
কুড়িগ্রামের চিলমারীতে ব্রহ্মপুত্র নদের ডান তীর রক্ষা প্রকল্পে ধস আতঙ্ক যেন কাটছে না। প্রতিবছরই কয়েক দফা করে ব্লক পিচিংয়ে ভাঙন দেখা দিলেও নেওয়া হচ্ছে না কোনো স্থায়ী সমাধান। স্থানীয়দের অভিযোগ, প্রতিবছর জিও ব্যাগ ফেলে অস্থায়ীভাবে মেরামত করা হলেও পানি কমে গেলে স্থায়ী কাজের কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয় না।
জানা গেছে, ২০২৩ সালের ১৬ আগস্ট উপজেলার রাণীগঞ্জ ইউনিয়নের কাচকোল সড়কটারী এলাকায় প্রথম পিচিং ধস দেখা দেয়। ওই সময় প্রায় ১০ মিটার এলাকার ব্লক পিচিং নদে ধসে যায়। মাসের শেষ দিকে একই স্থানের দক্ষিণাংশে আরও প্রায় ১৫ মিটার এলাকায় ভাঙন দেখা দেয়। তখন জিও ব্যাগ ফেলে ভাঙন ঠেকানোর চেষ্টা করা হলেও স্থায়ী কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। এরপরের বছর ২০২৪ সালের ৬ জুলাই একই এলাকায় আবারও প্রায় ৩০ মিটার ধসে যায়।
চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে কাঁচকোল সড়কটারীর প্রায় ৩০০ মিটার এলাকায় ভাঙন দেখা দেয়। সবশেষ ১৮ সেপ্টেম্বর কাঁচকোল এলাকার কালিরকুড়া টি-বাঁধে ধস এবং ৯ অক্টোবর আবারও সড়কটারী এলাকায় নতুন করে ধস হয়। সব মিলিয়ে গত তিন বছরে ব্রহ্মপুত্র নদের ডান তীর রক্ষা প্রকল্পের অন্তত সাতটি স্থান ধসে গেছে।
রাণীগঞ্জ ইউনিয়নের সড়কটারী এলাকার আলামিন মিয়া বলেন, ‘ভাঙন দেখা দিলেই জিও ব্যাগ ফেলে অস্থায়ী মেরামত করা হয়। কিন্তু টেকসইয়ের কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয় না।
একই এলাকার আসাদুল ইসলাম বলেন,‘প্রতি বছরই বাঁধ মেরামতের নামে অস্থায়ী কাজ হয়। বন্যা মৌসুমে আবার ধসে পড়ে। স্থায়ী সমাধান না করলে একদিন পুরো এলাকা নদীতে বিলীন হয়ে যাবে। এতে হুমকির মুখে পরবে উপজেলাটি।
পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা যায়, ২০১২ সাল থেকে শুরু হয় চিলমারী রক্ষা প্রকল্প ব্রহ্মপুত্র ডান তীর রক্ষা ফ্যাস-টু (২)। ২০১৩ সালে প্রথম টেন্ডার ৬ কোটি টাকা, ২০১৫ সালে দ্বিতীয় দফা টেন্ডারে ৭৭ কোটি টাকা এবং ২০১৬ সালে তুতীয় দফায় ১৯১ কোটি টাকা ব্যয়ে ৫ কিলোমিটার বাঁধে ব্লক ফেলার কাজ করা হয়। ২০১৬ সালে ২৫৬ কোটি টাকা ব্যয়ে ৫-৬ কি.মি. বাঁধের পরিধি বাড়ানো হয়। তবে কোটি টাকার এসব প্রকল্প বাস্তবায়নের পরও বাঁধ ধসের পুনরাবৃত্তি ঠেকানো সম্ভব হয়নি।
ব্রহ্মপুত্রের ডানতীর রক্ষা প্রকল্পের মধ্যে চিলমারী অংশে বাঁধ রয়েছে প্রায় ৫ কি.মি.। এর মধ্যে থানাহাট ইউনিয়নের পুটিমারী থেকে রাণীগঞ্জ ইউনিয়নের ফকিরের হাট পর্যন্ত আড়াই কিলোমিটার অংশের কাঁচকোল এলাকার অর্ধেক কিলোমিটার এলাকা ঝুঁকিপূর্ণ। এই এলাকায় গত ৩ বছরে ৭ বার বাঁধের পিচিং ধসের ঘটনা ঘটেছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) কুড়িগ্রামের নিবার্হী প্রকৌশলী মো. রাকিবুল হাসান বলেন,‘প্রকল্প প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে, আশা করছি শীঘ্রই পাস হবে। পাস হলে বাঁধের ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় স্থায়ীভাবে মেরামত করা হবে’