দুর্নীতি বিরোধী অভিযানের অংশ হিসেবে নেওয়া এ পদক্ষেপ চীনের সামরিক বাহিনীতে সম্প্রতি কয়েক দশকের মধ্যে অন্যতম বড় দমনাভিযান বলে মনে করা হচ্ছে।
সংগৃহিত
দুর্নীতি-বিরোধী অভিযানের অংশ হিসেবে শীর্ষ পর্যায়ের ৯ জেনারেলকে সামরিক বাহিনী এবং ক্ষমতাসীন কমিউনিস্ট পার্টি থেকে বহিষ্কার করেছে চীন।
চীনের সামরিক বাহিনীতে সম্প্রতি কয়েক দশকের মধ্যে এটি অন্যতম বড় দমনাভিযান বলে মনে করা হচ্ছে।
বহিস্কার হওয়া জেনারেলদের বেশির ভগাই তিন-তারকা জেনারেল এবং কমিউনিস্ট পার্টির সিদ্ধান্ত-গ্রহণ কমিটিতেও তারা ছিলেন।
চীনের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় বৃহস্পতিবার এক বিবৃতিতে জানায়, বাহিষ্কৃত কর্মকর্তারা গুরুতর অর্থনৈতিক অপরাধে জড়িত বলে সন্দেহ করা হচ্ছে।
বিবৃতিতে বলা হয়, “তারা পার্টির শৃঙ্খলা গুরুতরভাবে লঙ্ঘন করেছেন এবং অত্যন্ত গুরুতর প্রকৃতির ও বিপুল অর্থমূল্যের দায়িত্ব-সম্পর্কিত অপরাধে জড়িত বলে সন্দেহ করা হচ্ছে।”
তবে বিশ্লেষকদের অনেকেই বলছেন, এটি শুধু দুর্নীতি বিরোধী অভিযান নয়, বরং প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের রাজনৈতিক নিয়ন্ত্রণ আরও দৃঢ় করার এক প্রচেষ্টা।
এই অভিযানের ঘোষণা এসেছে পার্টির গুরুত্বপূর্ণ সভা ‘প্লেনাম’-এর ঠিক আগমুহূর্তে, যেখানে অর্থনৈতিক পরিকল্পনা ও কেন্দ্রীয় কমিটির নতুন সদস্যদের অনুমোদন দেওয়া হবে।
বহিষ্কৃতদের মধ্যে রয়েছেন:
হে ওয়েইদং, সেন্ট্রাল মিলিটারি কমিশনের ভাইস চেয়ারম্যান
মিয়াও হুয়া, সিএমসি’র রাজনৈতিক কার্যক্রম বিভাগের প্রধান
হে হংজুন, একই বিভাগের নির্বাহী উপপরিচালক
ওয়াং শিউবিন, সিএমসি’র জয়েন্ট অপারেশন কমান্ড সেন্টারের নির্বাহী উপপরিচালক
লিন শিয়াংইয়াং, ইস্টার্ন থিয়েটার কমান্ডার
কিন শুতোং, সেনাবাহিনীর রাজনৈতিক কমিশনার
ইউয়ান হুয়াঝি, নৌবাহিনীর রাজনৈতিক কমিশনার
ওয়াং হৌবিন, রকেট ফোর্সের কমান্ডার
ওয়াং চুননিং, আর্মড পুলিশ ফোর্সের কমান্ডার
এর মধ্যে হে ওয়েইদং ছিলেন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব। তিনি প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের পর সেনাবাহিনীর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পদে ছিলেন। মার্চের পর থেকে তিনি জনসম্মুখে অনুপস্থিত ছিলেন, যা তার বিরুদ্ধে তদন্তের জোরালো ইঙ্গিত দিচ্ছিল।
চীনা প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, জেনারেলদের বহিষ্কারের পদক্ষেপে “দল ও সেনাবাহিনীর দুর্নীতি বিরোধী লড়াইয়ে গুরুত্বপূর্ণ সাফল্য” এসেছে।
গত কয়েক বছরে চীন সেনাবাহিনীর মধ্যে বেশ কয়েকটি ছোট পরিসরের শুদ্ধি অভিযান চালিয়েছে। এর মধ্যে সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী ওয়েই ফেংহে এবং লি শাংফুও ছিলেন। এরপর এবার আরও বড় পরিসরে এই অভিযান চালানো হল।
তবে কেবল সামরিক নয়, বেসামরিক ক্ষেত্রেও চীন সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এমন নিখোঁজ বা বহিষ্কারের ঘটনার সাক্ষী হয়েছে।
২০২৩ সালে পররাষ্ট্রমন্ত্রী কিন গ্যাং রহস্যজনকভাবে অদৃশ্য হন, আর তার সম্ভাব্য উত্তরসূরি লিউ জিয়ানচাওকে-ও জুলাইয়ের পর থেকে প্রকাশ্যে দেখা যাচ্ছেন না।
এশিয়া সোসাইটি পলিসি ইনস্টিটিউট- এর বিশ্লেষক নিল থমাস বিবিসি চাইনিজকে বলেন, “শি জিনপিংয়ের কাছে এই অভিযান ক্ষমতার প্রদর্শন—এক ধরনের ‘আত্ম-পরিশুদ্ধি’।
এতে পার্টি আরও ‘বিশুদ্ধ, অনুগত ও দক্ষ’ হয়ে উঠবে, যা তাকে দীর্ঘমেয়াদে ক্ষমতায় রাখবে।”
তবে তিনি সতর্ক করে বলেন, “এতে প্রশাসন হয়ত আরও অনুগত হবে, কিন্তু সেই সঙ্গে আরও ভীতসন্ত্রস্ত ও অনমনীয় হয়ে পড়বে। সেটিই হবে শি-র ক্ষমতার মূল্য।”
২০ অক্টোবর শুরু হতে চলা চীনা কমিউনিস্ট পার্টির চতুর্থ প্লেনাম সভায় কারা উপস্থিত থাকবেন, সেটিই এখন বড় প্রশ্ন।
থমাসের ভাষায়, “যদি অংশগ্রহণকারীর সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে কমে যায় তাহলে সেটি হবে এখন পর্যন্ত এ শুদ্ধি অভিযান কতটা বিস্তৃত হয়েছে তার সবচেয়ে স্পষ্ট ও প্রকাশ্য সংকেত।”
