এ সার্চ রেজাল্টেই উত্তর পেয়ে যাচ্ছেন ব্যবহারকারীরা। ফলে সংবাদ ওয়েবসাইটে প্রবেশের প্রয়োজন কমে যাচ্ছে তাদের। এতে প্রকাশকদের টিকে থাকা হুমকির মুখে পড়ছে।
সংগৃহিত
গুগলের এআই ওভারভিউস ফিচার নিয়ে তদন্তের দাবি জানিয়েছেন ইতালির সংবাদ প্রকাশকরা। তাদের অভিযোগ, প্রকাশকদের ওয়েবসাইটে পাঠক সংখ্যা মারাত্মকভাবে কমিয়ে দিচ্ছে মার্কিন সার্চ জায়ান্টটির কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআইনির্ভর সারাংশ তৈরির এই সিস্টেম।
প্রকাশকরা বলছেন, গুগলের এ ফিচারটি আসলে এক ধরনের ‘ট্রাফিক কিলার’। কারণ এই সার্চ রেজাল্টের পাতাতেই উত্তর পেয়ে যাচ্ছেন ব্যবহারকারীরা। ফলে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের ওয়েবসাইটে প্রবেশের প্রয়োজন কমে যাচ্ছে তাদের। এতে প্রকাশকদের আর্থিকভাবে টিকে থাকা ও স্বাধীনভাবে সাংবাদিকতার বিষয়টি হুমকির মুখে পড়ছে।
ইতালির সংবাদপত্র প্রকাশকদের সংগঠন এফআইইজি বলেছে, আনুষ্ঠানিকভাবে ইতালির যোগাযোগ ও গণমাধ্যম নিয়ন্ত্রক সংস্থা ‘অ্যাগকম’-এর কাছে গুগলের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেছে তারা।
এফআইইজি’র মতে, গুগলের এআই ওভারভিউস ফিচারটি বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের জন্য অন্যায্য প্রতিযোগিতা ও আয়ে ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে। ফলে বিষয়টি নিয়ে সরকারি তদন্ত ও নিয়ন্ত্রক সংস্থার হস্তক্ষেপ প্রয়োজন।
এ ধরনের অভিযোগ ইউরোপীয় ইউনিয়নের আরও কয়েকটি দেশেও উঠেছে। গার্ডিয়ানের প্রতিবেদন বলছে, এই উদ্যোগে নেতৃত্ব দিচ্ছে ইউরোপীয় সংবাদপত্র প্রকাশকদের সংগঠন ‘ইউরোপীয়ান নিউজপেপার পাবলিশার্স অ্যাসোসিয়েশন’ বা এএনপিএ। সংগঠনটি ইউরোপীয় কমিশনকে আহ্বান জানিয়েছে, যেন তারা ‘ইইউ ডিজিটাল সার্ভিসেস অ্যাক্ট’-এর আওতায় গুগলের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক তদন্ত শুরু করে।
সংবাদ প্রকাশকদের দাবি, গুগলের এআই ওভারভিউস ফিচার সংবাদমাধ্যমের কনটেন্ট ব্যবহার করলেও তার বিনিময়ে কোনো পারিশ্রমিক দিচ্ছে না, যা সংবাদ শিল্পের টিকে থাকা ও প্রতিযোগিতার ন্যায্যতাকে হুমকির মুখে ফেলছে।
এফআইইজি’র যুক্তি, গুগলের এই সেবা ‘ইইউ ডিজিটাল সার্ভিসেস অ্যাক্ট-এর মৌলিক ধারাগুলো লঙ্ঘন করছে এবং এর ফলে ইতালির ব্যবহারকারী, ভোক্তা ও বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানেরর ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে’।
বিবৃতিতে এফআইইজি বলেছে, “গুগল এখন এক ধরনের ‘ট্রাফিক কিলার’ হয়ে উঠেছে’।”
সংগঠনটি আরও বলেছে, গুগলের এসব পণ্য কেবল সংবাদ প্রকাশকদের তৈরি কনটেন্টের সঙ্গে সরাসরি প্রতিযোগিতাই করছে না, বরং তাদের কনটেন্টের দৃশ্যমানতা ও সার্চ করার সক্ষমতাও কমিয়ে দিচ্ছে। ফলে প্রকাশকদের বিজ্ঞাপন থেকে আয়ও ব্যাপকহারে কমে যাচ্ছে।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, “এটি গণমাধ্যমের আর্থিক টিকে থাকা ও বৈচিত্র্যের ওপর গুরুতর প্রভাব ফেলছে। ফলে স্বচ্ছতার অভাব ও গণতান্ত্রিক আলোচনায় ভুয়া তথ্যের বিস্তার উভয়ের ঝুঁকিও বেড়ে যাচ্ছে।”
গত জুলাইয়ে প্রকাশিত যুক্তরাজ্যভিত্তিক অ্যানালিটিক্স প্রতিষ্ঠান ‘অথরিটাস’-এর এক গবেষণায় উঠে এসেছে, গত বছর চালু হওয়া গুগলের এআই ওভারভিউস ফিচারটি ওয়েবসাইটে ক্লিকের হার প্রায় ৮০ শতাংশ পর্যন্ত কমিয়ে দিয়েছে।
গুগলের এআই ওভারভিউস-এর প্রভাব সম্পর্কে যুক্তরাজ্যের প্রতিযোগিতা নিয়ন্ত্রক সংস্থার কাছে দায়ের করা এক অভিযোগের অংশ হিসেবে জমা দেওয়া এই গবেষণায় আরও উঠে এসেছে, গুগলের এ এআই ফিচারটি অনলাইন ট্রাফিকের প্রবাহেও নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে।
এদিকে, এসব গবেষণার ফলাফলকে অসঠিক ও ত্রুটিপূর্ণ পদ্ধতির ওপর ভিত্তি করে তৈরি বলে দাবি করেছে গুগল।
কোম্পানির মতে, এআই ওভারভিউসের প্রভাব নিয়ে করা এসব গবেষণা বাস্তব ব্যবহারকারীর আচরণ বা সার্চ ট্র্যাফিকের পূর্ণাঙ্গ চিত্র তুলে ধরে না। ফলে এগুলো থেকে কোনো নির্ভরযোগ্য সিদ্ধান্তে পৌঁছানো সম্ভব নয়।
