গণভোট কবে, সনদ বাস্তবায়ন কীভাবে-এ বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মতভিন্নতা রয়ে গেছে।
হতে সংগৃহিত
মতভিন্নতা মিটিয়ে জুলাই জাতীয় সনদ স্বাক্ষর নিয়ে অনিশ্চয়তা কাটাতে রাজনৈতিক দল ও জোটের নেতাদের নিয়ে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের জরুরি বৈঠকেও ‘সংকট’ কাটেনি।
রাষ্ট্র সংস্কারের সিদ্ধান্ত ও বাস্তবায়নের অঙ্গীকারনামা সম্বলিত জাতীয় সনদ কীভাবে বাস্তবায়ন হবে, জাতীয় নির্বাচনের আগে গণভোট হবে কি হবে না, সংস্কার বিষয়ে যেসব ভিন্নমত সনদে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে গণভোটে সে বিষয়গুলোর সুরাহা কীভাবে হবে- এসব নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে মতভিন্নতা রয়ে গেছে।
বুধবার সন্ধ্যায় জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সভাপতি প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের ডাকা জরুরি বৈঠকে দলগুলো যে অবস্থান তুলে ধরেছে তাতে তাদের মধ্যে মতভিন্নতা দূর হওয়ার কোনো ইঙ্গিত মেলেনি।
রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে বৈঠক থেকে বের হয়ে নতুন করে ‘সংকটের’ কথা বলেছেন রাজনৈতিক দলের নেতারা।
জুলাই সনদ স্বাক্ষরে ‘শর্ত’ দিয়েছে জামায়াতে ইসলামী ও এনসিপি। জাতীয় নির্বাচনের আগে গণভোট চায় জামায়াত, আর বিএনপি একদিনে একসঙ্গে দুই নির্বাচন হতে বাধা দেখছে না।
এনসিপি ও বাম ধারার চারটি দল সংস্কার নিয়ে জাতীয় সনদে অন্তর্ভুক্ত হওয়া ভিন্নমতের সুরাহা কীভাবে হবে তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। এছাড়া সনদ বাস্তবায়নে আদেশের বিষয়টি সামনে এনেছে এনসিপি।
বাম ধারার চার দল বলেছে, তারা স্বাক্ষর করবে না।
এমন অবস্থায় ঐকমত্য কমিশনের তরফে জুলাই সনদ স্বাক্ষরের বিষয়ে আশাবাদ ব্যক্ত করা হয়েছে।
শুক্রবার জাতীয় সংসদের দক্ষিণ প্লাজায় এ দলিল স্বাক্ষরের প্রস্তুতি নিচ্ছে অন্তর্বর্তী সরকার। তার আগে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় কমিশনের তরফে ৩২টি রাজনৈতিক দল ও একটি জোটের কাছে চূড়ান্ত জুলাই জুলাই সনদ পাঠানো হয়।
কিন্তু দুই দিন আগে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে হঠাৎ জরুরি বৈঠক ডাকেন ঐকমত্য কমিশনের প্রধান। তার আগে দুপুরে তিনি ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে বৈঠক করেন।
রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে জরুরি বৈঠকটি সন্ধা সাড়ে ৬টায় শুরু হয়ে প্রায় সোয়া এক ঘণ্টা চলে, যা রাষ্ট্রীয় সম্প্রচার মাধ্যম বিটিভিতে সরাসরি সম্প্রচার করা হয়।
বৈঠকে কমিশনের সহসভাপতি আলী রীয়াজ, সদস্য বিচারপতি মো. এমদাদুল হক, সফর রাজ হোসেন, ইফতেখারুজ্জামান, বদিউল আলম মজুমদার, মো. আইয়ুব মিয়া ও প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দার উপস্থিত ছিলেন।
গত বছরের ৫ অগাস্ট গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার রাষ্ট্র সংস্কারের উদ্যোগ নেয়, যার ধারাবাহিকতায় অক্টোবরে প্রথম ধাপে ছয়টি সংস্কার কমিশন গঠন করা হয়।
ফেব্রুয়ারিতে কমিশনগুলোর রিপোর্ট জমা পড়ার পর সংবিধান, নির্বাচন ব্যবস্থা, বিচার বিভাগ, জনপ্রশাসন, দুর্নীতি দমন কমিশন সংস্কার কমিশনের গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশগুলোর বিষয়ে ঐকমত্যে পৌঁছতে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ শুরু হয়।
সংস্কার উদ্যোগের এ দীর্ঘ যাত্রায় এসব দল ও জোটের পূর্ণ ঐকমত্যের ভিত্তিতে রাষ্ট্রীয় সংস্কারের ১৭টি বিষয়ে ৮৪ দফার জুলাই জাতীয় সনদ চূড়ান্ত করেছে ঐকমত্য কমিশন। বাকি ৬৭টি বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর কেউ কেউ বিরোধিতা করেছে; দিয়েছে ভিন্নমত বা নোট অব ডিসেন্ট।
জাতীয় সনদে রাষ্ট্রীয় সংস্কারের যে ৮৪ দফা, তার মধ্যে ৪৭টি বিষয়কে ‘সংবিধান সংশোধন সাপেক্ষে সংস্কার’ এবং বাকি ৩৭টি বিষয়কে ‘আইন/অধ্যাদেশ, বিধি ও নির্বাহী আদেশের মাধ্যমে সংস্কার’ হিসেবে চিহ্নিত করেছে ঐকমত্য কমিশন।
জুলাই সনদের পটভূমি ব্যাখ্যা করে সংস্কারযজ্ঞ নিয়ে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের কার্যক্রম তুলে ধরার পর সংস্কারের ৮৪ দফা তুলে ধরা হয়েছে ৪০ পৃষ্ঠার সনদে। এর মধ্যে রাজনৈতিক দলগুলোর কী অঙ্গীকার করছে, তা উল্লেখ করার পর রাখা হয়েছে স্বাক্ষরের জায়গা।
জুলাই সনদ স্বাক্ষরের পর আগামী ফেব্রুয়ারিতে রোজার আগে ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনের আয়োজনের প্রস্তুতি এগিয়ে নিচ্ছে সরকার।
এর মধ্যে হঠাৎ রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে জরুরি বৈঠক করলেন ঐকমত্য কমিশনের প্রধান, যেখানে জুলাই সনদ নিয়ে সংকটের বিষয়টি সামনে এল।
রাজনৈতিক দলের নেতাদের মধ্যে বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহ উদ্দিন আহমেদ, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও সাবেক সচিব ইসমাইল জবিউল্লাহ, জামায়াতের কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের সদস্য মতিউর রহমান আকন্দ, জাতীয় নাগরিক পার্টির সদস্য সচিব আখতার হোসেন, সিপিবি সভাপতি সাজ্জাদ জহির চন্দন ও সাধারণ সম্পাদক আব্দুল্লাহীল কাফি রতন, গণ ফোরামের সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান, বাসদের সাধারণ সম্পাদক বজলুর রশিদ ফিরোজ, বাসদ মার্কসবাদীর সমন্বয়ক মাসুদ রানা, ১২ দলীয় জোটের শরিক বাংলাদেশ এলডিপির মহাসচিব শাহাদাত হোসেন সেলিম, এবি পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জুসহ ৩১টি দল ও জোটের নেতারা।
‘সনদের সাথে নির্বাচনের কোনো সম্পর্ক নেই’
ঐকমত্যের বৈঠকে থেকে বেরিয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ জুলাই জাতীয় সনদের সাথে নির্বাচন অনুষ্ঠানের কোনো সম্পর্ক নেই বলে দাবি করেছেন।
তিনি সাংবাদিকদের বলেন, “আগামী ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত করা এবং ভোট যাতে সুষ্ঠু নিরপেক্ষ ও বিশ্বের মধ্যে স্বীকৃত হয় সেরকম একটা ‘ট্যাডিশনাল ইলেকশন’ করা লক্ষ্য আমাদের।
“সেটা করার লক্ষ্যে আমরা জুলাই সনদ যেটা প্রণয়ন করছি, তার সাথে নির্বাচনের সম্পর্ক কী? আমি মনে করি, জুলাই জাতীয় সনদের সাথে নির্বাচন অনুষ্ঠানের কোনো সম্পর্ক নাই।”
বিএনপির এই নেতা বলেন, “সংস্কার সারা জাতি চায়, আমরাও চাই। যেই দলই ক্ষমতায় আসুক বা জাতীয় সংসদে যারাই সংখ্যা গরিষ্ঠতা পাক, তাদেরকে এটা বাস্তবায়ন করতেই হবে। গণভোটের কথা আমরা বলেছি।”
তিনি বলেন, “আমরা জুলাই সনদ সবাই স্বাক্ষর করব, যে সমস্ত বিষয়ে ভিন্নমত আছে, নোট অব ডিসেন্ট আছে, এগুলো একদম পরিষ্কারভাবে দফাওয়ারি উল্লেখ থাকবে, কি কি বিষয়ে, কীভাবে। ‘নোট অব ডিসেন্ট’ আছে? কারণ ‘নোট অব ডিসেন্ট’ দেওয়ার এখতিয়ারের জন্যই তো আমরা ঐক্যমত কমিশনে আলাপ আলোচনা করেছি। যদি তা না হত, তাহলে ঐকমত্য কমিশন যদি আমাদেরকে প্রস্তাব দিত, সেই সকল প্রস্তাবে যদি সবাই একমত হয়ে যেত, তাহলে তো আলোচনার কোনো প্রয়োজন ছিল না।
“গণভোটের মধ্য দিয়ে একই দিনে জাতীয় সংসদ নির্বাচন, সেই সম্মতিটা নেওয়া যায়। যার মধ্য দিয়ে জুলাই জাতীয় সনদের সমস্ত প্রস্তাব, যেগুলো ঐকমত্যের ভিত্তিতে গৃহীত হয়েছে; ‘নোট অব ডিসেন্ট’সহ, সেটা বাস্তবায়ন হবে।”
সালাহউদ্দিন বলেন, “যারা নোট অব ডিসেন্ট দিয়েছে, সেটা নির্বাচনি ইশতেহারে উল্লেখ করে, যদি জনগণের ম্যান্ডেটপ্রাপ্ত হয়, তাহলে তারা সেভাবে বাস্তবায়ন করতে পারবে। এখন একই রকম কথা সমস্ত ‘নোট অব ডিসেন্ট’ দেওয়া দফাগুলোতে উল্লেখ থাকবে। সেটা আরো শক্ত হলো। এখন হলো কোনো কোনো বাহানায় কেউ কেউ স্বাক্ষর করতে হয়তো চায়নি, সে সুযোগ আর থাকলো না বা আমরা দিলাম না।”
জামায়াত নেতা সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের। ফাইল ছবি
নির্বাচনের আগে গণভোটের ‘শর্ত’ জামায়েতের
জামায়াতের নায়েবে আমির সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের সাংবাদিকদের বলেন, “এখন, গণভোট কখন হবে, এই নিয়ে আবার কিছুটা আমাদের ভেতরে মতপাথক্য আছে।
“আমরা বলেছি, গণভোট হচ্ছে সংস্কার কমিশনের জন্য। এটা একটা আলাদা বিষয়। আর জাতীয় নির্বাচন একটি আলাদা বিষয়। গণভোটে এমন কিছু দিক আছে, যেগুলা যদি হ্যাঁ/না ভোটে হয় তাহলে তার ভিত্তিতে নির্বাচনের আচরণবিধিতে কিছু পরিবর্তন হবে। যেমন: উচ্চকক্ষ ও ‘পিআর পদ্ধতিতে, এমপিদের ভোটে নয়, জনগণের ভোটে’। এই ব্যাপারেই কমিশনের আমরা সকলেই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছি। আমরা একমত হয়েছি।”
সে কারণে নির্বাচনের আগেই এই সিদ্ধান্ত জনগণের কাছে পৌঁছতে হবে এবং সেই সিদ্ধান্তের আলোকে জাতীয় নির্বাচনে উচ্চকক্ষে ভোট হবে, এই দাবি তুলে ধরেন তাহের।
তিনি বলেন, “যদি এটা (গণভোট) নির্বাচনের দিনেই হয়, কেউ কেউ চাচ্ছে নির্বাচন দিন একসাথে, তাইলে উচ্চকক্ষ তো নির্বাচনের দিন পর্যন্ত আর পাস হইলো না। হ্যাঁ/না এর জন্য অপেক্ষা হয়ে গেল। হ্যাঁ/না যদি আমরা বলি যে হ্যাঁ হয়েছে, তাইলে কী একটা আবার নির্বাচন হবে? উচ্চকক্ষের জন্য এটা একটা ‘উদ্ভট টাইপের’ আলোচনা।”
তিনি বলেন, “গণভোট আগে হতে হবে, নভেম্বরে আমরা প্রস্তাব করেছি। দুইটা গণভোটের নজির আছে, নভেম্বরে গণভোট হলে জাতীয় নির্বাচন ফেব্রুয়ারিতে, এটা আমরা চাই এবং আড়াই মাস তখন সময় থাকবে, দুটি একসাথে প্রস্তুতি চলবে, এটা সম্ভব। সুতরাং এটা আমাদের দাবি।”
শুক্রবার জুলাই সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে যাবেন কি না, এমন প্রশ্নে তাহের বলেন, “মাত্র একদিন বাকি আছে, ওইদিন গেলেই ইনশাল্লাহ দেখে ফেলবেন।
দলটির কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের সদস্য মতিউর রহমান আকন্দ সনদ স্বাক্ষরের পর নভেম্বরে গণভোট আয়োজনের দাবি জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, “আজ বলব-জুলাই সনদ তৈরির ক্ষেত্রে যেসব পয়েন্টে আমরা একমত হয়েছি সেগুলো নিয়ে সনদে স্বাক্ষর করতে যাচ্ছি। এ সনদ স্বাক্ষরের পর আইনি ভিত্তি দেওয়ার জন্য যে গণভোটের কথা বলা হয়েছে, আমার দলের স্পষ্ট বক্তব্য ইসিকে পেশ করা হয়েছে।”
‘জুলাই সনদ নিয়ে ধোঁয়াশা রয়ে গেছে’
বৈঠক থেকে বের হয়ে জাতীয় নাগরিক পার্টি-এনসিপির সদস্য সচিব আখতার হোসেন জুলাই সনদে স্বাক্ষর করা নিয়ে কমিশনকে কিছু শর্ত দেওয়ার কথা তুলে ধরেছেন।
সেইসব শর্ত এক দিনেই পূরণ করা সম্ভব মন্তব্য করেন তিনি।
এনসিপি সদস্য সচিব মনে করেন, জাতির কাছে ‘সব কিছু স্পষ্ট করে’ জুলাই সনদ স্বাক্ষরের দিকে অগ্রসর হলে এর বাস্তবায়ন এবং ‘জাতির প্রত্যাশা পূরণ’ সম্ভব হবে।
তিনি বলেন, “আমরা চাই জুলাই সনদ বাস্তবায়নের পথটাকে পরিষ্কার করে তারপরে আমরা সনদ স্বাক্ষর করার দিকে অগ্রসর হব।”
এনসিপির অবস্থান তুলে ধরে আখতার হোসেন বলেন, “আমরা অনেক রক্ত ও জীবনের বিনিময়ে আজকের এই দিনে সবাই এখানে উপনীত হতে পেরেছি। দেশে যাতে কখনও ফ্যাসিবাদ ফিরে না আসে এবং গণতান্ত্রিক পথে অগ্রসর হতে সব বিষয় বিবেচনায় নিয়ে অভূতপূর্ব পদ্ধতিতে দীর্ঘ সময় ধরে আলোচনার মধ্য দিয়ে জুলাই সনদ প্রণয়নের দিকে অগ্রসর হয়েছি।
“কিন্তু শেষ মুহূর্তের কিছু বিষয় আমাদের মধ্যে শঙ্কার জায়গা তৈরি করেছে। আসলে জাতিকে অস্পষ্ট রেখে কোনো উদ্যোগকে সফল করা সম্ভব নয়। সনদের যে খসড়া পেয়েছি, সেখানে নোট অব ডিসেন্ট বিষয়গুলো স্পষ্ট করা হয়নি, সংজ্ঞায়িত করা প্রয়োজন।”
কীভাবে সেগুলোকে বাস্তবায়ন করা হবে সে ‘পথরেখা স্পষ্ট হওয়া প্রয়োজন’ বলে তিনি মন্তব্য করেন।
এনসিপির সদস্য সচিব বলেন, “আমরা যে অঙ্গীকারনামা পেয়েছি, সনদ বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া নিয়ে আলোচনা করেছি একমাস ধরে, তা সেখানে সুস্পষ্টভাবে উপনীত হয়নি। আমরা একটা আদেশের মধ্য দিয়ে বাস্তবায়নের কথা বলেছি।”
প্রধান উপদেষ্টা সরকার প্রধান হিসেবে ওই আদেশ জারি করবেন বলে আশা করছে এনসিপি।
আখতার বলেন, “সাংবিধানিক আদেশ নামকরণ হলে অনেকের আপত্তি ছিল। এনসিপির তরফ থেকে জুলাই সনদ বাস্তবায়ন আদেশ বা সাংবিধানিক সংস্কার আদেশ যে কোনো নামেই হোক, বাস্তবায়নের কথা বলেছি। আমরা মনে করি, এ আদেশ প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস সরকার প্রধান হিসেবে জারি করবেন। সরকার প্রধান আদেশ জারি ও বাস্তবায়ন করবেন এ আশাবাদ ব্যক্ত করেছি।”
গণভোটের মাধ্যমে সনদ বাস্তবায়নে ঐকমত্য হওয়ার কথা মনে করিয়ে দিয়ে এনসিপি নেতা বলেন, “সে গণভোটের প্রশ্ন কী হবে সেটা আমাদের কাছে এখনও স্পষ্ট নয়। গণভোটের বিষয়ে যে প্রশ্ন, দিনক্ষণ, সেগুলো আমাদের কাছে, জাতির কাছে পরিষ্কার হওয়া প্রয়োজন।”
‘সনদে স্বাক্ষর করবো না’
বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি-সিপিবি, গণ ফোরাম, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল-বাসদ, বাসদ মার্কসাবাদী-এ চার দলের নেতারা বৈঠক থেকে বেরিয়ে বলেছেন, তারা জুলাই সনদে স্বাক্ষর করবেন না।
দলগুলোর মুখপাত্র হিসেবে বাসদের সাধারণ সম্পাদক বজলুর রশিদ ফিরোজ বলেন, “রাষ্ট্রীয় চার মূলনীতি বাদ দেওয়া, মুক্তিযুদ্ধ ও জুলাই গণঅভ্যুত্থানকে মুখোমুখি দাঁড় করানোর অপপ্রয়াস, নোট অব ডিসেন্ট নিয়ে নানা সমস্যা।
“সব মিলিয়ে আমরা চার দল- সিপিবি, গণফোরাম, বাসদ ও বাসদ মার্কসবাদী এই জুলাই জাতীয় সনদে স্বাক্ষর করবো না। এ বিষয়ে আরও বিস্তারিত তুলে ধরতে আমরা এই চার দলের পক্ষ থেকে বৃহস্পতিবার বিকালে সংবাদ সম্মেলনে করে জানাব।”
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের বৈঠকে কমিশনের সভাপতি মুহাম্মদ ইউনূস ও সহসভাপতি আলী রীয়াজ। ছবি: পিআইডি
‘উৎসবের’ আশাবাদ প্রধান উপদেষ্টার
জাতীয় সনদ নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে মতভিন্নতা থাকলেও সনদে স্বাক্ষর করা নিয়ে আশাবাদী প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস।
তিনি বলেছেন, শুক্রবার উৎসবমুখর পরিবেশে জুলাই সনদ স্বাক্ষর করবে দলগুলো।
জুলাই অভ্যুত্থানের প্রেক্ষাপটে সই হতে যাওয়া জাতীয় এই সনদে স্বাক্ষরের কলমসহ ইতিহাস জাদুঘরে সংরক্ষণ করার কথাও বলেন মুহাম্মদ ইউনূস।
একই সঙ্গে ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় নির্বাচনের প্রত্যয় পুনর্ব্যক্ত করেন তিনি।
সবার বক্তব্যের শেষে বৈঠকে সভাপতির বক্তব্যে প্রধান উপদেষ্টা কয়েকবারই উপস্থিত রাজনীতিবিদদের ধন্যবাদ দেন ও অভিনন্দন জানান। এটা (জুলাই সনদ) বাংলাদেশ ও সমসাময়িক রাজনীতির ইতিহাসে স্মরণীয় একটি ঘটনা বলে মন্তব্য করেন তিনি।
বৈঠকের স্বাগত বক্তব্যে ‘আনন্দঘন পরিবেশে’ জাতীয় সনদে স্বাক্ষরের আশার কথা শুনিয়েছেন ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি আলী রীয়াজ।
জুলাই জাতীয় সনদ স্বাক্ষর নিয়ে সংকটের যে তথ্য সংবাদমাধ্যমে এসেছে তাকে ‘বিভ্রান্তি’ আখ্যা দেন তিনি।
আলী রীয়াজের ভাষ্য, “আজ কিছু বিভ্রান্তি বিভিন্ন দিক থেকে প্রচারিত হয়েছে। আমাকে অনেক রাজনৈতিক নেতারা এবং সাংবাদিকরা ফোন দিয়েছেন। আমি জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের পক্ষে সুস্পষ্টভাবে বলতে চাই, আমাদের দিক থেকে প্রস্তুতি সম্পূর্ণ হচ্ছে।
“পাশাপাশি আপনাদের দিক থেকে যে সহযোগিতা অব্যাহত আছে তাতে আমরা আশাবাদী যে একটি আনন্দঘন পরিবেশের মধ্য দিয়ে আমরা এ স্বাক্ষর অনুষ্ঠানটা সম্পূর্ণ করব।”