ ব্যবহার করা সঠিক পদক্ষেপ।
ডেব্রা জালিম্যান বলেন, “ক্ষতিকারক রাসায়নিকের সংস্পর্শ কমাতে হবে। অ্যাসিটোনযুক্ত রিমুভার বা ঘন ঘন ডিটারজেন্ট ব্যবহারে সাদা দাগ হতে পারে। তাই গ্লাভস ব্যবহার করতে হবে এবং অ্যাসিটোন-মুক্ত রিমুভার বেছে নিতে হবে।”
ভিটামিনের ঘাটতি থাকলে, সুষম খাদ্য যেমন- শাকসবজি, চর্বিহীন মাংস এবং পূর্ণশষ্যের খাবার গ্রহণ করতে হবে।
প্রয়োজনে ডাক্তার পরামর্শ অনুযায়ী ভিটামিন ব্যবহার প্রয়োজন হতে পারে।
কখন ডাক্তার দেখাবেন
সাদা দাগ সাধারণত ক্ষুদ্র আঘাত বা ম্যানিকিউরের কারণে হয়। তবে নখের স্বাস্থ্য অনেক সময় শরীরের অভ্যন্তরীণ অবস্থা বুঝতে সাহায্য করে।
ডা.বেরি বলেন, “যদি সাদা দাগ ছড়াতে থাকে, পুরু হয়, ব্যথা হয় বা একাধিক নখে কোনও স্পষ্ট কারণ ছাড়া দেখা দেয়, তবে অবশ্যই চর্মরোগ-বিশেষজ্ঞকে দেখানো উচিত। এটি সংক্রমণ বা অন্য কোনো গুরুতর সমস্যার ইঙ্গিত হতে পারে।”
