৬৫ বছর বয়সী ব্রিটিশ যুবরাজ আত্মহত্যাকারী মার্কিন বিনিয়োগকারী জেফরি এপস্টেইনের সঙ্গে সম্পর্ক নিয়ে বছরের পর বছর সমালোচনার মুখে আছেন।
সংগৃহিত
ব্রিটিশ প্রিন্স অ্যান্ড্রু তার রাজকীয় উপাধি ‘ডিউক অব ইয়র্ক’ ত্যাগ করার ঘোষণা দিয়েছেন।
শুক্রবার তার বিবৃতির বরাতে বাকিংহাম প্যালেস এ কথা জানিয়েছে।
বিবিসি ও রয়টার্স এ খবর দিয়ে লিখেছে, ৬৫ বছর বয়সী অ্যান্ডু তার আচরণ এবং আত্মহত্যাকারী মার্কিন বিনিয়োগকারী জেফরি এপস্টেইনের সঙ্গে সম্পর্ক নিয়ে বছরের পর বছর সমালোচনার মুখে রয়েছেন। সম্প্রতি বিষয়টি আবার সামনে আসার পর এ নিয়ে চাপ বাড়তে থাকার মধ্যে এ ঘোষণা এল।
বিবৃতিতে প্রয়াত রানী এলিজাবেথের দ্বিতীয় এই সন্তান বলেন, “আমার বিরুদ্ধে অব্যাহত অভিযোগগুলো আমার বড় ভাই রাজা চার্লস এবং ব্রিটিশ রাজপরিবারের বিস্তৃত কার্যক্রমে বাধা তৈরি করছে।
“এ কারণে, রাজকীয় উপাধি বা আমাকে দেওয়া সম্মানসূচক মর্যাদা আমি আর ব্যবহার করব না। আগের মত, এখনও আমার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগগুলো দৃঢ়ভাবে অস্বীকার করছি।”
বিবিসি ও ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যমগুলো এ খবর দিয়ে লিখেছে, ধারণা করা হচ্ছে আলোচিত যৌন অপরাধী জেফরি এপস্টেইনের সঙ্গে তার সম্পর্ক নিয়ে বাড়তে থাকা চাপ ও রাজপরিবারের ওপর পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বানের পর ব্রিটিশ যুবরাজের তরফে এমন সিদ্ধান্ত এল।
এর আগে এপস্টেইন কেলেঙ্কারি ব্রিটিশ রাজপরিবারের কর্মকাণ্ডে ব্যাঘাত ঘটাচ্ছে তুলে ধরে ২০১৯ সালে অ্যান্ড্রু রাজকীয় দায়িত্ব থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিয়েছিলেন।
সপ্তাহ তিনেক আগে আবারও কুখ্যাত যৌন অপরাধী জেফরি এপস্টেইন সংশ্লিষ্ট ঘটনায় নাম আসে ব্রিটিশ যুবরাজের। গত ২৬ সেপ্টেম্বর মার্কিন কংগ্রেসের ডেমোক্র্যাট সদস্যরা এ সংশ্লিষ্ট নতুন কিছু নথি প্রকাশ করে, যেখানে প্রিন্স অ্যান্ড্রুর নাম এসেছে। এতে নাম ধনকুবের ইলন মাস্কের নামও যুক্ত থাকার কথা বলা হয়।
যৌনপাচার সংশ্লিষ্ট অভিযোগের বিচারের অপেক্ষায় থাকা অবস্থায় ২০১৯ সালের অগাস্টে নিউ ইয়র্কের একটি কারাগারের কক্ষে আত্মহত্যা করেন মার্কিন বিনিয়োগকারী এপস্টেইন।
অপরদিকে চলতি বছর ২৬ এপ্রিল ব্রিটিশ প্রিন্স অ্যান্ড্রু ও এপস্টেইনের বিরুদ্ধে যৌন নিপীড়নের অভিযোগকারী ভার্জিনিয়া জিউফ্রে ৪১ বছর বয়সে আত্মহত্যা করেন।
জিউফ্রের আত্মহত্যার খবর দিয়ে বিবিসি সেদিন লিখেছিল, এপস্টেইন ও ব্রিটিশ অভিজাত নারী ঘিসলাইন ম্যাক্সওয়েলের বিরুদ্ধে অন্যতম কণ্ঠস্বর ছিলেন জিউফ্রে। তার অভিযোগ, ১৭ বছর বয়সে তাকে ডিউক অব ইয়র্কের হাতে তুলে দেয় এপস্টেইন ও ঘিসলাইন।
২০১৫ সালে এ অভিযোগ সামনে আনেন জিউফ্রে। তখন থেকেই এ নিয়ে সমালোচনার মুখে রয়েছেন যুবরাজ অ্যান্ড্রু।
ব্রিটিশ রাজপরিবারের এ সদস্য বারবারই জোরালোভাবে সবধরনের অভিযোগ অস্বীকার করে আসছেন। ২০২২ সালে জিউফ্রের সঙ্গে আদালতের বাইরে সমঝোতায়ও পৌঁছেছিলেন তিনি।
পুরনো এ অভিযোগকে ঘিরে চলতি মাসে আবার শুরু হওয়া সমালোচনার প্রেক্ষাপটে শুক্রবার ‘ডিউক অব ইয়র্ক’ উপাধি ছাড়ার ঘোষণা দিয়ে বিবৃতিতে অ্যান্ড্রু বলেন, “রাজা (চার্লস), আমার নিকটাত্মীয় ও বৃহত্তর পরিবারের সঙ্গে আলোচনার পর আমরা এই সিদ্ধান্ত নিয়েছি যে, আমার বিরুদ্ধে চলমান অভিযোগগুলো রাজা ও রাজপরিবারের কাজে বাধা তৈরি করছে।
“আমি আগেও সবসময় যেমন করেছি, এবারও আমার পরিবার ও দেশের প্রতি কর্তব্যকে অগ্রাধিকার দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
“পাঁচ বছর আগে আমি জনজীবন থেকে সরে দাঁড়ানোর যে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম, তাতে অটল আছি।”
বিবৃতিতে তিনি বলেন, “রাজার সম্মতির পর আমরা মনে করছি, এবার আমার আরও এক ধাপ পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া দরকার। তাই আমার উপাধি বা আমাকে দেওয়া কোনো সম্মানসূচক পদবি আমি আর ব্যবহার করব না।”
বিবিসি লিখেছে, প্রিন্স অ্যান্ডু রাজপুত্র হিসেবে পরিচিত থাকবেন। তবে তার মা প্রয়াত রানি এলিজাবেথের কাছ থেকে পাওয়া ‘ডিউক অব ইয়র্ক’ থাকবেন না। তিনি আগের রাজকীয় উপাধি হারানোর কারণে রাজকীয় অনুষ্ঠানেও অংশ নেন না। এখন তার ভূমিকা আরও কমে যাবে।
আর তার সাবেক স্ত্রী এখন শুধু সারা ফার্গুসন নামে পরিচিত হবেন। তিনি আর ‘ডাচেস অব ইয়র্ক’ থাকবেন না। তবে তাদের দুই মেয়ের রাজকুমারী (প্রিন্সেস) উপাধি বহাল থাকবে।
