বিএনপি নির্বাচিত হলে এক কোটি মানুষের চাকরির ব্যবস্থা করবে বলে জানান দলটির মহাসচিব।
হতে সংগৃহিত
দেশটাকে বাঁচান, এখন আর বিভাজন সৃষ্টি করবেন না বলে সব রাজনৈতিক দলের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
তিনি বলেছেন, “দয়া করে দেশটাকে বাঁচান, এখন আর বিভাজন সৃষ্টি করবেন না। এখন আর ভিন্ন কোনো দাবি-দাওয়া তুলে গণভোট হতে হবে, না হলে হবে না বা পিআর হতে হবে না হলে ভোট হবে না!
“এসব বাদ দিয়ে নির্বাচনটা শেষ করেন। নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের একটা প্রতিনিধি আসুক, তারপর এসব বিষয়গুলো নিয়ে আরও তর্ক-বিতর্ক করা যাবে, আরও কথা বলা যাবে এবং কাজ করা যাবে।”
বুধবার দুপুরে ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার গড়েয়া ইউনিয়নে ‘সুধী সমাজ, হিন্দু ধর্মাবলম্বী ও মহিলা সমাবেশের’ মতবিনিময় সভায় এসব কথা বলেন তিনি।
মির্জা ফখরুল বলেন, “হিন্দু, মুসলিম, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান সবাই মিলে থাকাটাই হচ্ছে আমাদের বাংলাদেশ। একটা কথা আছে- ‘শত ফুল ফুটতে দাও একটা বাগানে, শত ফুলের সৌরভটা আমাদের মাঝেও ছড়িয়ে যাবে।’
“আমরা হিংসার রাজনীতি চাই না। আমরা হিন্দু, মুসলিম, বৌদ্ধ, খ্রিস্টানের মধ্যে কোনো বিভেদ সৃষ্টি করতে চাই না। আমরা কখনই হিংসার রাজনীতিকে প্রশ্রয় দিতে চাই না। আমরা চাই একটা শান্তির রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা হোক, এটাই আমাদের চাওয়া।”
বিএনপির মহাসচিব বলেন, “স্বাধীনতা আমাদের অস্তিত্ব, সেটাকে ভুলে যাওয়ার কোনো কারণ নাই। ঠিক তেমনি চব্বিশের ৫ অগাস্টকে আমরা ভুলব না, কারণ এদিন আমাদের ছেলেরা রক্ত দিয়ে স্বৈরাচারকে সরিয়ে দিয়েছে।
“সুতরাং সেটাকেও আমরা কোনোদিন ভুলতে পারব না। একসঙ্গে সকলকে নিয়ে চলা, এটাই হবে নতুন বাংলাদেশ।”
মির্জা ফখরুল বলেন, “অনেকেই অনেক কথা বলবে, এটাই তো গণতান্ত্রিক অধিকার; অনেকেই নির্বাচন করতে আসবে, কোনো অসুবিধা নাই; জনগণ যাকে খুশি তাকে ভোট দিবে। সুতরাং এগুলো কোনো সমস্যা না।
“সমস্যাটা হচ্ছে আমাদের মানসিকতার। মন-মানসিকতা আমাদের ঠিক রাখতে হবে, এটা যদি ঠিক রাখতে পারি তাহলে নিশ্চয়ই সবাই মিলে আগে যেভাবে বসবাস করতাম ঠিক সেভাবেই বসবাস করতে পারব।”
পিআর প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল বলেন, “পিআর হচ্ছে মানুষকে মানে প্রার্থীকে ভোট দেওয়ার দরকার নাই, দলটাকে ভোট দিতে হবে। এখন কথা হলো- আমি তো জানি আমার প্রার্থী কে, আমার এমপি কে? এখন আমার প্রার্থীকে যদি ভোট দিতে না পারি তাহলে আমি যাব কার কাছে? এই জিনিসগুলো মাথার মধ্যে নিতে হবে।”
সভায় উপস্থিত জনতার উদ্দেশে তিনি বলেন, “আচ্ছা আপনারা পিআরটা বোঝেন? আপনারা এখানে শিক্ষিত মা-বোনেরা আছেন? পিআর কেউ বোঝে না, তাহলে সেটা কেমন করে হবে। ভোটটা পিআরকে দিব, না আলমগীর সাহেবকে দিব না দেলোয়ার সাহেবকে দিব?”
যারা পিআর চাচ্ছে তাদের প্রতি অনুরোধ জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, “দয়া করে নির্বাচনটা তাড়াতাড়ি করতে দেন। এই মানুষগুলো বাঁচুক। এই অস্থিরতার মধ্যে মানুষগুলো আছে সেই অস্থিরতা কাটুক।”
বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে সব রাজনৈতিক দল ও সংগঠনের প্রতি অনুরোধ জানিয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, “সমস্ত দাবি দাওয়া এখন বন্ধ রেখে, আর কিছু প্রতিষ্ঠান আছে তারাও দাবি-দাওয়া তুলছে; এসব আন্দোলনের উদ্দেশ্য ভালো না। নির্বাচনকে পণ্ড করতে চায়। আমরা তো ভোট দিতে চাই, জনগণও ভোট চায়।”
তিনি বলেন, “আমরা একজন মানুষ একটা ভোট, যাকে খুশি তাকে দিব। এই ব্যবস্থাটা এবার পরিবর্তন হচ্ছে- এবার দুটি পার্লামেন্ট থাকবে, একটা নিম্ন কক্ষ আরেকটা উচ্চ কক্ষ। নিম্নকক্ষে আমরা যারা যাব, সবাই নির্বাচিত হয়ে যাব। আর যে দলগুলো পার্লামেন্টে যাবে- তাদের প্রতিনিধির সংখ্যা থাকবে, সেই সংখ্যা অনুযায়ী উচ্চ কক্ষে যাবে।
“এরপরও বিভিন্ন সেক্টরের কিছু মানুষ যেমন- হিন্দু সম্প্রদায়ের কিছু মানুষ, আলেম সম্প্রদায়ের কিছু মানুষ, আর পণ্ডিত মানুষ যারা আছেন, তাদের কিছু সংখ্যক মানুষকে মনোনয়ন দেওয়া হবে আসার জন্য। এভাবেই এমন একটা পার্লামেন্টে তৈরি করা হবে, যেখানে সত্যিকার অর্থে জনগণের প্রতিনিধি থাকবে, এখানে কোনো দলের একক কর্তৃত্ব থাকবে না।”
মির্জা ফখরুল বলেন, “আমরা যদি নির্বাচিত হতে পারি, প্রথম কাজ হবে- এই যে এত বেকার, আমাদের ছেলেরা পাশ করে চাকরি পায় না! এই চাকরির নিশ্চয়তা করার জন্য আমরা এক কোটি মানুষের চাকরির ব্যবস্থা করব, কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করব।”
সভায় ঠাকুরগাঁও জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক পয়গাম আলী, পৌর বিএনপির সভাপতি শরিফুল ইসলাম শরিফ এবং গড়েয়া ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি রেদো শাহ চৌধুরী উপস্থিত ছিলেন।