গাজায় ত্রাণ প্রবেশ বাড়াতে এবং রাফা ক্রসিং খুলে দিতেও তাগাদা দিয়েছে তারা।
সংগৃহিত
ধ্বংসস্তূপে পরিণত হওয়া গাজা ভূখণ্ড থেকে উদ্ধার করা আরও এক জিম্মির মরদেহ হস্তান্তর করার কথা জানিয়েছে হামাস।
ফিলিস্তিনি এ স্বাধীনতাকামী গোষ্ঠীটি সীমান্ত ক্রসিংগুলো খুলে দিতে এবং গাজায় আরও ত্রাণ প্রবেশ নিশ্চিত করতে ইসরায়েলের ওপর চাপ সৃষ্টিতে মধ্যস্থতাকারী ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বানও জানিয়েছে।
শুক্রবার হামাসের সশস্ত্র শাখা কাসেম ব্রিগেডস এক বিবৃতিতে বলেছে, তাদের যোদ্ধারা রাত ১১টার দিকে এক জিম্মির দেহাবশেষ হস্তান্তর করেছে। মরদেহটি কোথা থেকে উদ্ধার করা হয়েছে সে বিষয়ে কিছু বলেনি তারা।
শুক্রবারই ওই মরদেহটি উদ্ধার হয়েছে এবং এটি ‘এক দখলদার বন্দির’, এমনটা বলেছে তারা। এতে ধারণা করা হচ্ছে, যে মরদেহটি হস্তান্তর করা হয়েছে, সেটি কোনো ইসরায়েলির, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের হাতে জিম্মি হওয়া অন্য কোনো দেশের নাগরিকের নয়, বলছে আল-জাজিরা।
হামাস ওই মরদেহটি রেড ক্রসের কাছে হস্তান্তর করে, পরে তাদের কাছ থেকে ইসরায়েল সেটি সংগ্রহ করেছে বলে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর কার্যালয় নিশ্চিত করেছে।
মরদেহবোঝাই কফিনটি এরপর ইসরায়েলি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন ন্যাশনাল সেন্টার ফর ফরেনসিক মেডিসিনে পাঠানো হবে, সেখানে মরদেহের পরিচয় শনাক্ত হওয়ার পর পরিবারের সদস্যদের খবর দেওয়া হবে।
ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী নাগরিকদের গুজবে কান না দিয়ে ‘সংবেদনশীল আচরণ করতে ও সরকারি ঘোষণার অপেক্ষায়’ থাকতে বলেছে।
“হামাসকে চুক্তিতে থাকা শর্তগুলো বাস্তবায়ন করতে হবে এবং সব মৃত জিম্মিকে ফিরিয়ে দিতে প্রয়োজনীয় সব পদক্ষেপ নিতে হবে,” বলেছে তারা।
হামাস বলছে, তারা যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় হওয়া যুদ্ধবিরতি চুক্তির সব শর্ত মানতে বদ্ধপরিকর। সে কারণে তারা সব মৃত জিম্মিকেও ফেরত দিতে চায়, কিন্তু গাজার ধ্বংসাবশেষের মধ্যে অনেকের দেহাবশেষ যে কোথায় তা বের করা যাচ্ছে না।
ইসরায়েলি হামলার কারণে সৃষ্ট জঞ্জালের নিচে আটকা জিম্মিদের মরদেহের খোঁজ বের করতে সবার সহযোগিতাও চেয়েছে তারা।
বিবিসি লিখেছে, হামাসের দেওয়া মরদেহটি যদি কোনো জিম্মির বলে নিশ্চিত হওয়া যায়, তারপরও আরও ১৮ জিম্মির মরদেহ ফেরত দেওয়া বাকি থাকবে।
শুক্রবারের আগে হামাস মোট ৯ জিম্মির মরদেহ রেড ক্রসের মাধ্যমে ইসরায়েলকে দিয়েছিল।
হামাস বলছে, জিম্মিদের দেহাবশেষ উদ্ধারে তাদের ভারি যন্ত্রপাতি ও দক্ষ উদ্ধারকারী দল দরকার, এজন্য তারা বহির্বিশ্বের সহায়তা চাইলেও ইসরায়েল তাতে সহায়তা করছে না। তারা নতুন করে কোনো বুলডোজারও গাজায় ঢুকতে দিচ্ছে না।
সাবেক ইসরায়েলি রাষ্ট্রদূত এলন লিয়েল বলেছেন, হামাস কেন দ্রুত সব জিম্মির মরদেহ ফেরত দিচ্ছে না তা নিয়ে ইসরায়েলিরা ‘বেশ ক্রুদ্ধ’।
আম্মান থেকে আল-জাজিরার প্রতিবেদক নুর ওদেহ জানিয়েছেন, মরদেহ খুঁজে পেতে হামাসকে সহায়তা করতে চাওয়া দেশগুলোকে সহযোগিতা করছে না ইসরায়েল।
“যেমন তুরস্ক, তারা মরদেহ উদ্ধারে ৮১ বিশেষজ্ঞ পাঠাতে প্রস্তুত, কিন্তু ইসরায়েল তাদেরকে গাজায় প্রবেশে অনুমতি দিচ্ছে না। যেসব সরঞ্জাম জিম্মিদের মৃতদেহের খোঁজ ও উদ্ধারে সহায়তা করতে পারবে সেগুলো ঢোকারও অনুমতি দিচ্ছে না তারা,” বলেছেন তিনি।
এদিকে শুক্রবার পর্যন্ত গাজার ধ্বংসস্তূপের নিচ থেকে ২৮০ ফিলিস্তিনির মরদেহ উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে বলে জানিয়েছে গাজার বেসামরিক প্রতিরক্ষা সংস্থা। ধ্বংসস্তূপের নিচে এখনও ১০ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনির মৃতদেহ আছে বলে ধারণা তাদের। পর্যাপ্ত ভারি যন্ত্রপাতি না থাকায় এ উদ্ধারকাজের গতিও বেশ শ্লথ।
হামাস চুক্তির মধ্যস্থতাকারীদের গাজায় জরুরি ত্রাণ প্রবাহ বাড়াতে ব্যবস্থা নেওয়ারও তাগাদা দিয়েছে। তারা মিশরের সঙ্গে থাকা রাফা সীমান্ত ক্রসিং দ্রুত খোলার ব্যবস্থা করতে এবং গাজা পুনর্গঠনের কাজ শুরু করতেও বলেছে।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের দেওয়া পরিকল্পনায় দিনকয়েক আগে গাজায় যুদ্ধবিরতি নিশ্চিতে হামাস ও ইসরায়েলের মধ্যে একটি চুক্তি হলেও ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডটিতে এখনও পর্যাপ্ত ত্রাণ ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না। তাছাড়া ইসরায়েল এখনও গাজার অর্ধেকের মতো অংশ নিয়ন্ত্রণে রেখেছে, কোথাও কোথাও ধারাবাহিক হামলাও চালিয়ে যাচ্ছে তারা।
