কেবল রিসাইক্লিং করলেই সমস্যার সমাধান হবে না, বরং পুরানো বিভিন্ন সৌর প্যানেলের জন্য দ্বিতীয় বাজার গড়ে তুলতে হবে।
সংগৃহিত
বর্তমানে পৃথিবীতে সৌর শক্তি ব্যবহারের পরিমাণ দ্রুত বাড়ছে। আর সেইসঙ্গে হাজার হাজার পুরানো সৌর প্যানেলের ‘আয়ু’ শেষ হয়ে গেলে কীভাবে সেগুলোকে যথাযথভাবে নিষ্কাশন বা পুনর্ব্যবহার করা যাবে তা এখন বড় সমস্যার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।
বর্তমানে অধিকাংশ সৌর প্যানেল ফেলে দেওয়া হচ্ছে ভাগাড়ে। তবে সম্প্রতি পুরানো বিভিন্ন সৌর প্যানেলকে নতুনভাবে ব্যবহারের উপায় খুঁজে বের করেছেন গবেষকরা।
‘ইউনিভার্সিটি অফ সাউথ অস্ট্রেলিয়া’র গবেষকরা বলছেন, সৌর প্যানেল ফেলে দেওয়ার চেয়ে ভালো এক উপায় রয়েছে, যেখানে পুরানো বিভিন্ন প্যানেল ব্যবহার উপযোগী হয়ে উঠবে, বর্জ্য কমাতে সাহায্য করবে এবং সৌর শক্তি আহরণে আরও নিশ্চয়তা দেবে।
অন্যান্য দেশের তুলনায় সবচেয়ে বেশি সৌর প্যানেল রয়েছে অস্ট্রেলিয়ায়। ফলে সেখানে লাখ লাখ বাড়িতে শক্তির উৎস সূর্যের আলো থেকে পাওয়া বিদ্যুত বলে প্রতিবেদনে লিখেছে বিজ্ঞানভিত্তিক সাইট নোরিজ।
এসব সৌর ফটোভোলটাইক বা পিভি সিস্টেম সাধারণত ২০ থেকে ৩০ বছর পর্যন্ত ভালভাবে কাজ করে। তবে নতুন ও উন্নত বিভিন্ন মডেল বাজারে আসার কারণে এসব প্যানেল অনেক সময় বদলে ফেলা হয়।
‘অস্ট্রেলিয়ান এনার্জি কাউন্সিল’-এর হিসাব অনুসারে, এ বছর শেষে অস্ট্রেলিয়ায় প্রায় দুই লাখ ৮০ হাজার টন পুরানো ও নিষ্ক্রিয় সৌর প্যানেল জমা হবে, যার অধিকাংশই সরাসরি যাবে ভাগাড়ে।
পুরানো বিভিন্ন সৌর প্যানেল নিরাপদ ও লাভজনক উপায়ে কীভাবে পুনরায় ব্যবহার করা যেতে পারে তা নিয়ে বিশ্লেষণ করা হয়েছে ‘ইনডিয়ানা ইউনিভার্সিটি’র পিএইচডি শিক্ষার্থী ইশিকা চিল্লার-এর নেতৃত্বে করা এক গবেষণায়।
গবেষণাটি প্রকাশ পেয়েছে বিজ্ঞানভিত্তিক জার্নাল ‘সাসটেইনেবিলিটি’-তে।
চিল্লার বলেছেন, কেবল রিসাইক্লিং করলেই সমস্যার সমাধান হবে না, বরং অস্ট্রেলিয়ায় পুরানো বিভিন্ন সৌর প্যানেলের জন্য দ্বিতীয় বাজার গড়ে তুলতে হবে, যেখানে পুরানো বিভিন্ন প্যানেল সারাই করা, মান যাচাই ও পুনর্ব্যবহারের জন্য বিক্রি হবে।
“বিভিন্ন সৌর প্যানেলের ব্যাপক পুনর্ব্যবহার প্রযুক্তিগত, আর্থিক ও নিয়ন্ত্রণমূলক বাধার মধ্যে পড়ে। তবে সঠিক নীতিমালা ও কাঠামো থাকলে এসব বাধা দূর করা সম্ভব, যা আসলে পরিবেশ ও সমাজের জন্যই উপকার বয়ে আনবে।”
সবচেয়ে বড় বাধাগুলোর একটি হচ্ছে আর্থিক সমস্যা। নতুন সৌর প্যানেলের দাম এতটাই কমে গিয়েছে যে, অনেকের কাছে পুরানো বা ব্যবহৃত প্যানেল কেনার বিষয়টি ততটা আকর্ষণীয় মনে হয় না।
একই সময়ে পুরানো প্যানেল পুনর্ব্যবহারের জন্য কোনো ক্রেডিট বা জাতীয় নির্দেশিকা নেই। প্রতিটি অঙ্গরাজ্য ও অঞ্চলেরই নিজস্ব নিয়ম রয়েছে। পাশাপাশি ইনস্টলাররাও সাধারণত ব্যবহৃত সিস্টেম নিয়ে কাজ করতে দ্বিধা বোধ করেন। কারণ তাদের আইনগত দায়বদ্ধতা থাকে।
চিল্লার বলেছেন, এর কার্যকর সমাধান হচ্ছে জাতীয় মান ও সার্টিফিকেশন প্রতিষ্ঠা করা। মানসম্মত এক পরীক্ষা প্রণালী নির্ধারণ করলে ব্যবহার করা প্যানেল কতটা কার্যকর ও নিরাপদ তা নিশ্চিত করা যাবে, যা ক্রেতাদের আস্থাও বাড়াবে।
“পুরানো বিভিন্ন সৌর প্যানেল কতটা ভালো অবস্থায় আছে সেটা বোঝানোর জন্য নির্ভরযোগ্য এক সার্টিফিকেশন সিস্টেম থাকা দরকার। সেখানে সোনা, রূপা, ব্রোঞ্জের মতো লেবেল থাকবে, যেগুলো দেখাবে প্যানেলটির বাকি কার্যসক্ষমতা আর কতদিন চলবে। এতে ক্রেতারা সচেতন ও সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন।”
‘ইউনিভার্সিটি অফ সাউথ অস্ট্রেলিয়া’র সহকারী অধ্যাপক ও এ গবেষণার সহলেখক সুধবির সান্ধু বলেছেন, এক্ষেত্রে ডিজিটাল ট্র্যাকিং সিস্টেমও বড় পরিবর্তন আনতে পারে।
প্রতিটি সৌর প্যানেলের যদি কিউআর কোড বা ব্লকচেইন প্রযুক্তি ব্যবহারের মতো ডিজিটাল রেকর্ড থাকে তবে ক্রেতা ও নিয়ন্ত্রকরা তাৎক্ষণিকভাবে যাচাই করতে পারবেন প্যানেলটি পুনরায় ব্যবহারের জন্য উপযোগী কি না।
সান্ধু বলেছেন, “এ ধরনের স্বচ্ছতা অনিশ্চয়তা কমাবে এবং অতিরিক্ত পরীক্ষার প্রয়োজনীয়তাও কমিয়ে দেবে।”
