যুক্তরাষ্ট্রে মেরিল্যান্ডের আদালতে বোল্টনের বিরুদ্ধে জাতীয় প্রতিরক্ষা বিষয়ক তথ্য ফাঁসের ৮ টি এবং অবৈধভাবে এসব তথ্য সংরক্ষণের ১০ টি অভিযোগ আনা হয়েছে।
সংগৃহিত
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের সাবেক জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ও ট্রাম্পের কট্টর সমালোচক জন বোল্টনের বিরুদ্ধে সরকারি গোপন তথ্য প্রকাশের ফৌজদারি অভিযোগ আনা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার মেরিল্যান্ডের গ্রিনবেল্ট আদালতে ২৬ পৃষ্ঠার অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়। তাতে বোল্টনের বিরুদ্ধে জাতীয় প্রতিরক্ষা বিষয়ক তথ্য অন্যের কাছে প্রকাশের ৮ টি অভিযোগ এবং অবৈধভাবে এসব তথ্য সংরক্ষণের ১০ টি অভিযোগ আনা হয়েছে।
কৌসুঁলিদের অভিযোগ, বোল্টন তার ব্যক্তিগত ইমেইল ও মেসেজিং অ্যাপে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা সম্পর্কিত শীর্ষ গোপন তথ্য পাঠাতেন। এর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের ভবিষ্যৎ হামলা পরিকল্পনা, শত্রু রাষ্ট্র ও কূটনৈতিক সম্পর্ক সংক্রান্ত গোপন গোয়েন্দা তথ্য ছিল।
অভিযোগপত্রে বলা হয়, বোল্টন গোপন সরকারি তথ্য দুই স্বজনের সঙ্গে শেয়ার করেছেন। এই স্বজনদের নাম উল্লেখ করা হয়নি।
যুক্তরাষ্ট্রের গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে বলা হয়, বোল্টন এই তথ্যগুলো নিজের স্ত্রী ও মেয়েকে শেয়ার করেছিলেন বলেও অভিযোগ আছে। দোষী সাব্যস্ত হলে প্রতিটি অভিযোগে সর্বোচ্চ ১০ বছর করে কারাদণ্ড হতে পারে বোল্টনের।
‘আইনের ঊর্ধ্বে কেউ নয়’
মার্কিন অ্যাটর্নি জেনারেল পাম বন্ডি বলেন, “কেউ আইনের ঊর্ধ্বে নয়। জাতীয় নিরাপত্তার স্বার্থেই এই মামলার প্রয়োজন ছিল।”
৭৬ বছর বয়সী বোল্টন অবশ্য নিজেকে নির্দোষ দাবি করে এক বিবৃতিতে বলেন, “আমি আদালতে আমার বৈধ কর্মকাণ্ডের পক্ষে দাঁড়াতে প্রস্তুত। ট্রাম্প আমার বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নিচ্ছেন।”
তিনি অভিযোগ করেন, ট্রাম্প বিচার বিভাগকে রাজনৈতিক প্রতিশোধের অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছেন এবং যাদের ‘শত্রু’ মনে করেন তাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিচ্ছেন।
সম্প্রতি ট্রাম্পের সমালোচকদের বিরুদ্ধে অপরাধের অভিযোগ আনা হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের বিচার বিভাগে। বোল্টন সেই কাতারে যোগ হওয়া তৃতীয় জন।
অভিযোগের মুখে কর্তৃপক্ষের কাছে আত্মসমর্পণ করতে বোল্টন শুক্রবার মেরিল্যান্ডের ফেডারেল আদালতে যান বলে জানিয়েছে বিবিসি।
‘ডায়েরি অপরাধ নয়’ — আইনজীবীর মন্তব্য:
বোল্টনের আইনজীবী অ্যাবি লওয়েল বলেন, তার মক্কেল ৪৫ বছরের সরকারি জীবনে ডায়েরি রাখতেন, যা অপরাধ নয়।
তিনি দাবি করেন, ওই তথ্য গোপন ছিল না, কেবল পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে শেয়ার করা হয়েছিল এবং তদন্ত সংস্থা এফবিআই ২০২১ সালেই তা জানত।
ইরানি হ্যাকিংয়ের অভিযোগও তদন্তে
আদালতের নথিতে আরও বলা হয়, ২০১৯ থেকে ২০২১ সালের মধ্যে ইরানের সঙ্গে সম্পর্কিত এক সাইবার হ্যাকার বোল্টনের ব্যক্তিগত ইমেইলে ঢুকে গোপন তথ্য পায়।
বিষয়টি এফবিআই-কে জানানো হলেও, তখন কেউ বুঝতে পারেনি যে গোপন নথি ফাঁস হয়েছে।
ট্রাম্পের সঙ্গে সম্পর্ক ও বই বিতর্ক
বোল্টন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদে হোয়াইট হাউজের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ছিলেন। পরে তিনি প্রেসিডেন্টের অন্যতম সমালোচক হয়ে ওঠেন।
২০১৯ সালে ট্রাম্প প্রশাসন থেকে তিনি বরখাস্ত হন। পরের বছর তিনি প্রকাশ করেন ‘দ্য রুম হোয়্যার ইট হ্যাপেন্ড’ নামের স্মৃতিকথা, যেখানে ট্রাম্পকে আন্তর্জাতিক রাজনীতি সম্পর্কে অজ্ঞ ও বিশৃঙ্খল নেতা হিসেবে বর্ণনা করা হয়।
বইটি প্রকাশ ঠেকাতে ট্রাম্প প্রশাসন আদালতে গিয়েছিল, কিন্তু আদালত আবেদন খারিজ করে দেয়। পরে বিচার বিভাগ বোল্টনের বিরুদ্ধে গোপন তথ্য ফাঁসের তদন্ত শুরু করে।
ট্রাম্পের প্রতিক্রিয়া:
হোয়াইট হাউজে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নে ট্রাম্প বলেন, “আমি বিষয়টি জানি না, তবে বলব—বোল্টন একজন খারাপ লোক।”
বোল্টন জর্জ ডব্লিউ বুশের আমলে জাতিসংঘে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত হিসেবেও কাজ করেছিলেন। তিনি ট্রাম্পবিরোধী তৃতীয় ব্যক্তি, যাকে ফৌজদারি মামলায় অভিযুক্ত করা হল।
এর আগে নিউ ইয়র্কের অ্যাটর্নি জেনারেল লেটিশিয়া জেমস ব্যাংক জালিয়াতির অভিযোগে অভিযুক্ত হন এবং সাবেক এফবিআই পরিচালক জেমস কোমি কংগ্রেসে মিথ্যা বলার অভিযোগে মামলার মুখে পড়েন।
মামলাগুলো এমন সময়ে হচ্ছে, যখন ট্রাম্প প্রকাশ্যে তার রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বীদের বিরুদ্ধে বিচার বিভাগকে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।
