“আমাদের কান্নাকাটি শিক্ষা উপদেষ্টার হৃদয়কে গলাতে পারেনি, একেবারেই মূল্যায়ন করেনি।”
হতে সংগৃহিত
মূল বেতনের ২০ শতাংশ বাড়ি ভাড়া ভাতার দাবি মেনে নিতে প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত সময় বেঁধে দিয়েছেন আন্দোলনরত এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীরা।
আন্দোলনের পঞ্চমদিন বৃহস্পতিবার প্রধান উপদেষ্টকে এই আলটিমেটাম দিলেন তারা।
এই সময়ের মধ্যে দাবি মেনে নেওয়া না হলে যমুনা অভিমুখে ‘পদযাত্রা’ কর্মসূচি পালনের কথা জানিয়েছেন আন্দোলনরত শিক্ষক সংগঠনগুলোর মোর্চা এমপিওভুক্ত শিক্ষা জাতীয়করণ প্রত্যাশী জোটের সদস্য সচিব অধ্যক্ষ দেলাওয়ার হোসেন আজিজী।
সচিবালয়ে শিক্ষা উপদেষ্টার সঙ্গে ‘বৈঠকের নামে প্রহসন’ হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন তিনি।
বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১২ টায় প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন ও রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনা অভিমুখে ‘পদযাত্রা’ কর্মসূচি ছিল তাদের, তবে শিক্ষক নেতারা সচিবালয়ে বৈঠকে করতে যাওয়ায় সেটি বিলম্বিত হয়।
সচিবালয়ে বৈঠক শেষে বেলা সোয়া ৩টার দিকে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ফিরে দেলাওয়ার হোসেন আজিজী বলেন, “আমরা সরকারকে ৫টা পর্যন্ত সময় বেঁধে দিতে চাই। আমরা চাই আমাদের অভিভাবক প্রধান উপদেষ্টা, যার কাছে আবেদন রেখেছি। তিনি যেন বিষয়টি সমাধান করেন। অন্যথায় আমরা যমুনা অভিমুখে কর্মসূচীটি পালন করতে বাধ্য হব।”
এ সময় তিনি ১৬ সদস্যের প্রতিনিধি দল নিয়ে সচিবালয়ে শিক্ষা উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকে বসার প্রেক্ষাপট বর্ননা করেন।
তার ভাষ্য, বুধবার তাকে মন্ত্রণালয় থেকে ফোন করে ৫ শতাংশ বাড়িভাড়ার প্রজ্ঞাপনের কথা বলা হয়।
তখন আজিজী এসব বলে সময়ক্ষেপণ ‘না করতে’ অনুরোধ করেন।
তিনি বলেন, “আমরা একটা অল্টারনেটিভ প্রস্তাব দিয়েছিলাম, কারণ আমরা সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে চাই না। আমরা কোন বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি চাইনি।
“আমরা বলেছিলাম ২০ শতাংশের প্রজ্ঞাপন হোক, এরমধ্যে ১০ শতাংশ এ বাজেটে দেওয়া হবে, আগামী বাজেট বাকিটা দেওয়া হবে। কিন্তু প্রজ্ঞাপনে এটার স্পষ্ট উল্লেখ থাকতে হবে। না হলে আলোচনা করে লাভ নাই।”
এরপর বৃহস্পতিবার সকালে মন্ত্রণালয় থেকে ফোন করে আবার ‘বৈঠকের অনুরোধ’ করা হয়, যেটিকে সরকারের ‘আন্তরিকতা’ ভেবে বৈঠকে যান তারা।
বৈঠকের বিষয়ে আজিজী বলেন, “শিক্ষা উপদেষ্টার সঙ্গে অনেক আলোচনা হল। আমরা তাদের প্রস্তাবনাকে পুনর্বিবেচনার অনুরোধ করেছি।
“আমরা উপদেষ্টার সামনে কান্নাকাটি করেছি, কিন্তু আমাদের কান্নাকাটি উনার হৃদয়কে গলাতে পারেনি। একেবারেই মূল্যায়ন করেনি।”
আজিজী আরও বলেন, “তিনি বার বার বলছেন হাজার হাজার ভিজিটর তার সাক্ষাতের জন্য বসে আছেন। কি মনে হয় আমার হাজার হাজার কুকুর বিড়াল এখানে বসে আছি? আলোচনার নামে আইওয়াশ হয়েছে, তিনি আমাদের কথাকে এক চুল পরিমাণ স্থান দেননি। আলোচনার নামে উপদেষ্টা মহোদয় আমাদের সাথে প্রহসন করেছেন।
“তিনি আমাদের অনুরোধ রাখেননি, আমাদের বসিয়ে রেখে আগেই উঠে চলে গেছেন। আমরা পরে সেখান থেকে চলে আসি।”
এ সময় তিনি সিদ্ধান্তের দায়িত্ব সব শিক্ষকদের উপর ‘ছেড়ে দিয়ে’ সবাইকে ‘৫ পার্সেন্ট মেনে নিবেন’ কি-না প্রশ্ন রাখেন। এ সময় শহীদ মিনারে উপস্থিত শিক্ষকরা সমস্বরে ‘না’ বলে চিৎকার করেন।
এরপর প্রধান উপদেষ্টাকে উদ্দেশ্য করে আজিজী বলেন, “মানীয় প্রধান উপদেষ্টা, প্রয়োজনে আমাদের ৬ লাখ শিক্ষককে চাকরি থেকে টার্মিনেট করে দেন। আমরা সিএনজি চালাব, অটো চালাব, কৃষি কাজ করব। কিন্তু আপনার এই ভিক্ষার চাকরি করব না।
‘টাকা কোথা থেকে আনবেন বলে লাভ নেই’ মন্তব্য করে আজিজী ‘অস্ত্র কিনতে বা গাড়ি কিনতে’ পারলে শিক্ষকদের ‘ডাল-ভাতের’ ব্যবস্থা করতে না পারা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন।
তিনি বলেন, “এ মাস থেকেই’ বেতনের ২০ শতাংশ বাড়ি ভাড়া ভাতা, এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের চিকিৎসাভাতা ৫০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১ হাজার ৫০০ টাকা করা এবং এমপিওভুক্ত কর্মচারীদের উৎসব ভাতা মূল বেতনের ৫০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৭৫ শতাংশ করার দাবি কার্যকর করতে হবে।”
প্রধান উপদেষ্টাকে উদ্দেশ্য করে তিনি আরও বলেন, “আপনার অথর্ব শিক্ষা উপদেষ্টা এর সমাধান করতে পারবে না। আজকের আলোচনার পরে, যদি মনে চায় সমাধান করেন।
“দাবানলের মতো আন্দোলন ছড়িয়ে পড়েছে। নয়তো আপনার বাহিনী পাঠিয়ে আমাদের সবাইকে ব্রাশফায়ার করে মেরে ফেলেন। হয়তো দাবি মানতে হবে, নয়তো ব্রাশফায়ার করে মেরে ফেলেন।”
বৃহস্পতিবার পূর্বনির্ধারিত যমুনা অভিমুখে ‘পদযাত্রা’ কর্মসূচি ঘিরে বেলা ১টার পর থেকেই কয়েক হাজার শিক্ষক-কর্মচারীরা কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে জড়ো হন। তারা খণ্ড খণ্ডভাবে একসঙ্গে স্লোগান দিয়ে যাচ্ছেন।
এর আগে বুধবার প্রায় ৩ ঘণ্টা অবরুদ্ধ করে রাখার পর শাহবাগ মোড় ছেড়ে বিকাল ৫টার পর ফের শহীদ মিনারে অবস্থান নেন এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীরা।
শাহবাগ অবরোধ থেকে বৃহস্পতিবার প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন ও রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনা অভিমুখে ‘পদযাত্রা’ কর্মসূচি দেওয়ার কথা বলেছিলেন দেলাওয়ার হোসেন আজিজী।
এমপিওভুক্ত শিক্ষা জাতীয়করণ প্রত্যাশী জোটের ব্যানারে রোববার থেকে আন্দোলন করে আসছেন শিক্ষক-কর্মচারীরা।
সেদিন সকালে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে লাগাতার অবস্থান কর্মসূচি শুরু হলেও দুপুরে পুলিশের অনুরোধে তারা কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে চলে যান।
শিক্ষক-কর্মচারীদের একটি অংশ প্রেস ক্লাবের সামনেই অবস্থান ধরে রাখার চেষ্টা করলে পুলিশ সাউন্ড গ্রেনেড ছুঁড়ে, জলকামানের পানি ছিটিয়ে এবং লাঠিপেটা করে তাদের সরিয়ে দেয়।
শিক্ষকদের ওপর ‘পুলিশের হামলার’ প্রতিবাদে সোমবার থেকে সব বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে লাগাতার কর্মবিরতি ঘোষণা করা হয়।
মঙ্গলবার বিকালে তারা পদযাত্রা নিয়ে শহীদ মিনার থেকে সচিবালয়ের দিকে যাওয়ার চেষ্টা করেছিলেন, তবে হাইকোর্টের মাজার ফটকের সামনে পুলিশ পদযাত্রা আটকে দেয়। রাত ৮টা পর্যন্ত সেখানে অবস্থানের পর সরে গিয়ে বাকি রাত শহীদ মিনারে অবস্থান করেন শিক্ষক-কর্মচারীরা।
বুধবার দুপুর ১২টার মধ্যে সরকার দাবি মেনে প্রজ্ঞাপন জারি না করলে এরপর ‘শাহবাগ ব্লকেড’ কর্মসূচির মাধ্যমে শাহবাগ মোড় অবরোধের ঘোষণা দিয়েছিলেন জোটের সদস্য সচিব অধ্যক্ষ দেলাওয়ার হোসেন আজিজী।
গত ৩০ সেপ্টেম্বর এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের বাড়িভাড়া ৫০০ টাকা বাড়িয়েছে সরকার; তবে গত ৫ অক্টোবর এই ঘোষণা প্রকাশ্যে এলে শিক্ষকরা তা প্রত্যাখ্যান করে আন্দোলনের ডাক দেন।
এরপর গত ৬ অক্টোবর এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের বাড়ি ভাড়া ভাতা অন্তত দুই হাজার বা তিন হাজার টাকা করার প্রস্তাব অর্থ বিভাগে পাঠায় শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীরা জাতীয় বেতন স্কেল অনুযায়ী বেতন পান। তারা মূল বেতনের সঙ্গে মাসে ৫০০ টাকা চিকিৎসা ভাতা পান। আর ১ হাজার টাকা বাড়িভাড়া ভাতা পেতেন, যা বাড়িয়ে ৫০০ টাকা করা হয়েছে।
এমপিওভুক্ত শিক্ষকরা আগে বছরে ২৫ শতাংশ হারে বছরে দুইটি উৎসব ভাতা পেলেও গত মে মাসে বাড়ানোর পর তারা ও এমপিওভুক্ত কর্মচারীরা মূল বেতনের ৫০ শাতাংশ হারে উৎসব ভাতা পাচ্ছেন।
